অশ্রুসিক্ত চোখে টেনিস কোর্ট থেকে বিদায় নিলেন ফেদেরার

0
128
ছবিঃ এপি।

স্পোর্টস ডেস্কঃ আসলেন, খেললেন আর জয় করলেন, এমনই ছিল টেনিস কোর্টে রজার ফেদেরার দাপিয়ে বেড়ানোর দৃশ্য। ২৫ বছরের ক্যারিয়ারে শুধুই সাফল্যের মহাকাব্য রচিত করেছিলেন। সেই যাত্রা আনুষ্ঠানিকভাবে থামিয়ে দিলেন শুক্রবার রাতে।

গেল ১৫ সেপ্টেম্বর টেনিস থেকে অবসরের ঘোষণা দেন ফেদেরার। তবে মাঠ থেকে বিদায় নিলেন ২৩ সেপ্টেম্বর। লন্ডনের ওটু অ্যারেনায় লেভার কাপের দ্বৈতে শেষবারের মতো মাঠে নামেন ফেদেরার। টিম ইউরোপে এই সুইস কিংবদন্তির সাথে জুটি বাঁধেন, টেনিস মাঠের চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী রাফায়েল নাদাল।

তবে বিদায়টা জয় দিয়ে রাঙানো হয়নি। টিম ওয়ার্ল্ড’সের জ্যাক সক ও ফ্রান্সেস টিয়াফো জুটির কাছে হারে ফেদেরার-নাদাল জুটি। টান টান লড়াইয়ের ম্যাচটিতে প্রথমে ৬-৪ ব্যবধানে জিতে নেয় টিম ইউরোপ। তবে দুই কিংবদন্তির বিপক্ষে ঘুরে দাঁড়িয়ে ৭-৬ (৭-২) ও ১১-৯ গেমে জিতে নেয় সক-টিয়াফো জুটি।

কিন্ত তাতে কী আসে যায়, ফেদেরার মানেই তো চ্যাম্পিয়ন! টেনিস কোর্টে অঘোষিত ‘মহারাজা’। ম্যাচ শেষেই বিদায়ের আনুষ্ঠানিকতা শুরু। আর তখনই সবার মাঝে ধরা দিল আবেগ। নিজের সদা হাস্যোজ্জ্বল চেহারার মাঝেও আড়াল করতে পারেননি চোখের জল।

অশ্রুসিক্ত নয়ন প্রকাশ্যে চলে আসে সবার মাঝে। শুধু নিজেই কাঁদেননি ফেদেরার, কাঁদিয়েছেন গোটা গ্যালারিকে। টেনিস কোর্টে যে নাদাল ছিল সবচেয়ে বড় প্রতিদ্বন্দ্বী, সেই স্প্যানিশ কিংবদন্তিও এদিন অঝোরে কাঁদলেন। কোর্টে প্রতিদ্বন্দ্বী হলেও, বাস্তবে দুজন তো প্রিয় বন্ধু। আর সেই বন্ধুর বিদায়ে পাশে বসেই আবেগের স্রোতে ভাসলেন তিনি। উপস্থিত ছিলেন টেনিসের বিগ থ্রির অপরজন নোভাক জোকোভিচও। এই সার্বিয়ান তারকাকেও মর্মাহত অবস্থায় দেখা যায়।

চোখে জল নিয়েও বিদায়বেলা ফেদেরার জানিয়েছেন, তিনি খুব সুখী আজ। সবার প্রতি ধন্যবাদ আর কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন এই ৪১ বছর বয়সী তারকা। বিশেষ করে পরিবারের প্রতি ভালোবাসার কথা জানিয়েছেন। গ্যালারিতেই বসা ছিলেন ফেদেরারের পরিবারের প্রায় সবাই।

ফেদেরার বলেন, ‘চমৎকার একটা দিন। সবাইকে বলছি যে আমি খুশি, দু:খী নই। এখানে থাকতে পেরে দারুণ লাগছে। রাফার (রাফায়েল নাদাল) সঙ্গে খেলা এবং এখানে সব কিংবদন্তিদের পাওয়াটা অসাধারণ, সবাইকে ধন্যবাদ।’

‘সবাই আছে এখানে, আমার ছেলে-মেয়েরা আছে। আমার স্ত্রী খুব সাপোর্ট দেয়। সে আমাকে অনেক, অনেক আগেই থামাতে পারত, কিন্তু সেটা করেনি। আমাকে খেলা চালিয়ে যেতে উৎসাহ দিয়েছে সে, খেলতে দিয়েছে, ধন্যবাদ তোমাকে। একটা মজার বিষয়, সবসময় আমার মাকে আমরা দোষ দেই, কেননা তাকে ছাড়া অবশ্যই আমি এখানে থাকতাম না। আমার বাবা-মাকে ধন্যবাদ। সবসময়পাশে থেকেছেন। সবাইকেই ধন্যবাদ, অবিশ্বাস্য একটা যাত্রা ছিল।’ যোগ করেন তিনি।

১৯৯৮ সালে পেশাদার টেনিসে নাম লেখান ফেদেরার। ক্যারিয়ারে দেড় হাজারেরও বেশি প্রতিযোগীতামূলক ম্যাচ খেলেছেন। ১৬ বছর বয়স থেকেই টেনিস শুরু করা ফেদেরার, সব মিলিয়ে জিতেছেন ২০টি গ্র্যান্ডস্ল্যাম। ২০২১ সালে উইম্বলডনের কোয়ার্টার ফাইনাল শেষে আর নামেননি কোর্টে। হাঁটুর চোট নামতে দেয়নি তাকে। শেষ পর্যন্ত বিদায় বলে দিলেন তিনি।

সময়ের সাথে সাথে নিজেকে শুধু টেনিসের সেরাই নয়, পুরো বিশ্ব ক্রীড়াঙ্গনের একজন মহাতারকা হিসেবে গড়ে তুলেছেন ফেদেরার। যার ভক্ত লিওনেল মেসি, বিরাট কোহলি, মুশফিকুর রহিম, তামিম ইকবালসহ সব ক্রীড়া অঙ্গনেই ছড়িয়ে আছে। নিতান্তই ভদ্রলোক আর সেরা স্পোর্টসম্যানশিপদের একজন ফেদেরার। নিশ্চিতভাবেই টেনিস কোর্টে তার পদচারণা মিস করবে গোটা বিশ্ব।

এসএনপিস্পোর্টসটোয়েন্টিফোরডটকম/নিপ্র/ডেস্ক/সা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here