নিজস্ব প্রতিবেদকঃ রানের হিসেবে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় জয়ের রেকর্ড হলো আজ। আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে তিন ম্যাচ সিরিজের প্রথমটিতে ১৮৩ রানে জিতল বাংলাদেশ। এর আগে ২০২০ সালে সিলেটেই জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ১৬৯ রানে জিতেছিল টাইগাররা।
শনিবার সিলেটে টাইগারদের করা ৩৩৮ রানের জবাবে ব্যাট করতে নেমে আয়ারল্যান্ডের শুরুটা ভালো হলেও তবে তা ধরে রাখতে পারেনি। নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারিয়েছে আইরিশরা। দুই পেসার এবাদত হোসেন ও তাকসিন আহমেদের জোড়া শিকারে দলীয় ৭৬ রানে ৫ উইকেট হারায় সফরকারীরা।
রান তাড়ায় ৬০ রানের ওপেনিং জুটি পায় আয়ারল্যান্ড। ৩৪ রান করা স্টিফেন ডেহানির বিদায়ে ভাঙে এই জুটি। ৩৮ বলে ৪ চার ও ১ ছক্কায় ৩৪ রান করে সাকিব আল হাসানের বলে বিদায় নেন তিনি। বোলিংয়ে এসেই উইকেটের দেখা পান এবাদত। ফেরান আইরিশ ওপেনার পল স্টার্লিংকে। ৩১ বলে একটি করে চার ও ছয়ের মারে ২১ রান করেন এই ডানহাতি।
দুই ওপেনারকে হারিয়ে বিপাকে পড়ে আয়ারল্যান্ড। দ্রুত ফিরে যান হ্যারি টেকটর ও আন্ডু বালবার্নি। শিকারের জোড়া টেকটরকে ফিরিয়ে পূর্ণ করেন এবাদত। মুশফিকের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরার আগে এই আইরিশ ক্রিকেটার করেন মাত্র ৩ রান। এরপর অধিনায়ক বালবার্নিকে ফেরান তাসকিন।
টিকতে পারেন নি লরকান টাকারও। তাসকিনের শিকারে ফিরেন তিনি। স্লিপে দুর্দান্ত এক ক্যাচ নিয়েছেন ইয়াসির আলী রাব্বি। টাকার আউট হন দলীয় ৭৬ রানে। এরপর কার্টিস ক্যাম্ফারকে সাজঘরে পাঠান নাসুম। ১৬ রান করেন তিনি। লেগ বিফোরে এই ব্যাটারকে ফেরান সিলেটের স্পিনার নাসুম। রিভিউ নিয়েও বাঁচতে পারেন নি ক্যাম্ফার।
নাসুমের বলে এরপর ফিরে যান গ্যারেথ ডিলানিও। তিনিও লেগ বিফোরে ফিরেন। ১ রান করেছেন এই ডানহাতি ক্রিকেটার। এরপর অ্যান্ডি ম্যাকব্রিনিকে রানের খাতাই খোলতে দেন নি নাসুম। সম্ভাবনা জাগে হ্যাটট্রিকের। যদিও হ্যাটট্রিকের স্বাদ পাওয়া হয় নি তাঁর।
শেষদিকে ডকরেলকে বোল্ড করেন এবাদত। এর আগে তিনি ফেরান মার্ক অ্যাডায়ারকে। ১৫৫ রানে অলআউট হয়ে যায় আয়ারল্যান্ড। বাংলাদেশের হয়ে দারুণ বোলিং করেছেন নাসুম। ৮ ওভার বল করে ৪৩ রান খরচ করে ৩ উইকেট নিয়েছেন তিনি। ৪ উইকেট নিয়েছেন এবাদত। যদিও তিনি ৬’র উপর ওভারপ্রতি রান খরচ করেছেন। তাসকিন নিয়েছেন ২ উইকেট। সাকিবের শিকার ১টি।
এর আগে ব্যাট করে ওয়ানডেতে নিজেদের সর্বোচ্চ স্কোর দাঁড় করায় বাংলাদেশ। আইরিশদের বিপক্ষে ৩৩৮ রানের পাহাড় গড়ে স্বাগতিকরা। সাকিব আল হাসান ও তৌহিদ হৃদয়ের সেঞ্চুরি মিসের দিনে ঝড়ো ইনিংস খেলেছেন মুশফিকুর রহিম। টস হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে শুরুতেই ধাক্কা খায় বাংলাদেশ।
দলীয় ১৫ রানে ক্যাচ দিয়ে ফিরেন অধিনায়ক তামিম ইকবাল (৩)। আরেক ওপেনার লিটন দাস উইকেটে সেট হয়ে গিয়েছিলেন। দারুণ তিনটি শটও দেখা যায় তার ব্যাটে। তবে ব্যক্তিগত ২৬ রানে কার্টিস ক্যাম্ফারের বল বুঝতে না পেরে ক্যাচ দিয়ে ফিরেন।
তিনে নামা নাজমুল হোসেন শান্তও আজ বড় স্কোর গড়তে পারেননি। ৩৪ বলে ২৫ রান করে অ্যান্ড্রু ম্যাকব্রেইনের বলে বোল্ড হয়ে যান। ৮১ রানে ৩ উইকেট পতনের পর দলের হাল ধরেন সাকিব এবং অভিষিক্ত হৃদয়। দুজন গড়েন শতরানের জুটি। দলীয় ২১৬ রানে সাকিবের বিদায়ে ভাঙে এই জুটি।
দারুণ ব্যাট করে সেঞ্চুরির পথে ছিলেন সাকিব। সবাই যখন এই বাঁহাতির সেঞ্চুরির অপেক্ষা করছে, ঠিক তখনই ছন্দপতন। গ্রাহাম হিউমের করা অফস্টাম্পের অনেক বাইরের বলকে জায়গায় দাঁড়িয়ে খোঁচা মারতে গিয়ে মাত্র ৭ রানের জন্য সেঞ্চুরি মিস করেন সাকিব। তার ৮৯ বলে ৯৩ রানের ইনিংসে ছিল ৯টি বাউন্ডারি। তাঁর বিদায়ে হৃদয়ের সাথে ১২৫ বলে ১৩৫ রানের চতুর্থ উইকেট জুটিও বিদায় হয়।
ছয়ে নামা মুশফিক শুরু থেকেই ছিলেন আগ্রাসী। ২৬ বলে ৩ চার ৩ ছক্কায় ৪৪ রানের ইনিংস খেলে গ্রাহাম হিউমের বলে থামেন তিনি। একই ওভারে পঞ্চম বলে হিউম বোল্ড করেন সেঞ্চুরির অপেক্ষায় থাকা হৃদয়কে। ৮৫ বলে ৮ চার ২ ছক্কায় ৯২ রানের ইনিংস খেলে ফিরেন অভিষিক্ত এই তরুণ।
শেষ পর্যন্ত ৮ উইকেটে ৩৩৮ রান তোলে বাংলাদেশ। ওয়ানডেতে এই টাইগারদের সর্বোচ্চ সংগ্রহ। এর আগের সর্বোচ্চ ছিল ৮ উইকেটে ৩৩৩ রান। ২০১৯ বিশ্বকাপে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে এই রান করেছিল বাংলাদেশ। রান তাড়ায় জিততে হলে নিজেদের রেকর্ড ভাঙতে হতো আয়ারল্যান্ডকে। এর আগে ২০২০ সালে সর্বোচ্চ ৩২৯ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ডকে হারিয়েছিল তারা। কিন্তু আজ আর সেটি হয় নি। তামিম ইকবালের দল রেকর্ড গড়া জয়ে সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে গেলো। আগামী সোমবার সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডে হবে একই ভেন্যু, একই সময়ে।
এসএনপিস্পোর্টসটোয়েন্টিফোরডটকম/নিপ্র/১১০
Discussion about this post