নিজস্ব প্রতিবেদক:: স্বাগতিক ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে টি-২০ সিরিজ হারলো বাংলাদেশ। সিরিজের শেষ ম্যাচটিতে বাংলাদেশের ব্যাটাররা ৪৩ বলে নিতে পারেননি কোনো রান। বাকী ৭৭ বলে নিয়েছেন ১৬৩ রান। জবাবে উইন্ডিজের ব্যাটাররা রান আদায় করেছেন ৭২ বল থেকে নিয়েছেন ১৬৯ রান। ১০ বল হাতে রেখেই ৫ উইকেটে ম্যাচ জিতেছে স্বাগতিকরা। রান নিতে পারেননি ৩৮ বল থেকে।
বাংলাদেশ বোলিং ব্যর্থতায় হারলেও ব্যাটারদের দায়ও অনেক। উইন্ডিজের ব্যাটাররা চার-ছক্কা হাঁকিয়েছেন ২০টি। তাতে চার ছিলো ৯টি আর ছক্কা ছিলো ১১টি। বাউন্ডারি থেকে ৩৬ রান নেওয়া দলটি ছক্কা হাঁকিয়ে তুলেছে ৬৬ রান। বিপরীতে আগে ব্যাট করে বাংলাদেশের ব্যাটাররা ছক্কা হাঁকিয়েছে প্রতিপক্ষের চেয়ে অর্ধেক কম। টাইগারদের ইনিংসে চার-ছক্কা ছিলো ১৬টি। তাতে ৪ ছিলো ১১টি। ৪৪ রান এসেছে বাউন্ডারি থেকে। ছক্কা ছিলো মাত্র ৫টি। সেখান থেকে এসেছে মাত্র ৩০ রান।
প্রতিপক্ষের চেয়ে ছয়টি ছক্কা কম হয়েছে বাংলাদেশের ইনিংসে। অথচ টি-২০ খেলাটাই চার-ছক্কার। যে দল যত বেশি বাউন্ডারি হাঁকাতে পারবেত, তাদের জয়ের সম্ভাবনাই ততবেশি। পাওয়ার হিটিংয়ে সব সময়ই ব্যর্থ হয়ে আসছে টাইগাররা। উইন্ডিজদের বিপক্ষে টি-২০ সিরিজও তার ব্যতিক্রম হয়নি। তিন ম্যাচের সিরিজ ২-০ ব্যবধানে হরেছে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের দল।
সিরিজের প্রথম ম্যাচটি বৃষ্টিতে ভেসে যায়। পরের দুই ম্যাচে দাপুটে জয়ে টেস্টের পর টি-২০ সিরিজেও বাংলাদেশকে ২-০ ব্যবধানেই হারালো নিকোলাস পুরানের দল। সিরিজের শেষ ম্যাচটিতে সফরকারী বাংলাদেশকে ৫ উইকেটের ব্যবধানে হারিয়েছে ক্যারিবিয়ানরা। কাইল ময়ার্স আর অধিনায়ক নিকোলাস পুরানের ঝড়ো ব্যাটিংয়ে বাংলাদেশের দেওয়া ১৬৪ রানের লক্ষ্যে সহজেই টপকে গেছে দলটি।
টার্গেটে ব্যাট করতে নামা স্বাগতিকদের শুরুটা অবশ্য ভাল হয়নি। দারুণ শুরু করেন বাংলাদেশের দুই বোলার নাসুম ও মাহদী। ইনিংসের চতুর্থ ওভারেই দুই উইকেট হারিয়ে ফেলে স্বাগতিকরা। প্রথম ওভারের শেষ বলেই নাসুম ফিরিয়ে দেন মাত্র ৭ রান করা স্বাগতিক ওপেনার ব্রেন্ডন কিংকে। দলীয় ৯ রানে প্রথম উইকেট হারায় দলটি। ইনিংসের চতুর্থ ওভারের দ্বিতীয় বলেই মেহদীর শিকারে সাজঘরে ফিরেন ১২ রান ব্রুকস।
এরপরই উইকেটে আঘাত হানেন সাকিব আল হাসান। ইনিংসের সপ্তম ওভারের প্রথম বলেই তৃতীয় উইকেট হারায় ক্যারিবিয়ানরা। দলীয় ৪৩ রানেই তৃতীয় উইকেটে সাজঘরে ফিরেন ওডেন স্মিথ। মাত্র ২ রান করতে পারেন তিনি। এরপরই চতুর্থ উইকেটে ম্যাচ ঘুরিয়ে দেন অধিনায়ক নিকোলাস পুরান ও কাইল মায়ার্স। দু’জনের দারুণ জুটি থেকে ৮৫ রান তুলে দলটি।১৫তম ওভারে যখন চতুর্থ উইকেট হারায় দলটি, ততোক্ষণে দলকে নিরাপদে নিয়ে যায় এই জুটি।
১৫তম ওভারের চতুর্থ বলে দলীয় ১২৮ রানে দুর্দান্ত ফিফটি হাঁকানো কাইয় মায়ার্সকে ফেরান নাসুম। পাঁচটি ছক্কা ও দু’টি চারে মাত্র ৩৮ বলে ৫৫ রান করেন তিনি। আর নিকোলাস পুরান শেষ পর্যন্ত ৭৪ রানে অপরাজিত থাকেন ম্যাচজয়ী ইনিংস খেলে। পাঁচটি করে চার ও ছক্কায় মাত্র ৩৯ বলে ৭৪ রান করে দলকে জেতান তিনি।
বাংলাদেশের হয়ে নাসুম ২টি, সাকিব, মেহদী ও আফিফ ১টি করে উইকেট লাভ করেন।
এর আগে টস জিতে ব্যাট করতে নামা বাংলাদেশ ৫ উইকেটে ১৬৩ রানের পূঁজি পেয়েছে মূলত লিটন, আফিফ আর রিয়াদের ছোট্ট একটি ইনিংসে ভর করে। লিটন এক রানের জন্য হাফ সেঞ্চুরির আক্ষেপ নিয়ে ফিরলেও আফিফ হাফ সেঞ্চুরি করেই ফিরেছেন রানআউটের শিকারে। সিরিজ জয়ের জন্য ১৬৪ রান করতে হতো স্বাগতিকদের।
ব্যাটিংয়ে শুরুটা মোটেও ভাল হয়নি বাংলাদেশে। এনামুল হক বিজয় ও সাকিব দ্রুত গেলে ফিরে গেলে লিটন দাস ও আফিফ হোসেন ধ্রুবর’র তৃতীয় উইকেট জুটিতে কিছুটা ঘুরে দাঁড়ায় বাংলাদেশ। দুর্দান্ত ব্যাট করা লিটন দাস ফিরেছেন মাত্র এক রানের আক্ষেপ নিয়ে। ব্যক্তিগত ৪৯ রানে সাজ ঘরে ফেরায় ফিফটি হয়নি তার।
ব্যাটিংয়ে নামা বাংলাদেশ শুরুতেই হারায় ওপেনার বিজয়কে। লিটনকে নিয়ে সাজঘরে ফেরার আগে তিনি ৩৫ রানের জুটি গড়েন উদ্বোধনী ইনিংসে। পঞ্চম ওভারের তৃতীয় বলে ব্যক্তিগত ১০ রানে সাজঘরে ফিরেন এই ওপেনার। তার বিদায়ের পর উইকেটে আসা সাকিবও ফিরেন দ্রুত। দলীয় ৪২ রানে দ্বিতীয় উইকেট হারায় টাইগাররা। ব্যক্তিগত ৫৪ রানে সাজঘরে ফিরেন এই অলরাউন্ডার।
দ্রুত দুই উইকেট হারানো দলকে থেকে বিপর্যয়ের হাত থেকে রক্ষা করেন লিটন ও আফিফ। তৃতীয় উইকেটে দু’জনে মিলে ৫৭ রানের জুটি গড়েন ৪৪ বলে। এরপরই লিটন ফিরেন সাজ ঘরে। দলীয় ৯৯ রানে তৃতীয় উইকেট হারায় বাংলাদেশ। এই ওপেনার ১৩তম ওভারের পঞ্চম বলে প্যাভেলিয়নে ফেরার আগে তিন চার ও দুই ছক্কায় ৪১ বলে ৪৯ রান করেন।
চতুর্থ উইকেটে রিয়াদকে নিয়ে আফিফ গড়েন আরেকটি দায়িত্বশীল জুটি। ৩৫ বলে ৪৯ রান তুলে এই দুই ব্যাটের বিপর্যয় ঠেকানো ইনিংসটি। এরপরই সাজঘরে ফিরেন অধিনায়ক রিয়াদ। ইনিংসের ১৯তম ওভারের তৃতীয় বলে ব্যক্তিগত ২২ রানে এলবিডাব্লিউ’র ফাঁদে পড়েন বাংলাদেশ অধিনায়ক। রিভিউ নিয়ে বাঁচতে পারেননি তিনি। ২০ বলের ইনিংসে দুটি চার ও একটি ছক্কা হাঁকিয়েছেন তিনি। তার বিদায়ের পর দ্রুতই ফিরেন আফিফও। দলীয় ১৫০ রানে ১৯তম ওভারের পঞ্চম বলে রানআউটের শিকার হন তিনি। এক রানে ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় হাফ সেঞ্চুরি করা এই তরুণ দ্বিতীয় রান নিতে গিয়েই রানআউট হয়ে যান। মোসাদ্দেকের অপরাজিত ১০ আর সোহানের অপরাজিত ২ রানে শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশ ২০ ওভারে ১৬৩ রান তুলতে সমর্থ হয়।
স্বাগতিকদের হয়ে হ্যাডেন ওয়ালশ ২টি, ওডেন স্মিথ ও শেফার্ড রোমারিও ১টি করে উইকেট লাভ করেন।
এসএনপিস্পোর্টসটোয়েন্টিফোরডটকম/নিপ্র/ডেস্ক/০০