নিজস্ব প্রতিবেদকঃ অবশেষে বাংলাদেশের উইকেট তুলে নিতে সক্ষম হয়েছে আফগানিস্তান দল। দ্বিতীয় উইকেটে বাংলাদেশের গড়া দুর্দান্ত জুটি ভাঙতে পেরেছে সফরকারীরা। ২১২ রানের সেই জুটি ভেঙেছে মাহমুদুল হাসান জয়ের বিদায়ে। ৭৬ রান করে রহমত শাহ’র শিকারে পরিণত হয়েছেন জয়। ২১৮ রানে দ্বিতীয় উইকেটের পতন ঘটেছে টাইগারদের।
৪৫তম ওভারের প্রথম বলে স্লিপে ইব্রাহিম জাদরানের হাতে ক্যাচ তুলে দিয়ে প্যাভিলিয়নের পথ ধরেন জয়। যখন যাচ্ছিলেন উইকেটে, তখন তার নামের পাশে ১৪৭ বলে ৯ বাউন্ডারিতে ৭৬ রানের ইনিংসে। জয়ের আউটের খানিক পরই চা-বিরতির ঘোষণা দেওয়া হয়।
চা-বিরতির আগ পর্যন্ত বাংলাদেশের সবশেষ সংগ্রহ ৪৯ ওভারে ২ উইকেট হারিয়ে ২৩৫ রান। সেঞ্চুরি হাঁকানো নাজমুল হোসেন শান্ত ১৫১ বলে ২১ বাউন্ডারি ও ১ ছক্কায় ১২৬ ও সদ্য উইকেটে আসা মুমিনুল হক ১টি করে চার ও ছয়ের মারে ১১ রান করে অপরাজিত আছেন।
এর আগে আফগানিস্তানের বিপক্ষে টস হেরে ব্যাট করতে নেমে নিজেদের প্রথম ইনিংসের একেবারে শুরুতেই ধাক্কা খায় বাংলাদেশ। ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারের একেবারে প্রথম বলেই সাজঘরের ফিরেন ওপেনার জাকির হাসান। মিরপুরের হোম অব ক্রিকেটে সবুজ ঘাসের উইকেটে খেলতে নেমে দলীয় ৬ রানেই প্রথম উইকেট হারিয়ে ফেলে বাংলাদেশ।
স্বাগতিক ব্যাটারকে উইকেটের পেছনে থাকা আফসর জাজাইয়ের হাতে তালুবন্দি করে প্যাভিলিয়নে ফেরান নিজাত মাসুদ। ২ বলে মাত্র ১ রান করেই ড্রেসিং রুমে ফিরে যান জাকির। নিজের টেস্ট অভিষেকের একেবারে প্রথম বলেই উইকেট তুলে নিয়ে রেকর্ড গড়েন পেসার নিজাত মাসুদ। টেস্ট অভিষেকে একেবারে প্রথম বলেই উইকেট তুলা প্রথম আফগান বোলার নিজাত।
এর পরের গল্পটা শুধুই বাংলাদেশের। জয়কে নিয়ে ইনিংস গড়ার কাজে নামেন টপ অর্ডার ব্যাটার নাজমুল হোসেন শান্ত। দুজনে মিলে অসাধারণ জুটিতে পার করে দেন মধ্যাহ্ন বিরতি। ওয়ানডে স্টাইলের ব্যাটিংয়ে ২৪ ওভারে ১ উইকেট হারিয়ে ১১৬ রান নিয়ে মধ্যাহ্ন বিরতিতে যায় বাংলাদেশ দল।
উইকেটে সেট হওয়ার পর ব্যাটিং তুলনামূলক সহজ হয়ে পড়ে জয় ও শান্তর জন্য। আফগানদের অনভিজ্ঞ বোলিং লাইনআপও অবশ্য খুব একটা চ্যালেঞ্জ জানাতে পারছে না টাইগারদের। প্রথম সেশনটা তাই নিজেদের করে নেয় স্বাগতিকরা। প্রথম সেশনের পর দ্বিতীয় সেশনেও দারুণ ব্যাট করে বাংলাদেশ দল। একই জুটি রান তুলে যায় দ্রুত গতিতে। যার ধারাবাহিকতায় জয় নিজের ফিফটি তুলে নেন। টেস্ট মেজাজের ব্যাটিংয়ে ১০২ বলে নিজের ফিফটি পূরণ করেন তামিমের পরিবর্তে একাদশে সুযোগ পাওয়া এই তরুণ।
তবে নিজের টেস্ট ক্যারিয়ারের তৃতীয় ফিফটি পূরণ করেছেন দারুণ এক মজার ঘটনা দিয়ে। আফগানিস্তানের স্পিনার জহির খানের করা ম্যাচের ৩৫তম ওভারের এক বল থেকে ৫ রান নিয়ে ফিফটি পার করেন জয়। মূলত ওভার থ্রো’য়ের কারণে অতিরিক্ত রান নিতে পারেন তিনি। সবগুলো রানই দৌড়ে নেন।
জয়ের ফিফটি পূরণের কিছুক্ষণ পরই নিজের সেঞ্চুরি তুলে নেন শান্ত। ক্যারিয়ারে দারুণ সময় পার করা শান্ত ফর্ম ধরে রেখেছেন আফগানিস্তানের বিপক্ষেও। একমাত্র টেস্টে দারুণ ব্যাটিংয়ে আফগান বোলারদের পাত্তা না দিয়েই ওয়ানডে স্টাইলে তুলে নিয়েছেন সেঞ্চুরি। মাত্র ১১৮ বলে নিজের টেস্ট ক্যারিয়ারের তৃতীয় সেঞ্চুরি পূরণ করেন শান্ত। আর এই সেঞ্চুরি পূরণ করতে গিয়ে হাঁকিয়েছেন ১৮টি বাউন্ডারি। মিরপুরের হোম অব ক্রিকেটে বাংলাদেশি ব্যাটারদের মধ্যে টেস্টে দ্বিতীয় দ্রুততম সেঞ্চুরি এটি।
৩৮তম ওভারের দ্বিতীয় বলেই তিন অঙ্কের রানের খাতা স্পর্শ করেন তিনি। আফগান বোলারদের সামনে আক্রমণাত্বক ব্যাটিং করেছেন শান্ত। সফরকারীদের চ্যালেঞ্জকে গুঁড়িয়ে দিয়েছেন জয়ের সাথে অসাধারণ এক জুটি করে। যদিও সেঞ্চুরির পথে থাকায় শেষ দিকে কিছুটা ধীর গতির ব্যাটিং করেছেন।
শান্ত ও জয়ের জুটিতে রান বাড়িয়েই যাচ্ছিল বাংলাদেশ দল। ১৪তম বারের মতো বাংলাদেশের কোনো জুটি দুইশ পার করে। এছাড়া দ্বিতীয় উইকেটে তৃতীয়বারের মতো জুটি দুইশ রানের কোটা পার করে। তবে শেষ পর্যন্ত সেই জুটি ভেঙেছে জয়ের বিদায়ে। তবুও বাংলাদেশের রান রেট দারুণ। চা বিরতির আগ পর্যন্ত বাংলাদেশের রান রেট ওভার প্রতি ৪.৭৯। মধ্যাহ্ন বিরতির আগে যা ছিল ৪.৮৩। এবার শান্ত ও মুমিনুল হকের জুটি কতদূর নিতে পারে বাংলাদেশকে, সেটির দিকেই নজর সবার।
এসএনপিস্পোর্টসটোয়েন্টিফোরডকম/নিপ্র/সা
Discussion about this post