নিজস্ব প্রতিবেদকঃ বাংলাদেশের বিপক্ষে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ জিতল আফগানিস্তান। সিরিজের প্রথম দুই ম্যাচে জিতে এক ম্যাচ হাতে রেখে সিরিজ নিজেদের করে নিয়েছে সফরকারীরা। চট্টগ্রামে শনিবার আগে ব্যাট ৩৩১ রান করে হাশমাতুল্লাহ শহীদির দল।
রান তাড়া করতে নেমে মুশফিকুর রহিমের লড়াকু ফিফটির পর বাংলাদেশ অলআউট হয়েছে ১৮৯ রানে। ১৪২ রানের রেকর্ড ব্যবধানে জিতে সিরিজ ২-০ ব্যবধানে জিতে নিয়েছে আফগানরা। সিরিজ জয়ের ম্যাচে দারুণ এক রেকর্ড গড়েছে তারা। রানের ব্যবধানে বাংলাদেশের বিপক্ষে আফগানিস্তানের সবচেয়ে বড় জয়টির জন্ম হলো আজ।
বাংলাদেশের বিপক্ষে আফগানদের ২০১৮ এশিয়া কাপে আবু ধাবিতে ১৩৬ রানের জয় ছিল আগের রেকর্ড। এদিকে প্রতিপক্ষ মিলিয়ে রানের দিক থেকে আফগানদের তৃতীয় সবচেয়ে বড় জয় এটি। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ১৫৪ ও ১৪৬ রানের জয় আছে তাদের। আজকের জয়ে বড় অবদান ওপেনার রহমানউল্লাহ গুরবাজের। দারুণ এক সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছেন এই ডানহাতি ব্যাটার। এছাড়া সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছেন আরেক ওপেনার ইব্রাহিম জাদরানও।
বড় লক্ষ্যে খেলতে নেমে শুরু থেকেই আফগান বোলারদের চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হয় বাংলাদেশকে। একবার জীবন পেয়েও বেশিদূর এগোতে পারেন নি অধিনায়ক লিটন। ফজলহক ফারুকির বলে পুল করতে গিয়ে মিড উইকেটে মোহাম্মদ নবির হাতে ক্যাচ দেন। পরের ওভারে নাজমুল হোসেন শান্তর উইকেট হারায় বাংলাদেশ। মুজিব উর রহমানের করা রিপারে বলের লাইন মিস করে বোল্ড হন শান্ত। তার ব্যাট থেকে এসেছে মাত্র ১ রান।
দ্রুত ২ উইকেট হারিয়ে বিপাকে পড়া বাংলাদেশকে আগলে রাখতে পারেন নি ২ বছর পর দলে ফেরা নাঈম শেখ। ধীর গতির ইনিংস খেলে তিনি আউট হয়েছেন ২১ বলে ৯ রান করে। ফারুকির করা শর্ট অফ লেংথে করা লাফিয়ে ওঠা বলে ক্রিজ ছেড়ে বেড়িয়ে আসতে গিয়ে খেলতে গিয়ে ইনসাইড এজ হয়ে বোল্ড হন এই বাঁহাতি।এরপর তাওহীদ হৃদয়কে নিয়ে বিপর্যয় সামাল দেয়ার চেষ্টা করেন সাকিব আল হাসান। তবে রশিদের বলে ১৬ রানে আউট হয়ে যান হৃদয়।
এর মধ্যে দিয়ে সাকিবের সঙ্গে হৃদয়ে ৪০ রানের জুটি ভাঙে। পরের ওভারেই মোহাম্মদ নবির বলে এলবিডব্লিউ হন ২৫ রান করা সাকিব। নবির রাউন্ড দ্য উইকেট থেকে করা বলটিতে ব্যাকফুটে খেলতে গিয়ে মিস করে যান তিনি। আত্মবিশ্বাসী না হলেও রিভিউ নিয়েছিলেন, কিন্তু সেটি বাঁচাতে পারেনি তাঁকে। এরপর গোল্ডেন ডাক মারেন আফিফ হোসেন ধ্রুব। রানের খাতা খোলার আগেই রশিদের বলে ফিরেন তিনি।
সপ্তম উইকেটে বাংলাদেশের হাল ধরেন মুশফিকুর রহিম ও মেহেদী হাসান মিরাজ। দায়িত্বশীল ব্যাটিংয়ে ৬২ বলে হাফ সেঞ্চুরি তুলে নিয়েছেন মুশফিক। মিরাজের বিদায়ে ৮৭ রানের জুটি ভাঙে ষষ্ঠ উইকেটে মুশফিকের সঙ্গে। মুজিবের বলে লং অনে সীমানার কাছে মিরাজ ক্যাচ দেন রহমত শাহর হাতে। এর মধ্যে দিয়ে শেষ হয় তার ৪৮ বলে ২৫ রানের ইনিংস। এরপর হাসান মাহমুদকে এলবিডব্লিউ করেছেন মুজিব। তার ব্যাট থেকে আসে মাত্র ৪ রান।
শেষ পর্যন্ত মুশফিক ৬৯ রান করে ফারুকির করা শর্ট বলে পুল করতে গিয়ে স্কয়ার লেগে মুজিবের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফিরলে বাংলাদেশের ইনিংস শেষ হয়ে যায়। এবাদত হোসেন পায়ের চোটের কারণে ব্যাটিংয়েই নামতে পারেননি। প্রথম ম্যাচের মতো ফজলহক ফারুকি নেন ৩ উইকেট। যথারীতি মুজিব উর রহমান ও রশিদ খান ছিলেন ক্ষুরধার। ৯ ওভার বল করে ২৮ রান খরচ করে ২ উইকেট নেন রশিদ। ১০ ওভারে ৪০ রান দিয়ে ৩ উইকেট নেন মুজিব। আর ফারুকি ৭.১ ওভারে ২২ রানে নেন ৩ উইকেট।
এর আগে উদ্বোধনী জুটিতে ৩৬ ওভারে ২৫৬ রান তোলা আফগানিস্তান পরে ১৪ ওভারে ৯ উইকেট হারিয়ে যোগ করতে পারে আর ৭৫ রান। বাংলাদেশের হয়ে সাকিব আল হাসান শুরুতে খরুচে থাকলেও পরে নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে দলের সেরা তিনিই। ২ উইকেট নেন তিনি ৫০ রানে। ২টি করে উইকেট নিয়েছেন মেহেদি হাসান মিরাজ, হাসান মাহমুদ ও মুস্তাফিজুর রহমানও।
টস হেরে ব্যাট করতে নেমে বাংলাদেশি বোলারদের রীতিমতো তুলোধুনো করছিলেন আফগানিস্তানের দুই ওপেনার রহমানউল্লাহ গুরবাজ ও ইব্রাহিম জাদরান। কোনো উইকেটই ফেলতে পারছিল না টাইগাররা। আক্রমণাত্মক মেজাজে গুরবাজ তুলে নেন সেঞ্চুরি। ৪৮ বলে হাফসেঞ্চুরি পূর্ণ করার পর গুরবাজ সেঞ্চুরি করেন ১০০ বলে। ওয়ানডে ক্রিকেটে এটি তার চতুর্থ সেঞ্চুরি। এর আগে আয়ারল্যান্ড, নেদারল্যান্ডস ও বাংলাদেশের বিপক্ষে একটি করে সেঞ্চুরি করেছিলেন তিনি।
শেষ পর্যন্ত সাকিবের হাত ধরে উইকেট পায় লিটন দাসের নেতৃত্বাধীন দল। সাকিব ফেরান রহমানউল্লাহ গুরবাজকে। বাংলাদেশি অলরাউন্ডারের অফ স্টাম্প লাইনে পিচ করা বলটি হুট করেই ভেতরে ঢুকে যায়। চেষ্টা করলেও গুরবাজ তা ব্যাটে লাগাতে পারেননি। আম্পায়ার সরাসরি আউট দেন। ১৪৫ রান করে আউট হন আফগান ওপেনার। ১৪৫ রান করতে ১২৫ বলে ১৩টি চার ও ৮টি ছয় হাঁকিয়েছেন গুরবাজ। ওয়ানডে ক্রিকেটে এটা তার সর্বোচ্চ রানের ইনিংস।
সাকিবের পর উইকেট পান এবাদত হোসেনও। এ পেসার ফিরিয়েছেন রহমত শাহকে। ৫ বলে ২ রান করে বিদায় নেন রহমত। এরপর আঘাত হানেন মিরাজ। আফগান অধিনায়ক হাশমাতুল্লাহ শহীদিকে শিকারে পরিণত করেন। আউট হওয়ার আগে শহীদি করেন ২ রান। নাজিবুল্লাহ জাদরানও শিকান হন মিরাজের।
ওপেনার ইব্রাহিম ঠিক ১০০ রান করার পর ফিরে যান মুস্তাফিজুর রহমানের ওভারে। ১১৯ বলে ৯টি চার ও একটি ছয় হাঁকান এ ওপেনার। রশিদ খান ৬ রান করে সাকিবের বলে স্টাম্পিং হন। তবে ১৫ বলে নবি খেলেন গুরুত্বপূর্ণ ২৫ রানের ইনিংস। তাতে ৩৩১ রানের পুঁজি পায় শহীদির দল। বাংলাদেশের বিপক্ষে ১৩ ওয়ানডেতে প্রথমবার তিনশ রানের সীমানা স্পর্শ করল আফগানিস্তান। তাদের আগের সর্বোচ্চ ছিল ২০১৬ সালে মিরপুরে ২৫৮। আগে ব্যাট করে সর্বোচ্চ ছিল আবুধাবিতে ২০১৮ এশিয়া কাপে ২৫৫।
এসএনপিস্পোর্টসটোয়েন্টিফোরডটকম/নিপ্র/১১০
Discussion about this post