স্পোর্টস ডেস্ক:: নিরাপদেই বাংলাদেশ ছেড়ে ছিলেন সাবেক কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহে। অথচ এবার তিনি বিদেশী গণমাধ্যমের কাছে দাবি করলেন, ঢাকায় তার জীবন শঙ্কায় ছিলো। মধ্যরাতে বাংলাদেশ ছাড়ার আগে বিমানবন্দরে তিনি গ্রেফতারের ভয়ে ছিলেন। গত বছরের শেষ দিকে চাকরিচ্যুত হওয়া আলোচিত সমালোচিত টাইগারদের সাবেক কোচ একটি অস্ট্রেলিয়ান গণমাধ্যমকে এমন দাবি করে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন।
বিসিবির সাবেক সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে দ্বিতীয়বার বাংলাদেশের কোচ করে আনেন হাথুরুসিংহেকে। প্রায় ছয় বছর বাংলাদেশ দলের কোচ ছিলেন তিনি। শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর নাজমুল হাসান পাপনও দেশ ত্যাগ করেন। নতুন সভাপতি ফারুক আহমদ নাসুমকে লাঞ্চিত করাসহ চুক্তির শর্ত লঙ্গণের অভিযোগে হাথুরুসিংহেকে চাকরিচ্যুত করেন।
গত বছরের অক্টোবরে হাথুরুর সঙ্গে চুক্তি বাতিল করে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড। যদিও ক্রিকেট বোর্ডসহ দেশের অনেকেই হাথুরুসিংহেকে রাখার পক্ষে ছিলেন। কখনো বাংলাদেশে অনিরাপদ ছিলেন না তিনি। অথচ এখন দাবি করছেন তার নাকি জীবনের ঝুঁকি ছিলো।অস্ট্রেলিয়ার সংবাদমাধ্যম ‘কোড স্পোর্টস’কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বাংলাদেশ দলের সাবেক কোচ এই কোচ এমন দাবি করেছেন।
ঢাকায় ভয় পেয়ে ছিলেন জানিয়ে হাথুরুসিংহে সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘আমার উদ্দেশে বাংলাদেশের সিইওর (বিসিবির প্রধান নির্বাহী নিজাম উদ্দিন চৌধুরী) শেষ কথাটি ছিল, আমার চলে যাওয়া উচিত। এ ব্যাপারে বোর্ডের কাউকে কিছু বলার দরকার নেই। “আপনার কাছে কি (বিমানের) টিকিট আছে?” এটা আমার কাছে একটা সতর্কীকরণ সংকেত মনে হলো। তখনই আমি একটু ভয় পেয়ে গেলাম। সাধারণত সেই দেশে (বাংলাদেশে) ভ্রমণের সময় আমি একজন গাড়িচালক এবং একজন বন্দুকধারী পেতাম। সেদিন তিনি বললেন, “আপনার সঙ্গে কি আজ বন্দুকধারী এবং গাড়িচালক আছেন?” আমি বললাম, না, আমার সঙ্গে শুধু গাড়িচালক আছেন।’
ব্যাংকে গিয়ে অনিরাপদ ছিলেন জানিয়ে হাথুরুসিংহে বলেন, ‘আমি সোজা ব্যাংকে গেলাম, বাংলাদেশ ছাড়ার জন্য টাকা জোগাড় করার চেষ্টা করছিলাম। আমি যখন ব্যাংকে ছিলাম, তখন টিভিতে একটি ব্রেকিং নিউজ এল— “চন্ডিকা চাকরিচ্যুত, একজন খেলোয়াড়কে (নাসুম আহমেদ) লাঞ্ছিত করেছেন”। এটা দেখে ব্যাংকের ব্যবস্থাপক বললেন, “কোচ, আমি আপনার সঙ্গে যাব। মানুষ আপনাকে রাস্তায় দেখে ফেললে সেটা আপনার জন্য নিরাপদ হবে না।”’
একটি টুপি ও হুডি পরে ঢাকা ছাড়েন জানিয়ে সাক্ষাৎকারে হাথুরুসিংহে বলেন, ‘এবার আমি আতঙ্কিত হয়ে পড়লাম। কারণ, আমাকে বাংলাদেশ থেকে বের হতে হবে। আমার এক বন্ধু আমাকে বিমানবন্দরে নিয়ে গিয়েছিলেন। আমি একটি টুপি ও হুডি পরে ছিলাম, কোনো ধরনের সুরক্ষা ছিল না। সিঙ্গাপুর এয়ারলাইনসের মধ্যরাতের ফ্লাইটে আমি বাংলাদেশ ছেড়েছিলাম।’
বিমানবন্দরে তাকে গ্রেফতার করা হতে পারে এমন শঙ্কায় ছিলেন জানিয়ে হাথুরুসিংহে বলেন, ‘বাংলাদেশ ছেড়ে পালানোর চেষ্টা করার জন্য তারা (আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী) আমাকে বিমানবন্দরে গ্রেপ্তার করতে পারত। সেখানে এমনও ঘটেছে যে আগের সরকারের একজন মন্ত্রী দেশ ছেড়ে পালানোর চেষ্টা করলে রানওয়েতে বিমানটি থামানো হয়েছিল এবং তারা তাঁকে বিমান থেকে বের করে আনে। আমার মনে তখন এসবই ঘুরপাক খাচ্ছিল। তারপর প্রবেশপথে এক্স-রে মেশিনের সামনে বিমানবাহিনীর এক কর্মকর্তা আমাকে বলেন, “আমি দুঃখিত কোচ, আপনি চলে যাচ্ছেন বলে আমি খুব দুঃখিত।” তিনি আমাকে আরও বলেছিলেন, আমি তাঁদের দেশের জন্য কিছু করেছি। তাঁর কথা শুনে আমি আবেগপ্রবণ হয়ে পড়ি। তবে আমি আমার জীবন নিয়ে ভীত ছিলাম।’
এসএনপিস্পোর্টসটোয়েন্টিফোরডটকম/নিপ্র/ডেস্ক/০০