স্পোর্টস ডেস্ক:: বাফুফের সভাপতি কাজী সালাউদ্দিনের অনুরোধও টিকেনি সাফ জয়ী কোচ গোলাম রব্বানী ছোটনের কাছে। ফেডারেশনের সর্বোচ্চকর্তা সিদ্ধান্ত বদলাতে অনুরোধ করেছিলেন নারী দলের প্রধান কোচের কাছে।
দফায় দফায় ফেডারেশন সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন, নারী বিভাগের চেয়ারম্যান মাহফুজা আক্তার কিরণ ছোটনকে দায়িত্বে ফিরতে অুনরোধ করেছিলেন। সুযোগ-সুবিধা বাড়ানোরও আশ্বাস দিয়ে ছিলেন। তবে এই কোচ তাদের অনুরোধে সায় দেননি। নিজের সিদ্ধান্তের অনড় থেকেছেন তিনি।
সোমবার বাফুফেতে নিজের পদত্যাগপত্র পাঠিয়েছেন তিনি। নিয়ম অনুযায়ী ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদকের দপ্তরে এবং নারী বিভাগের চেয়ারম্যান মাহফুজা আক্তার কিরণের কাছে মেইল করেছেন নিজের পদত্যাগপত্র। বিষয়টি সাংবাদিকদের নিশ্চিত করে গোলাম রব্বানী ছোটন সাংবাদিকদের বলেন, ‘ ‘আমি মেইলে পদত্যাগপত্র পাঠিয়েছি। ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক ও নারী উইংয়ের চেয়ারপারসনের কাছে মেইল দিয়েছি।’
বাংলাদেশ নারী দলের কোচ গোলাম রব্বানী ছোটন। তার হাত ধরেই এসেছে দেশের ফুটবলের সেরা সাফল্য। মেয়েরা জিতেছেন সাফ। বয়স ভিত্তিক টুর্নামেন্টে শিরোপা জেতা যেনো ডালভাত ছিলো বাংলাদেশের মেয়ে ফুটবলারদের কাছে। সেই গোলাম রব্বানী ছোটন ১৭ বছরে সম্পর্ক ছিন্ন করেছেন। বাফুফের চাকরি ছেড়ে দিচ্ছেন।
দেশের ফুটবলাঙ্গণে আলোচিত খবর নারী দলের প্রধান কোচের পদত্যাগ ও সাফজয়ী নারী ফুটবলারদের অবসর গ্রহণ। একাধিক নারী ফুটবলার অবসর নিয়েছেন, ক্যারিয়ারের উড়ন্ত সময়। যখন তারা পারফর্ম করতে শুরু করেছেন, দেশকে একের পর এক ট্রফি এনে দিচ্ছেন, তখনি অবসরের মতো কঠিন সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন। সব শেষ স্বপ্ন অবসরের সিদ্ধান্ত জানিয়েছেন।
কোচ ছোটনকে চাকরি না ছাড়ার অনুরোধ করেছে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন। তবে বাফুফের অনুরোধ প্রত্যাখান করেছেন এই কোচ। বাফুফের নারী বিভাগের চেয়ারম্যান মাহফুজা আক্তার কিরণ ফোন করে সাফল্য পাওয়া এই কোচকে চাকরি না ছাড়ার অনুরোধ করেন। তবে কোচ তার সিদ্ধান্তেই অনড় থেকেছেন।
বাফুফের থেকে যাওয়ার অনুরোধ প্রসঙ্গে সাংবাদিকদেরকে কোচ ছোটন বলেন, ‘ ‘আপা (নারী বিভাগের চেয়ারম্যান কিরণ) আমাকে থাকার জন্য বলেছেন। কিছুক্ষণ আগে আমাকে ফোন করে বাফুফেতে যেতে বলেন। কিন্তু আমি যাইনি। ওনার সঙ্গে ফোনে কথা হয়। আমি আমার সিদ্ধান্ত বদলাব না বলেছি।’
নারী ফুটবলে এই অস্তুুষ্টিতে বেশ বেকায়দায় আছেন বাফুফে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন। হঠাৎ কি কারণে বাফুফের নারী বিভাগে এমন বেহাল অবস্থা, সেটা অবশ্য জানা যায়নি। তবে ফুটবল সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এতে করে অস্তিত্বের সঙ্কটে পড়তে পারেন বাফুফে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন। সাফল্য এনে দেওয় নারী দলের এমন অসন্তোষে অস্তস্তিতে আছেন তিনি।
অলিম্পিকের বাছাইয়ে মেয়েদের পাঠাতে সরকারের কাছে অতিরিক্ত অর্থ দাবি করা, অর্থ না পেয়ে দল না পাঠানোতে এমনিতেই বাফুফের উপল ক্ষুব্ধ ছিলো সরকার। তার ওপর ফিফা দুর্নীতির দায়ে নিষিদ্ধ করে ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক, সভাপতির আস্থাভজন আবু নাঈম সোহাগকে। এরপরই থেকেই সরকারের নানা মহলে ফেডারেশন নিয়ে চলছে আলোচনা-সমালোচনা।
এতো সব খবরের মধ্যে নতুন করে সাফজয়ী নারী ফুটবলারের অবসর এবং কোচের পদত্যাগের বিষয়টি নিয়ে নতুন করে বেকায়দায় পড়তে যাচ্ছেন ফেডারেশন সভাপতি। যাদের হাত ধরে ফুটবলে দারুণ সাফল্য আসছে, বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে) কর্তারা খানিক স্বস্তির নিঃশ্বাস নিতে পারছেন, সেই বিভাগেই এবার ভাঙন।
মাত্র ২২ বছর বয়সে নারী ফুটবল থেকে অবসরের ঘোষণা দিয়েছেন স্ট্রাইকার সিরাত জাহান স্বপ্না। শুক্রবার বিকেলে এক ফেসবুক পোস্টের মাধ্যমে ফুটবল থেকে একেবারে চিরতরে অবসরের যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন তিনি। বৃহস্পতিবার ছুটি নিয়ে ফুটবল ক্যাম্প থেকে রংপুরের বাড়িতে গেছেন। তবে আর ফিরছেন না স্বপ্না।
স্বপ্না গেল বছরে সাফজয়ী দলের সদস্য ছিলেন। টুর্নামেন্টে চারটি গোল করে বাংলাদেশকে চ্যাম্পিয়ন হতে বিশাল অবদান রাখেন। যদিও ইনজুরির কারণে ফাইনাল খেলতে পারেননি। কিন্তু দারুণ প্রতিভাবান এই ফুটবলারকে এবার হারিয়েছে বাফুফে।
স্বপ্নার অবসরের দিনে আরও বড় এক ধাক্কা এসেছে দেশের ফুটবলে। নারী দলগুলোর কোচিং পদ ছাড়ছেন গোলাম রব্বানী ছোটন। দেশের একাধিক গণমাধ্যমে নিজেই বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন তিনি। খুব শীঘ্রই বাফুফের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে পদত্যাগপত্র জমা দিবেন ছোটন। চলতি মাস পর্যন্তই দায়িত্ব পালন করবেন। এরপর আর দেখা যাবে না তাকে।
দেশের নারী ফুটবলের জাগরণ যেভাবে হয়েছে, তার পেছনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল ছোটনের। তিলে তিলে গড়ে তুলেছেন তিনি দলগুলোকে। বয়সভিত্তিক ও জাতীয় নারী দলের ডাগ আউট সামলান। ২০০৬ থেকে কাজ শুরু করেন বাফুফেতে। ২০০৯ সালে প্রথম প্রধান কোচের দায়িত্ব পান। গেল বছরগুলোতে নারীদের বয়সভিত্তিক ও জাতীয় দলের সব সাফল্যই তার অধীনে এসেছে। সবচেয়ে বড় সাফল্য পেয়েছেন সাফ শিরোপা দিয়ে।
তবে এবার সেই যাত্রা থেমে যাচ্ছেন। ৫৪ বছর বয়সী ছোটন স্পষ্ট করে বলেননি কেন চাকরি ছাড়ছেন। স্বপ্নাও জানায়নি কেন অবসরে গেছেন। তবে ফুটবল পাড়ায় জোর গুঞ্জন, বাফুফে থেকে যথাযথ মূল্যায়ন এবং সম্মান না পেয়েই এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তারা। এর আগে সাম্প্রতিক সময়ে নারী ফুটবলে আরও অবসর হয়েছে। সব মিলিয়ে বাফুফে আবারও বেকায়দায় পড়তে যাচ্ছে।
এসএনপিস্পোর্টসটোয়েন্টিফোরডটকম/নিপ্র/ডেস্ক/০০
Discussion about this post