ইতিহাস গড়ে আয়ারল্যান্ডকে হারালো বাংলাদেশ

0
98

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ শঙ্কার মেঘ উড়িয়ে দেখা মিললো ভালো জয়ের। আয়ারল্যান্ডকে ৭ উইকেটের বড় ব্যবধানে হারালো বাংলাদেশ। টেস্টে ঘরের মাঠে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় জয়। এছাড়া নিজেদের ইতিহাসে এই প্রথম কোনো দলের সাথে প্রথম টেস্ট খেলেই জয়ের দেখা পেল বাংলাদেশ। এই জয়ের অন্যতম নায়ক মুশফিকুর রহিম। দ্বিতীয় ইনিংসে ফিফটি হাঁকিয়েছেন। এর আগে প্রথম ইনিংসে হাঁকান সেঞ্চুরিও।

সব মিলিয়ে এক বছরেরও বেশি সময় পর টেস্টে জয়ের দেখা পেল বাংলাদেশ। সবশেষ ২০২২ সালের জানুয়ারিতে সবশেষ নিউজিল্যান্ডের মাঠে নিউজিল্যান্ডকে হারিয়ে ইতিহাস গড়েছিল টাইগাররা। এরপর আরও ৯টি ম্যাচ খেললেও, একটিতেও জয়ের দেখা পায়নি বাংলাদেশ। ৮টিতে হার ও ১টিতে ড্র করেছিল।

আইরিশদের বিপক্ষে তৃতীয় দিন শেষে হারের শঙ্কা উঁকি দিচ্ছিল। তবে সেটা চতুর্থ দিনের সকালেই পাল্টে যায়। ম্যাচে ফিরে বাংলাদেশ। আইরিশদের বল হাতে ও ব্যাট হাতে সহজেই ধরাশায়ী করে স্বাগতিকরা। তবে আয়ারল্যান্ডের লড়াই চোখে লাগার মতোই ছিল।

মিরপুরের হোম অব ক্রিকেটে চতুর্থ দিন সকালে নিজেদের দ্বিতীয় ইনিংসে ফের ব্যাট করতে নামে আয়ারল্যান্ড। আগের দিন ৮ উইকেট হারিয়ে ২৮৬ রান নিয়ে তৃতীয় দিন পার করেছিল দলটি। তবে সেখান থেকে আজ চতুর্থ দিনের শুরুটা ভালো হয়নি দলটির। অলআউট হয়েছে মাত্র ৬ রান যোগ করেই, অর্থাৎ ২৯২ রানে। এদিন ৯ ওভার ব্যাট করতে পারে সফরকারীরা।

এবাদত হোসেনের জোড়া শিকারে প্যাভিলিয়নে ফেরেন অ্যান্ডি ম্যাকব্রাইন ও গ্রাহাম হিউম। ১৫৬ বলে ৮ বাউন্ডারি ও ১ ছক্কায় ৭২ রানের ইনিংস খেলেন ম্যাকব্রাইন। ১৪ রান এসেছিলন হিউমের ব্যাট থেকে। এর আগে তৃতীয় দিনে ১০৮ রান করেছিলেন লরকান টাকার। ৫৬ রান এসেছিল হ্যারি টেক্টরের ব্যাট থেকে।

বিপর্যয় থেকে দারুণভাবে ঘুরে দাড়িয়েছিল দল। তবে বাংলাদেশের লিড টপকে বড় লক্ষ্য দলটি ছুঁড়ে দিতে পারেনি। বাংলাদেশের সামনে ম্যাচের চতুর্থ ইনিংসে লক্ষ্য তাই দাঁড়ায় ১৩৮ রান।

বাংলাদেশের হয়ে তাইজুল ইসলাম ৪টি উইকেট লাভ করেন। এবাদত হোসেন ৩ উইকেট শিকার করেন। সাকিব আল হাসানের শিকার ১ উইকেট।

১৩৮ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে ঝড়ো শুরু পেয়েছিল বাংলাদেশ। ওপেনিং পেয়ার বদলে তামিম ইকবালের সাথে নেমেছিলেন লিটন দাস। দুজনের সেই জুটি ভাঙে ভাগ্য বিড়ম্বনায় লিটন আউট হলে। দলীয় ৩২ রানের মাথায় ফিরে যান লিটন। মার্ক অ্যাডায়ারের বাউন্স বল লিটনের হেলমেটে আঘাত হেনে একবার পিচে বাউন্স খেয়ে স্টাম্পে গিয়ে আলতোভাবে আঘাত হানে। নিজেও যেন বিশ্বাস করতে পারছিলেন না লিটন। ১৯ বলে ৩ বাউন্ডারি ও ১ ছক্কায় ২৩ রানেই আউট হতে হয়েছে লিটনকে।

এরপর উইকেটে এসে দ্রুতই নাজমুল ইসলাম শান্ত বিদায় নেন। ৯ বলে ১ বাউন্ডারিতে ৪ রান করেন তিনি। ম্যাকব্রাইনের বলে আউট হন আইরিশ অধিনায়ক বালবার্নির হাতে ক্যাচ দিয়ে। কিছুটা চাপে পড়ে বাংলাদেশ। তবে সেখান থেকে দুই প্রিয় বন্ধু তামিম ইকবাল ও মুশফিকুর রহিমের অবিচ্ছিন্ন জুটিতে জয়ের পথে ছুটে চলে বাংলাদেশ।

মধ্যাহ্ন বিরতিতে যাওয়ার আগে টাইগারদের সংগ্রহ ছিল ১৬ ওভারে ২ উইকেট হারিয়ে ৮৯ রান। ঝড়ো ব্যাট করা মুশফিক ক্যারিয়ারে ১৪ হাজার আন্তর্জাতিক রানের মাইলফলক স্পর্শ করেন। মধ্যাহ্ন বিরতি থেকে ফিরে এসে দলের রান একশ পার করতেই মুশফিকের ৬২ রানের জুটি ভেঙে প্যাভিলিয়নের পথ ধরেন তামিম। ৬৫ বলে ৩ বাউন্ডারিতে ৩১ রান করেন এই বাঁহাতি ওপেনার।

তবে জয় পেতে বেশি সময় অপেক্ষা করাননি মুশফিক। মুমিনুল হককে সাথে নিয়ে ৩৩ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটি গড়ে দলকে জয়ের বন্দরে পৌঁছান এই তারকা। টেস্ট ক্যারিয়ারে নিজের ২৬তম ফিফটি হাঁকিয়ে মুশফিক অপরাজিত থাকেন ৫১ রানে। ৪৮ বলে ৭ বাউন্ডারিতে সাজান নিজের ইনিংসটি। অপরদিকে ২২ বলে ১টি করে চার ও ছয়ের মারে ২০ রান করে অপরাজিত থাকেন মুমিনুল হক।

আয়ারল্যান্ডের হয়ে অ্যাডায়ার, ম্যাকব্রাইন ও বেন ওয়াইট ১টি করে উইকেট লাভ করেন।

এর আগে ম্যাচের প্রথম ইনিংসে ব্যাট করে ২১৪ রানে অলআউট হয় আয়ারল্যান্ড। সর্বোচ্চ ৫০ রান করেন হ্যারি টেক্টর ও লরকান টাকারের ব্যাট থেকে আসে ৩৭ রান। বাংলাদেশের হয়ে একাই ৫ উইকেট শিকার করেন তাইজুল ইসলাম। ২টি করে উইকেট লাভ করেন এবাদত হোসেন ও মেহেদী হাসান মিরাজ।

জবাবে নিজেদের প্রথম ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে বাংলাদেশ অলআউট হয় ৩৬৯ রানে। প্রথম ইনিংস শেষে লিড নেয় ১৫৫ রানের। মুশফিকুর রহিম ১২৬ রানে ইনিংস খেলেন। এছাড়াও সাকিব আল হাসান ৮৭, মিরাজ ৫৫ ও লিটন দাস ৪৩ রান করেন। আয়ারল্যান্ডের হয়ে একাই ৬ উইকেট নেন ম্যাকব্রাইন। ২টি করে উইকেট লাভ করেন অ্যাডায়ার ও ওয়াইট।

এসএনপিস্পোর্টসটোয়েন্টিফোরডটকম/নিপ্র/সা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here