কাইয়ুম আল রনি: বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের সভাপতির পদটা বহু দিন ধরেই নিজের দখলে রেখেছেন কাজী সালাউদ্দিন। একই সঙ্গে তিনি সাফের সভাপতি। তার একটাই সখ ছিলো এ দু’টি পদে থাকা অবস্থায় তিনি নিজ হাতে দেশের ফুটবলারদের হাতে যেনো একটি ট্রফি তুলে দিতে পারেন।
সালাউদ্দিনের ফুটবলাররা ট্রফি দেওয়ার ব্যবস্থা করা তো দূরের কথা দেশের ফুটবল ‘জাদুঘরে’ পাঠিয়েছেন। আগামি তিন বছরের জন্য আন্তর্জাতিক ফুটবলে ‘নির্বাসিত’ দেশের ফুটবল, এসবতো পুরনো খবরই।
তবে তার সখটা কিছুটা হলেও পূরণ করেছিলো এ দেশের কিশোর ফুটবলাররা। গত বছর সিলেটে অনুষ্ঠিত সাফ অনুর্ধ্ব-১৬ ফুটবলে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিলো বাংলাদেশের অনুর্ধ্ব-১৬ দল। দেশের ফুটবল ইতিহাসে অনেক আশা আর স্বপ্ন দেখিয়ে প্রথম বারের মত কোন ট্রফি জিতে ছিলো শাওন, ফয়সলদের বাংলাদেশ।
সেই টুর্ণামেন্টের ফাইনালে চ্যাম্পিয়ন জয়ের নায়ক হয়ে ছিলেন সিলেটের সুনামগঞ্জের প্রতিভাবান ফুটবলার গোলরক্ষক ফয়সল আহমদ। টাইব্রেকারে ভারতীয় খেলোয়াড়দের শেষ শট আটকে দিয়ে আনন্দের সাগরে ভাসিয়ে ছিলেন দেশের ফুটবলকে। প্রথমবার এনে দিয়ে ছিলেন দেশের ফুটবলকে কিশোর ফুটবলারদের কোন ট্রফি।
সাফ অনুর্ধ্ব-১৬ টুর্ণামেন্টে বাংলাদেশের কাছে ফাইনালসহ গ্রুপ পর্বে হেরে যাওয়া সেই ভারতীয় দলের ৫ জন খেলোয়াড় অনুর্ধ্ব-১৭ বিশ্বকাপ খেলছে। আর সেই ভারতীয় দলকে হারিয়ে দেওয়া বাংলাদেশ দলের গোলরক্ষক ফয়সল রাগে-অভিমানে ফুটবল ছেড়ে চাকরি নিলো পুলিশে।
সাফ চ্যাম্পিয়ন হয়ে দেশবাসীকে আনন্দ এনে দিলেও ফয়সলের জীবনটা দুঃখেই মোড়ানো থাকলো। অন্ধকারে থাকা দেশের ফুটবল খবর নিলো না চ্যাম্পিয়ন জয়ের সেই নায়কের। সাফ চ্যাম্পিয়নের পর অনেক স্বপ্ন দেখিয়ে ছিলেন স্বপ্নবান ফুটবল কর্তারা।
কিন্তুু পরে আর কোন খোঁজই নেননি সাফ জয়ের এসব নায়কদের। শেষ পরিণতি তাই যা হওয়ার তা হলো। ইতিহাস গড়া সেই সাফ জয়ের নায়ক ফয়সল এবার ফুটবল ছেড়ে পাঁড়ি জমালো জীবন-জীবিকার সন্ধানে।
ফয়সলদের অভাব অনটনের সংসার। তার উপর ফুটবল অনুশীলনের খরচ কিছুতেই কুলিয়ে উঠতে পারছিলো কিশোর ফুটবলারটি। কোন খবর নেয়নি ফেডারেশন। তাই শেষ পর্যন্ত পুলিশের চাকরিতে যোগ দিলো ছেলেটি।
যেখানে বর্তমানে আগামি সাফ ও এএফসি অনুর্ধ্ব-১৯ দল গঠনের জন্য ভালো খেলোয়াড় পাচ্ছে না বাফুফে, সেখানে ফয়সলের মত ফুটবলাররা হারিয়ে যাচ্ছে দেশের ফুটবল থেকে।
২০১৭ সালে সাফ টুর্নামেন্ট, ২০১৮ সালে এএফসি টুর্নামেন্টের জন্য দল গঠনের কাজ করছে বাফুফে। দল গঠনের দায়িত্বে থাকা বাফুফে সদস্য ও সাবেক গোলরক্ষক বিজন বড়ুয়া জানালেন, ‘তেমন পছন্দনীয় গোলকিপার এখনো পাইনি। ভালো গোলকিপার খুঁজছি। প্রয়োজনে জেলায় জেলায় চিঠি পাঠিয়ে ভালো গোলকিপার চাইব।’
দল গঠনে থাকা বাফুফের টেকনিক্যাল ডিরেক্টর পল স্মলি খুবই হতাশ। ভালো খেলোয়াড় তিনি পাচ্ছেন না। অথচ পরিচর্যার অভাবে ফয়সলের মত ফুটবলারদের হারাচ্ছে বাফুফে।
গত বছরের ১৮ আগ্সট সিলেট জেলা স্টেডিয়ামে অনুষ্টিত অনুর্ধ্ব-১৬ সাফ ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপের টাইব্রেকারে সাফ জয়ের সেই নায়ক সুনামগঞ্জের ফয়সল সম্প্রতি পুলিশের চাকরি নিয়েছে। সবার কাছ থেকে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে অভিমানি ফয়সল চাকরিতে চলে গেছে। গত দু’তিন দিন থেকে তার মুঠোফোনে বেশ কয়েক দফা যোগাযোগের চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি। সব সময়ই তার মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া গেছে।
এসএনপিস্পোর্টস২৪ডটকমের সুনামগঞ্জ প্রতিবেদক আম্মার আহমেদ খোঁজ নিতে গিয়ে ছিলেন ফয়সলদের বাড়িতে। আম্মার জানান, ফয়সল পুলিশে চাকরি নিয়ে চলে গেছে প্রশিক্ষণে। যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন থাকতে মোবাইল বন্ধ রেখেছেন ফয়সল।
তার পিতা কিরণ মিয়া জানান, অভাবের সংসার, যেখানে ফয়সলের লেখাপড়ার খরচ, অনুশীলনের খরচ চালানোর সামর্থ্য ছিল না পরিবারটির। তার ওপর ফুটবলে ফয়সলের ভবিষ্যতটা ছিলো অনিশ্চিত। এছাড়া তাদের আর কোন উপায় ছিলো না।
তবে এর মধ্যে আশার বাণী শুনালেন ফয়সলদের ফুটবল একাডেমি ক্যানারি ওয়ার্ফের গোল রক্ষক কোচ খালেদ আহমদ। তিনি জানালেন, ফয়সল পুলিশ বাহিনীর ফুটবল টিমে খেলতে পারে। সেখানে খেলার সম্ভাবনা রয়েছে। আমরা তাকে বলেছি পুলিশের ফুটবল টিমে যেনো খেলাটা চালিয়ে যায়।
খালেদ বলেন, ফয়সল খুবই প্রতিভাবান একটা ছেলে। আমার দেখা সেরা একটা গোল কিপার ফয়সল। কিন্তুু তাদের অভাবের সংসার। চাকরি ছাড়া হয়তো কোন উপায় ছিলো না।
এ ভাবেই হয়তো হারিয়ে যাবে দেশের ফুটবল প্রতিভা, আর আমাদের ফুটবল কর্মকর্তারা চেয়ার আকঁড়েই থাকবেন হয়তো চিরকাল!
এসএনপিস্পোর্টসটোয়েন্টিফোরডটকম/নিপ্র/০০