স্পোর্টস ডেস্ক:: পরপ দুই বলে চেন্নাইয়ের অধিনায়ক ধোনী ও রাইডু ফিরিয়ে ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ যেনো গুজরাটের হাতে নিলেন মোহিত শর্মা। শেষ ওভারে ১৩ রানের সমীকরণ যেখানে মিলে যাওয়া ছিলো ‘মিরাকেল’ সেটাই করলেন রবীন্দ্র জাদেজা। জাদেজার জাদুতেই চ্যাম্পিয়ন হলো চেন্নাই সুপার কিংস।
শেষ ওভারে ১৩ রানের সমীকরণ মিলিয়েছেন, আরো পরিস্কার করে ফেললে শেষ দুই বলে ১০ রানের সমীকরণ মিলিয়েছেন ছক্কা আর চারে। তাতেই শিরোপা ধোনীর হাতে। ১৫ ওভারে ১৭১ রানের টার্গেটে খেলতে নামা চেন্নাই জিতেছে শেষ দুই বলের খেলায়। ইনিংসের শেষ দুই বলে জয়ের জন্য ১০ রান দলটির। ওভারের পঞ্চম বলে মোহিকে ছক্কা হাঁকিয়ে রবীন্দ্র জাদেজা ব্যাটের জাদুতে শেষ বলে ৪ রানের সমীকারণও মেলান।
রোমাঞ্চকর, শ্বাসরুদ্ধকর এক ফাইনাল শেষে চ্যাম্পিয়ন মহেন্দ্র সিং ধোনীর চেন্নাই সুপার কিংস। ভারতের ক্যাপ্টেনকুল খ্যাত এই তারকার সম্ভাব্য আইপিএলের শেষ ম্যাচ। তিন দিনে গড়ানো ফাইনাল ৫ উইকেটে জিতে শিরোপা হাতে নিলেন ধোনীই।
আহমেদাবাদে আগে ব্যাট করা গুজরাট টাইটান্স ২১৪ রান তুলেছিলো মাত্র ৪ উইকেট হারিয়ে। চেন্নাই ইনিংসে বাগড়া দেয় বৃষ্টি। আম্পায়াররা তাই ডিএল মেথডে ধোনীর দলের লক্ষ্য টিক করেন ১৫ ওভারে ১৭১ রান। রোমাঞ্চকর ফাইনালে সেই রান টপকে চ্যাম্পিয়ন চেন্নাই।
বড় লক্ষ্যে খেলতে নামা দলটি দুই ওপেনারের ব্যাটেই পায় ভিত্তি। ঋতরুঝ গায়কোয়াদ ও ডেভন কনওয়ে উদ্বোধনী জুটিতে তুলে নেন ৭৪ রান। ৬.৩ বল স্থায়ীত্বের এই উদ্বোধনী জুটিতেই বড় টার্গেট টপকানোর সাহস পায় দলটি। তিন চার ও এক ছয়ে ১৬ বলে ২৬ রান করে গায়কোয়াদ বিদায় নিলেও লক্ষ্যে অবিচল থাকে চেন্নাই।
চার চার ও দুই ছয়ে ২৫ বলে ৪৭ রান করেন কনওয়ে। গায়কোয়াদের বিদায়ের পর উইকেটে নামা শিবাম দুবে দলের জয় নিশ্চিত করেই মাঠ ছাড়েন। দুই ছক্কায় ২১ বলে ৩২ রানের ঠান্ডা মাথার ইনিংস খেলেন তিনি। দু’টি করে চার ও ছক্কায় ১৩ বলে ২৭ রানের কার্যকরী ইনিংস খেলেন অজিস্কা রাহানেও। বিশাল দুই ছয় আর এক চারে ৮ বলে ১৯ রান করা রাইডুর বিদায়ের পরেই বলেই মোহিত শর্মা শুন্য রানে ধোনীকে ফিরিয়ে কিছুটা শঙ্কা ধরান। তবে ৬ বলে ১৫ রান করা জাদেজা ওভারের শেষ দুই বলের বাউন্ডারিতে সব হিসেব মিলিয়ে দেন। ৫ উইকেট হাতে রেখেই চ্যাম্পিয়ন চেন্নাই।
গুজরাটের হয়ে মোহিত শর্মা ৩টি ও নূর আহমদ ২টি উইকেট লাভ করেন।
আগে ব্যাট করে নির্ধারিত ২০ ওভারে ৪ উইকেট হারিয়ে ২১৪ রান সংগ্রহ করে সাবেক চ্যাম্পিয়নরা। যা কিনা আইপিএলের ফাইনালের ইতিহাসে সর্বোচ্চ সংগ্রহের রেকর্ড। এই ম্যাচে ব্যাট হাতে তাণ্ডব ছড়িয়েছেন সাই সুদর্শন। টপ অর্ডারে নেমে ৯৬ রানের বিস্ফোরক ইনিংস খেলেছেন। অল্পের জন্য মিস করেছেন সেঞ্চুরি। এছাড়া ফিফটি হাঁকিয়েছেন ঋদ্ধিমান সাহা। বড় ইনিংস খেলতে না পারলেও, ঝড়ো ইনিংস খেলেছেন শুভমান গিল ও অধিনায়ক হার্দিক পান্ডিয়া।
আহমেদাবাদের নরেন্দ্র মোদি স্টেডিয়ামে টস হেরে ব্যাট করতে নেমে বরাবরের মতো এই ম্যাচেও ঝড়ো শুরু গুজরাটের। ৭ ওভার স্থায়ী উদ্বোধনী জুটি থেকে আসে ৬৭ রান। দারুণ ব্যাট করতে থাকা শুভমান গিলকে জাদেজার বলে দুর্দান্ত স্টাম্পিংয়ে প্যাভিলিয়নে ফেরান মহেন্দ্র সিং ধোনি। ইনফর্ম ব্যাটার শুভমান ২০ বলে ৭ বাউন্ডারিতে ৩৯ রানের ইনিংস খেলেন।
এরপর সুদর্শনের সাথে জুটি গড়ে তুলেন আরেক ওপেনার ঋদ্ধিমান সাহা। এই দুজনের ৪২ বলের জুটি থেকে আসে ৬৪ রান। ফিফটি হাঁকিয়ে ঋদ্ধিমান ফিরলে সেই জুটি ভাঙে। তবে আউট হওয়ার আগে ৩৯ বলে ৫ বাউন্ডারি ও ১ ছক্কায় ৫৪ রানের দারুণ ইনিংস খেলে যান তিনি।
পরবর্তীতে হার্দিককে সাথে নিয়ে ইনিংস এগিয়ে নিয়ে যেতে থাকেন সুদর্শন। শুরুর দিকে তুলনামূলক ধীর-স্থির হয়ে খেললেও, শেষ দিকে এসে ব্যাট হাতে নিজের আসল রূপ দেখাতে থাকেন। একের পর এক ছয় আর চারে জমিয়ে তুলেন ম্যাচ। ফিফটি পুরণ করে ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরির পথে বেশ ভালোভাবেই এগোচ্ছিলেন। তবে সেটি আর হয়নি। ইনিংসের একেবারে শেষ ওভারে এলবিডব্লিউতে আউট হয়ে স্বপ্নভঙ্গ হয়। কাছে গিয়েও ৯৬ রানে ফিরতে হয়ে প্যাভিলিয়নে। তার ৪৭ বলের ইনিংসটি সাজানো ছিল ৮ চার ও ৬ ছক্কার মারে সাজানো।
হার্দিকের সাথে ৩৩ বলের ৮১ রানের জুটি ভেঙে ফিরলে উইকেটে আসেন দলের সহ-অধিনায়ক রশিদ খান। তবে কিছু করতে পারেননি। দুই বল খেলে ডাক মেরে আউট হন। যদিও ইনিংসের শেষ বলে উড়িয়ে মারতে গিয়ে বাউন্ডারি লাইনে ধরা পড়েন। তবে অপরপ্রান্তে ১২ বলে ২ ছক্কায় ২১ রানের ক্যামিও খেলে অপরাজিত থাকেন অধিনায়ক হার্দিক পান্ডিয়া।
চেন্নাইয়ের হয়ে সব বোলারই খরুচে ছিলেন এদিন। ৯’র ওপর করে রান দিয়েছেন। এর মধ্যে মাথিশা পাথিরানা ২ উইকেট শিকার করেছেন। জাদেজা ও দীপক চাহারের লাভ ১টি করে উইকেট।
এসএনপিস্পোর্টসটোয়েন্টিফোরডটকম/নিপ্র/ডেস্ক/০০
Discussion about this post