নিজস্ব প্রতিবেদক:: প্রায় ৯ ঘন্টারও বেশি সময় উইকেটে ছিলেন। এরপর তার তৃপ্তি নেই, নেই আনন্দ-উৎসব। আরেকটি সময় উইকেটে থাকার অতৃপ্তি, আরো কয়েকটা মিনিট উইকেটে থাকতে না পারার হতাশা, আরেকটি রান করতে না পারার আক্ষেপ। ১৯৯ রান করেও যে তিনি সুখি নেই, প্রাপ্তির চেয়ে হারানোর বেদনাই বেশি। মাত্র একটি রান করতে পারলেই ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় ‘ডাবল’ সেঞ্চুরি পেয়ে যেতেন লঙ্কান ব্যাটার অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউজ।
স্বাগতিক বাংলাদেশের বিপক্ষে চট্টগ্রাম টেস্টে তিনি আউট হয়েছে ১৯৯ রানে। ডাবল সেঞ্চুরি করতে না পারায় স্বাভাবিকই তিনি হতাশ, বেদনার্ত। এতো রান করেও যে দিন শেষে ওই এক রানের আক্ষেপ বড় হয়ে উঠছে। বাংলাদেশের বিপক্ষে তিনিই একমাত্র ব্যাটার যিনি ১৯৯ রানে আউট হয়েছে।
শুধু এখানেই নয়, আরো এক জায়গায় তিনি একমাত্র প্রথম ক্রিকেটার, যিনি ৯৯ রানে ও ১৯৯ রানে আউট হয়েছে। এর আগে ২০০৯ সালে ভারতের বিপক্ষে মুম্বাই টেস্টে ৯৯ রানে আউট হন ম্যাথিউজ। এবার বাংলাদেশের বিপক্ষে আউট হলেন ১৯৯ রানে। টেস্ট ক্রিকেটের ১৪৫ বছরের ইতিহাসে তিনিই একমাত্র ক্রিকেটার যিনি ৯৯ ও ১৯৯ রানে আউট হলেন।
স্বাগতিক বাংলাদেশের বোলারদের তিনি বেশ ভুগিয়েছেন। লঙ্কানরা প্রথম ইনিংসে ৩৯৭ রান করতে পেরেছে তার ব্যাটে চড়েই। দলীয় রানের অর্ধেক রানই যে এসেছে তার ব্যাট থেকে। ম্যাথিউজকে আউট করে সামন্য উদযাপনও করেছেন বাংলাদেশের ফিল্ডাররা। তবে যতটা না উদযাপন করেছেন, তার বেশি অভিনন্দন জানিয়েছেন দৃষ্টিনন্দন এই ইনিংসের জন্যই।
টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসে ১৯৯ রানে সাজঘরে ফিরে গেছেন ১২ জন। ১৯৯ রানে অপরাজিত থেকেও ‘ডাবল’ সেঞ্চুরির আক্ষেপে পুড়েছে আরো দু’জন। সব মিলিয়ে ১৯৯ রানে আটকে যাওয়া ব্যাটারের সংখ্যা ১৪ জনে। অ্যান্ডি ফ্লাওয়া ও কুমার সাঙ্গাকারা ১৯৯ রানে অপরাজিত ছিলেন। আউট না হয়েও ‘ডাবল’ সেঞ্চুরি করতে না পারার তিক্ত স্বাদ পেয়েছেন এই দু’জনে। অন্য ১২ জন ফিরেছেন আউট হয়ে।
চট্টগ্রাম টেস্টে শ্রীলঙ্কার করা ৩৯৭ রানের জবাবে বাংলাদেশের দুই ওপেনার তামিম ইকবাল ও মাহমুদুল হাসান জয় ব্যাট হাতে দারুণ শুরু করেছেন। লঙ্কান বোলারদের কোনো সুযোগ না দিয়েই টাইগার দুই ওপেনার তুলে নিয়েছেন ৭৬ রান। ১৯ ওভার ব্যাট করেছে বাংলাদেশ। হারায়নি কোনো উইকেট। দিন শেষে তামিম ইকবাল অপরাজিত আছেন ৩৯ রানে। ৫২ বলের দায়িত্বশীল ইনিংসে পাঁচটি বাউন্ডারি হাঁকিয়েছেন। আরেক ওপেনার জয় অপরাজিত আছেন ৩১ রানে। ৬৬ বলের দারুণ এক ইনিংসে তিনিও পাঁচটি বাউন্ডারি হাঁকিয়েছেন। আগামিকাল মঙ্গলবার তৃতীয় দিন সকালে বাংলাদেশের হয়ে আবারো ব্যাট করতে নামবেন এ দুই ওপেনার। টাইগাররা অবশ্য এখনো পিছিয়ে আছে ৩২১ রানে।
লঙ্কান অধিনায়ক দিমুথ করুনারত্মে ১৯ ওভারের মধ্যে চারজন বোলার ব্যবহার করেছেন। তবে কেউ কাঙ্খিত উইকেটের দেখা পাননি। বাংলাদেশের দুই ওপেনার দারুণ ব্যাটিং করেছেন, উইকেট শুন্য রেখেছেন অতিথিদের।
এর আগে সফরকারীদেরকে প্রথম ইনিংসে ৪শ’র আগে থামিয়েছে বাংলাদেশ। আগে ব্যাট করা লঙ্কানরা প্রথম ইনিংসে শেষ পর্যন্ত অলআউট হয়েছে ৩৯৭ রানে। বল হাতে দুর্দান্ত ছিলেন নাঈম হাসান। সাকিব-নাঈমদের বোলিং ঘূর্ণিতে অবশেষে অলআউট হয়েছে শ্রীলঙ্কা।
ম্যাথিউজ একাই টেনে নিচ্ছিলেন লঙ্কানদের। শেষ পর্যন্ত তাঁকে থামিয়েছেন নাঈম হাসান। ১৯৯ রানের ঝলমলে ইনিংসে দারুণ ধৈর্য্যশীলতার পরিচয় দিয়েছেন এই ব্যাটার। লেজের সারির ব্যাটারদেরকে নিয়ে বড় করেছেন নিজের ইনিংস, লম্বা করেছেন দলীয় স্কোর। ভুগিয়েছেন টাইগার বোলারদের। ৩৯৭ বলের টেস্ট মেজাজী ব্যাটিং ইনিংসে ১৯টি চার হাঁকিয়েছেন। ছক্কা মেরেছেন মাত্র একটি।
টস জিতে ব্যাট করতে নামা লঙ্কানদের দ্বিতীয় আরো আগেই আটকানো যেতো। ১১৯ রানে দ্বিতীয়বার জীবন পান ম্যাথিউজ। তার আগেই স্বীকৃত ব্যাটাররা ফিরে যান সাজঘরে। এরপরে তিনি লেজের সারির ব্যাটারদেরকে নিয়েই লড়াই করেছেন। শেষ দুই ব্যাটার বিশ্ব ফার্নান্দো ও অতীশ ফার্নান্দো দারুণ সমর্থন দিয়েছেন ম্যাথিউজকে। ২৭ বলে ১ রান করেছেন অতীশা ফার্নান্দো। বিশ্ব ফার্নন্দো ৮৪ বলে ১৭ রানে শেষ পর্যন্ত অপরাজিতই থেকেছেন। ৬৯ রানে প্রথমবার জীবন পাওয়া ম্যাথিউজ এরপর সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছেন, সেঞ্চুরির পর দ্বিতীয়বার জীবন পেয়ে ‘ডাবল’ সেঞ্চুরি থেকে এক রান দূরে থাকতে থেমেছেন।
১১৯ রানে দ্বিতীয়বার জীবন পান এই লঙ্কান। খালেদের বলটি তার ব্যাট ছুঁয়ে যায় উইকেটরক্ষক লিটনের হাতেই। কিন্তুু ফিল্ডারররা বুঝতেই পারেননি। পরে টিভি রিপ্লেতে দেখা যায়, ম্যাথিউজের ব্যাট ছুঁয়েছে বল। লঙ্কান এই সেঞ্চুরিয়ানকে আটকাতে পারলে সফরকারীদের প্রথশ ইনিংস অনেক আগেই শেষ হয়ে যেতো। কিন্তুু সুযোগ হাতছাড়া করেছে স্বাগতিকরা।
অন্য ব্যাটাররা যাওয়া-আসার মধ্যে থাকলেও দু’বার জীবন পাওয়া সেঞ্চুরিয়ান অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউজ প্রাচীর হয়ে দাঁড়িয়েছেন। একাই টানছেন লঙ্কানদের ব্যাটিং ইনিংসকে। চার নম্বরে নামা এই ব্যাটারের ব্যাটেই লঙ্কান বড় স্কোরের পথে।
ম্যাথিউজ ছাড়া লঙ্কানদের হয়ে কিছুটা প্রতিরোধ গড়ে ছিলেন দিনেশ চান্দিমাল ও কুশল মেন্ডিস। তবে দু’জনে ফিরেছেন হাফ সেঞ্চুরি করে। দুই চার ও তিন ছক্কায় ১৪৮ বলে ৬৬ রান করেছেন চান্দিমাল। তিন চারে ১৩১ বলে ৫৪ রান করেছেন মেন্ডিস। এছাড়া লঙ্কানদের হয়ে আর কোনো ব্যাটার তীতু হতে পারেননি উইকেটে।
বাংলাদেশের হয়ে নাঈম হাসান ৩০ ওভারে ৪ মেডেনে ১০৫ রানে ৬টি, সাকিব ৩৯ ওভারে ১২ মেডেনে ৬০ রানে ৩টি ও তাইজুল ৪৮ ওভারে ১০৭ রানে ১টি উইকেট লাভ করেছেন।
এসএনপিস্পোর্টসটোয়েন্টিফোরডটকম/নিপ্র/০০