এশিয়া কাপে যে যেমন

0
55

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ এশিয়ার ক্রিকেট খেলুড়ে দেশগুলোর শ্রেষ্ঠত্বের লড়াই ‘এশিয়া কাপ’-এর পর্দা উঠছে আজ (৩০ আগস্ট)। বুধবার থেকে শুরু হতে যাওয়া টুর্নামেন্টটির ১৬তম আসরে অংশ নিচ্ছে এশিয়ার ৬টি দেশ। প্রথমবারের মতো এশিয়া কাপের আয়োজক হিসেবে থাকছে দুটি দেশ। এদিকে প্রথমবারের মতো এশিয়া কাপে অংশ নিচ্ছে নেপাল।

এশিয়া কাপের এবারের পুরো আসরটি পাকিস্তানে হওয়ার কথা থাকলেও রাজনৈতিক দ্বন্দ্বের কারণে দেশটিতে যেতে রাজী হয়নি তাদের চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ভারত। তাই হাইব্রিড মডেলে দুটি দেশকে আয়োজক করেছে এশিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিল (এসিসি)। পাকিস্তানে আয়োজিত হবে চারটি ম্যাচ। শ্রীলঙ্কায় হবে বাকি নয়টি। লঙ্কা দ্বীপে হবে আসরের ফাইনালও।

বুধবার বিকেলে মুলতানে পাকিস্তান ও নেপালের মধ্যকার ম্যাচ দিয়ে পর্দা উঠবে এবারের এশিয়া কাপের। আসরে বাংলাদেশের মহাদেশীয় শ্রেষ্ঠত্বের লড়াই শুরু বৃহস্পতিবার। ক্যান্ডিতে টাইগারদের প্রথম ম্যাচ শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে। ‘এ’ গ্রুপে রয়েছে দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী দেশ ভারত-পাকিস্তান ও নেপাল। ‘বি’ গ্রুপে অবস্থান বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা ও আফগানিস্তানের। প্রথমবারের মতো এশিয়া কাপে অংশ নিচ্ছে নেপাল।

১৯৮৪ সালে যাত্রা শুরু হয়েছিল এশিয়া কাপ টুর্নামেন্টের। বাংলাদেশ সর্বোচ্চ পাঁচবার এশিয়া কাপ আয়োজন করেছিল। এদিকে সর্বশেষ ২০১৮ সালে সর্বশেষ ওয়ানডে ফরম্যাটে হওয়া এশিয়া কাপের ফাইনালে উঠেছিল বাংলাদেশ। কিন্তু চ্যাম্পিয়ন হতে পারে নি। এর আগে ২০১২ সালেও এই ফরম্যাটে হওয়া আসরে ফাইনাল খেলেছিলেন সাকিব আল হাসান-মুশফিকুর রহিমরা। একবার টি-টোয়েন্টি সংস্করণে (২০১৬ সালে) রানার্সআপ হয়েছে বাংলাদেশ।

এখন পর্যন্ত হওয়া এশিয়া কাপের ১৫ আসরের মধ্যে সর্বোচ্চ সাতবারই চ্যাম্পিয়ন হয়েছে ভারত। এবারের স্বাগতিক শ্রীলঙ্কা জিতেছে ছয়বার। বাকি দুবার চ্যাম্পিয়ন হয় পাকিস্তান। বাংলাদেশ তিন বার ফাইনাল খেললেও শিরোপা ছুঁয়ে দেখা হয় নি। তবে এবার সাকিব আল হাসানের নেতৃত্বে নতুন ইতিহাস রচনার স্বপ্ন তাদের। যদিও চোট শঙ্কায় আছে টাইগাররা। ছিটকে গেছেন পেসার এবাদত হোসেন। লিটন দাসকে শুরুতে পাওয়া যাবে না।

এবার দেখে নিন অংশগ্রহণকারী ৬ দলের এশিয়া কাপে ইতিহাস-

১ বাংলাদেশ-

  • এশিয়া কাপের প্রথম আসরে বাছাই পর্ব পার হতে পারেনি বাংলাদেশ। এরপর ১৪টি আসরের সবকটি খেলেছে লাল-সবুজের প্রতিনিধিরা।
  • ৬ আসরে প্রথম রাউন্ডেই থামে বাংলাদেশের যাত্রা। ২০০৪ আসরে প্রথমবারের মতো সুপার ফোরে জায়গা করে নেয় বাংলাদেশ। ২০০৮ সালেও সুপার ফোর নিশ্চিত করে তারা। ২০১০ সালে প্রথম রাউন্ড থেকে বিদায় নেয়।
  • ঘরের মাঠে ২০১২ আসরে রানার্সআপ হয় বাংলাদেশ। পাকিস্তানের বিপক্ষে শেষ বলে হারতে হয় স্বাগতিকদের। এরপর ২০১৬ এবং ২০১৮ সালেও রানার্সআপ হয় টাইগাররা। দুই আসরের ফাইনালে তাদের প্রতিপক্ষ ছিল ভারত। সবশেষ ২০২২ আসরে প্রথম রাউন্ড থেকে বাদ পড়ে বাংলাদেশ।
  • এশিয়া কাপের ১৪ আসরে ৪৬ ম্যাচ খেলে বাংলাদেশের জয় ১০টি। হার ৩৬টি।

২ পাকিস্তান- 

  • এশিয়া কাপে দু’বারের চ্যাম্পিয়ন পাকিস্তান। ১৪টি এশিয়া কাপে অংশ নিয়ে মোট পাঁচবার ফাইনাল খেলেছে তারা।
  • ১৯৮৪ সালে এশিয়া কাপের প্রথম আসরে গ্রুপ পর্ব থেকে বিদায় নেয় পাকিস্তান। ১৯৮৬ সালে দ্বিতীয় আসরে রানার্সআপ হয় তারা। ১৯৮৮ আসরে সুপার ফোরে পৌঁছাতে পারেনি পাকিস্তান।
  • ১৯৯০-৯১ এশিয়া কাপের আয়োজক দেশ ছিল ভারত। রাজনৈতিক বৈরিতার কারণে ভারতে গিয়ে সেই আসরে অংশ নেয়নি পাকিস্তান। ১৯৯৫ এবং ১৯৯৭ সালে টানা দুই আসরে প্রথম রাউন্ড থেকেই বাদ পড়া দলটি ২০০০ সালে বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত এশিয়া কাপের ৭ম আসরে প্রথম শিরোপা জেতে।
  • ২০০৪ এবং ২০০৮ সালে সুপার ফোরে থামে পাকিস্তানের এশিয়া কাপ যাত্রা। ২০১০ সালে গ্রুপ পর্ব থেকে বিদায় নেয় তারা।
  • ২০১২ আসরে দ্বিতীয়বারের মতো এশিয়া কাপ জেতে তারা। পাকিস্তান দু’টি শিরোপাই বাংলাদেশে জিতেছে। ২০১৪ সালে রানার্সআপ হয় দলটি। ২০১৬ আসরে গ্রুপ পর্বের বাধা টপকাতে না পারা পাকিস্তান ২০১৮তে থামে সুপার ফোরে। সবশেষ ২০২২ সালে রানার্সআপ হয় এশিয়ার জায়ান্টরা।
  • ১৪টি এশিয়া কাপে অংশ নিয়ে ৫৫ ম্যাচে পাকিস্তানের ৩১ জয় এবং ২৩ হার।

৩ ভারত-

  • এশিয়া কাপে সর্বোচ্চ ৭ বার শিরোপা জিতেছে ভারত। ১৯৮৪ সালে উদ্বোধনী আসরেই চ্যাম্পিয়ন হয় তারা। মাঝে ১৯৮৬ সালের আসরে খেলেনি বাংলাদেশের প্রতিবেশী দেশটি। এরপর টানা তিন আসরে চ্যাম্পিয়ন হয় ভারত। ১৯৯৭ সালের ফাইনালিস্টরা ২০০০ সালে প্রথম রাউন্ড থেকে বাদ পড়ে।
  • ২০০৪ এবং ২০০৮ সালে রানার্সআপ হয় ভার‍ত। ২০১০ সালে এশিয়া কাপের ১০ম আসরে পঞ্চম শিরোপা জেতে দলটি। বাংলাদেশে হওয়া ২০১২ এবং ২০১৪- টানা দুই আসরে গ্রুপপর্ব থেকে বিদায় নেয় তারা।
  • ২০১৬ এবং ২০১৮ এশিয়া কাপে ষষ্ঠ ও সপ্তম কাপ জেতে ভারত। এই দুই আসরেই ফাইনালে তারা হারিয়েছে বাংলাদেশকে। ২০১৬ আসর আয়োজন হয়েছিল টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে, ২০১৮ সালের আসর হয় ওয়ানডে।
  • ২০২২ সালের এশিয়া কাপের আসরে ভারত বাদ পড়ে সুপার ফোরে।
  • এশিয়া কাপের ১৪ আসরে ৫৯ ম্যাচে ৩৯ জয় এবং ১৮ হার তাদের।

৪ শ্রীলঙ্কা-

  • এশিয়া কাপে ৬ বারের চ্যাম্পিয়ন শ্রীলঙ্কা। টুর্নামেন্টের ইতিহাসে একমাত্র তারাই এশিয়া কাপের সবকটি আসর খেলেছে।
  • ১৯৮৪ সালে প্রথম আসরে রানার্সআপ হয় শ্রীলঙ্কা। ১৯৮৬ সালে ঘরের মাঠে প্রথম শিরোপা জয় করে দ্বীপ দেশটি। এরপর ১৯৮৮, ১৯৯০-৯১ এবং ১৯৯৫ সাল- টানা তিন আসরে রানার্সআপ হয় লঙ্কানরা।
  • ১৯৯৭ সালে দ্বিতীয়বারের মতো এশিয়া কাপ জেতে শ্রীলঙ্কা। ২০০০ সালে হয় রানার্সআপ। এরপর ২০০৪ এবং ২০০৮ সালে টানা দুবার শিরোপা জেতে তারা। ২০১০ সালে ষষ্ঠবারের মতো রানার্সআপ হয় দলটি।
  • ২০১২ সালের বাংলাদেশ আসরে প্রথম রাউন্ড থেকে বাদ পড়ে শ্রীলঙ্কা। যদিও পরের আসরে তারা আরেকবার শিরোপা জেতে লাসিথ মালিঙ্গা-কুমার সাঙ্গাকারাদের হাত ধরে।
  • ২০১৬ এবং ২০১৮ সালে প্রথম রাউন্ড থেকে বাদ পড়ে শ্রীলঙ্কা। সবশেষ ২০২২ আসরে ষষ্ঠ এশিয়া কাপ জেতে দলটি।
  • ১৫ এশিয়া কাপে অংশ নিয়ে ৬০ ম্যাচে শ্রীলঙ্কার জয় ৪৪টি। হার ২২ ম্যাচে।

৫ আফগানিস্তান-

  •  আইসিসির সদস্য হওয়ার পর এশিয়া কাপ যাত্রা ২০১৪ আসরে শুরু হয় আফগানিস্তানের।
  • ২০১৪ আসরে গ্রুপপর্ব থেকে বিদায় নেয় আফগানিস্তান। ২০১৬ সালে ফের বাছাইয়ে ব্যর্থ হয় তারা। শেষ দুই আসর- ২০১৬ এবং ২০১৮ সালে সুপার ফোর খেলেছে আফগানিস্তান।
  • এশিয়া কাপের তিন আসরে অংশ নিয়ে ১৪ ম্যাচে আফগানদের জয় ৫টিতে। বাকি ৮ ম্যাচে হার।

৬ নেপাল-

  • এশিয়া কাপের মূল পর্বে খেলা এবারই প্রথমবার নিশ্চিত করে নেপাল। এশিয়া কাপ বাছাই টুর্নামেন্টের ফাইনালে সংযুক্ত আরব আমিরাতকে হারিয়ে প্রথমবারের মতো মূল পর্বে জায়গা করে নেয় তারা।
  • আইসিসির সদস্য না হওয়ায় ১৯৯৫ সাল পর্যন্ত এশিয়া কাপ বাছাই খেলার যোগ্যতা ছিল না নেপালের। ১৯৯৭ আসর থেকে সেই জটিলতা কেটে গেলেও টানা দশ আসরের কয়েকটিতে অংশ নেয়নি তারা।
  • এবারের আসর দিয়ে এশিয়া কাপে যাত্রা শুরু হলো নেপালিদের।

এসএনপিস্পোর্টসটোয়েন্টিফোরডটকম/নিপ্র/ডেস্ক/১১০

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here