নিজস্ব প্রতিবেদকঃ অবশেষে নিজেদের দ্বিতীয় ইনিংস ঘোষণা করলো বাংলাদেশ দল। আফগানিস্তানের বিপক্ষে ৮০ ওভার ব্যাট করে ৪ উইকেটের বিনিমিয়ে ৪২৫ রানে ইনিংস ঘোষণা করেছেন টাইগার অধিনায়ক লিটন কুমার দাস। সব মিলিয়ে লিড দাঁড়িয়েছে ৬৬১ রান। যা কিনা বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসের সর্বোচ্চ।
এই লিডে আফগানদের বিশাল রানের লক্ষ্য ছুঁড়ে দিয়েছে স্বাগতিকরা। মিরপুর টেস্ট জিততে হলে আফগানিস্তানকে করতে হবে এখন ৬৬২ রান। এতে করে নতুন ইতিহাস গড়তে হবে সফরকারীদের। কেননা পাঁচ দিনের টেস্ট ক্রিকেট ইতিহাসে এই প্রথম কোনো প্রতিপক্ষকে ৬৬২ রানের লক্ষ্য ছুড়ে দিয়েছে কোনো দল। এর আগে এই রেকর্ড ছিল শ্রীলঙ্কার। প্রতিপক্ষকে ৬৬০ রানের লক্ষ্য দিয়েছিল দলটি।
এবার এই বিশ্ব রেকর্ড বাংলাদেশের দখলে চলে এসেছে। এছাড়া বাংলাদেশ নিজেদের ক্রিকেট ইতিহাসে এর আগে জিম্বাবুয়েকে সর্বোচ্চ ৪৭৭ রানের লক্ষ্য দিয়েছিল। ২০২১ সালে হারারেতে দিয়েছিল সেই লক্ষ্য। সেটিকে ছাড়িয়ে এবার নতুন কীর্তি টাইগারদের।
মিরপুরের হোম অব ক্রিকেটে আগের দিনের করা নিজেদের দ্বিতীয় ইনিংসে ১ উইকেটে ১৩৪ রান করে তৃতীয় দিন শুরু করে বাংলাদেশ। স্বাগতিকরা নিজেদের দ্বিতীয় উইকেট হারায় দলীয় ১৯১ রানের মাথায়। জাকির হাসানের সাথে নাজমুল হোসেন শান্তর দুর্দান্ত ১৭৩ রানের জুটি ভাঙে জাকিরের বিদায়ে।
ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় সেঞ্চুরি না পাওয়ার আক্ষেপ নিয়ে মাঠ ছাড়তে হয়ে ওপেনার জাকিরকে। থার্ডম্যানে বল টেলে তিন রান নিতে চেয়েছিলেন তিনি। ইব্রাহিম জাদরানের করা দারুণ থ্রো উইকেটকিপার আফসার জাজাইয়ের কাছে পৌঁছেছে, জাকির ক্রিজের বেশ বাইরেই তখন। ৯৫ বলে ৮ চারে ৭১ রান করেন জাকির।
জাকির না পারলেও অবশ্য সেঞ্চুরি তুলে নেন শান্ত। প্রথম ইনিংসের পর দ্বিতীয় ইনিংসেও দুর্দান্ত সেঞ্চুরি তুলে নেন শান্ত। দ্বিতীয় ইনিংসে তিনি ক্যারিয়ারের চতুর্থ টেস্ট সেঞ্চুরি স্পর্শ করেছেন ১১৫ বল খেলে। বাংলাদেশের দ্বিতীয় ব্যাটার হিসেবে এক টেস্টের দুই ইনিংসে সেঞ্চুরি হাঁকানোর কীর্তি গড়লেন তিনি। টেস্ট ইতিহাসে ৯১তম বারের মতো দুই ইনিংসেই সেঞ্চুরি হাঁকানোর ঘটনা ঘটল।
এর আগে প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে ২০১৮ সালে চট্টগ্রামে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে মুমিনুল এই কীর্তি গড়েছিলেন। প্রথম ইনিংসে তিনি করেন ১৭৬ রান। দ্বিতীয় ইনিংসে তার ব্যাটে ১০৫ রান। এদিকে চলমান টেস্টে প্রথম ইনিংসে শান্ত খেলেছেন ১৪৬ রানের ইনিংস। এবার সেই বড় ভাই মুমিনুলকে পাশে নিয়েই এক ম্যাচে দ্বিতীয় সেঞ্চুরি হাঁকান শান্ত।
তৃ্তীয় উইকেটে মুমিনুলের সাথে জুটি গড়ে তুলেন শান্ত। দুজনের দারুণ ব্যাটিংয়ে প্রথম সেশন শেষে ৪৮ ওভারে বাংলাদেশের সংগ্রহ ছিল ২ উইকেটে ২৫৫ রান। সেখান থেকে এসে শুরুতেই বাংলাদেশ নিজেদের লিড পাঁচশ পার করে নেয়। তবে এরপর আউট হয়ে ফিরে যান শান্ত। এই ব্যাটারকে ৫৪তম ওভারের প্রথম বলেই ফেরান জহির খান। মিড উইকেটে ক্যাচ তুলে দিয়ে ড্রেসিং রুমে ফেরার আগে শান্ত খেলেন ১২৪ রানের ঝলমলে ইনিংস। ১৫১ বলের সেই ইনিংসে ১৫টি বাউন্ডারি হাঁকান শান্ত। মুমিনুলের সাথে শান্তর ৮৩ রানের জুটিও ভেঙে যায়।
শান্তর বিদায়ের পরই উইকেটে আসেন মুশফিকুর রহিম। তিনি এসেই আক্রমণাত্বক ব্যাটিং করেন। প্রথম বলে দুই রান নেওয়ার পর, পরের বলেই ছয় হাঁকান। তবে একই ওভারে চতুর্থ ও নিজের খেলা তৃতীয় বলটিতে রিভার্স শট খেলতে গিয়ে স্লিপে ইব্রাহিম জাদরানের হাতে ধরা পড়েন। যার ফলে ৮ রান করেই প্যাভিলিয়নে ফিরেন।
ইনিংসের পরের গল্পটা লেখেন মুমিনুল হক ও অধিনায়ক লিটন দাস। দুজনে জুটি গড়ে রান বাড়িয়ে নিয়ে যান। মাঝে চা-বিরতিতে যায় দল। সেখান থেকে ফিরে এসে টেস্ট অধিনায়ক হিসেবে প্রথম ও সব মিলিয়ে ক্যারিয়ারে ১৬তম টেস্ট ফিফটি পূরণ করেন লিটন। অপরপ্রান্তে মুমিনুল ২৬ মাস পর সেঞ্চুরির দেখা পান। সবশেষ সেঞ্চুরি ছিল ২০২১ সালের এপ্রিলে, শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে। মাঝে ১৪ টেস্টের ২৬ ইনিংসে অধরা ছিল তিন অঙ্কের রান। আফগানিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে অবশেষে সেঞ্চুরি খরা কাটিয়েছেন বাঁহাতি এই ব্যাটার।
মুমিনুল-লিটনের সেই জুটি আর ভাঙতে পারেনি আফগানিস্তান। দুজনের ১৪৩ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটিতে ম্যাচের তৃতীয় ইনিংসে দলীয় রান চারশ পার করে শেষ পর্যন্ত নিজেদের দ্বিতীয় ইনিংস ঘোষণা করে বাংলাদেশ। টেস্ট ক্যারিয়ারে বাংলাদেশের হয়ে রেকর্ড ১২তম সেঞ্চুরি হাঁকানো মুমিনুল ১৪৫ বলে ১২ বাউন্ডারি ও ১ ছক্কার মারে ১২১ রান করে অপরাজিত থাকেন। ৮১ বলে ৮ বাউন্ডারিতে ৬৬ রানে অপরাজিত থাকেন লিটন দাস।
আফগানিস্তানের হয়ে জহির খান ২টি ও আমির হামজা ১টি উইকেট লাভ করেন।
এসএনপিস্পোর্টসটোয়েন্টিফোরডটকম/নিপ্র/সা
Discussion about this post