নিজস্ব প্রতিবেদকঃ প্রায় দুই ঘন্টা বন্ধ থাকার পর বৃষ্টির কারণে ম্যাচ নেমে আসে ৮ ওভারে। জিততে হলে আয়ারল্যান্ডকে করতে হবে ১০৪ রান। আর সেই রান করতে গিয়ে শুরুতেই মারকুটে আইরিশরা। নাসুম আহমেদ ও মুস্তাফিজুর রহমানকে প্রথম দুই ওভারে তুলোধুনো করেন দলটির দুই ওপেনার পল স্টার্লিং ও রস অ্যাডায়ার।
তবে সেই দাপট কমান তৃতীয় ওভারে হাসান মাহমুদ বোলিংয়ে এসে। এক ওভারে মাত্র ৫ রান দিয়ে তুলে নেন ১ উইকেট। এর পরের ওভারেই তিন উইকেট তুলে নেন তাসকিন আহমেদ। খরচ করেন মাত্র ৭ রান। আইরিশদের ব্যাটিং লাইনআপের কোমড় ভেঙে যায় সেখানেই। পরের ওভারে হাসান মাহমুদ ১৫ রান খরচ করলেও, সাকিব বোলিংয়ে এসে সেটি পুষিয়ে নেন মাত্র ৫ রান খরচ করে।
সপ্তম ওভারে মুস্তাফিজ রানের লাগাম টেনে ধরে। আর ইনিংসের একেবারে শেষ ওভারে নিজের কাজটা বেশ ভালোভাবেই করেন তাসকিন। আরও এক উইকেট শিকার করার পাশাপাশি খরচ করেন মাত্র ৯ রান। আর এতেই আয়ারল্যান্ড থামে ৮ ওভারে ৫ উইকেট হারিয়ে ৮১ রানে। ডিএলএস মেথডে বাংলাদেশের হয় ২২ রানের ব্যবধানে। আর এই জয়ে সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে গেল স্বাগতিকরা।
আয়ারল্যান্ডের হয়ে ১৪ বলে ৩ বাউন্ডারিতে সর্বোচ্চ ২১ রান করে অপরাজিত থাকেন গ্যারেথ ডেলানি। সমান ৩ বাউন্ডারিতে ১২ বলে ১৯ রান করেন হ্যারি টেক্টর। ৮ বলে ৪ বাউন্ডারিতে ১৭ রান আসে অধিনায়ক পল স্টার্লিংয়ের ব্যাটে।
তাসকিন আহমেদ ২ ওভারে ১৬ রান দিয়ে একাই শিকার করেন ৪ উইকেট। হাসানের শিকার ১ উইকেট।
এর আগে বৃষ্টির কারণে বাংলাদেশের ইনিংস থামে ১৯.২ ওভারেই। যেখানে ৫ উইকেট হারিয়ে ২০৭ রান তুলে টাইগাররা। যা কিনা টি-টোয়েন্টির ইতিহাসে বাংলাদেশের তৃতীয় সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড। তবে চট্টগ্রামের মাঠে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড। এই নিয়ে চতুর্থবার আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে দুইশ রান পার করলো টাইগাররা। তবে এই প্রথমবার চট্টগ্রামের মাঠে দুইশ রান করলো বাংলাদেশ। এর আগে মিরপুরের হোম অব ক্রিকেটে দুই বার ও কলম্বোতে এক বার করেছিল।
চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরি স্টেডিয়ামে টস হেরে ব্যাট করতে নেমে ইনিংসের শুরু থেকেই আক্রমণাত্বক বাংলাদেশ। পাওয়ার প্লে’র ৬ ওভারে বিনা উইকেটে ৮১ রান তুলেন দুই ওপেনার লিটন দাস ও রনি তালুকদার। যা কিনা সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড।
৭.১ ওভার স্থায়ী উদ্বোধনী জুটিতে ৯১ রান তুলেন লিটন-রনি। তাণ্ডব চালিয়ে লিটন প্যাভিলিয়নের পথ ধরলে ভাঙে সেই জুটি। আইরিশদের বিপক্ষে এদিন ৪৭ রানের ঝড়ো ইনিংস খেলেছেন। ২৩ বলের ইনিংসে ৪টি বাউন্ডারি ও ৩টি ছক্কা হাঁকিয়েছেন। প্রায় ২০৫ স্ট্রাইক রেটে ব্যাট করেছেন এই তারকা।
এদিন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পঞ্চম বাংলাদেশি হিসেবে ১৫০০ রান করার মাইলফলকও স্পর্শ করেছেন। তবে বাকিদের ছাড়িয়ে গেছেন একটি জায়গায়। দেড় হাজার করা ক্রিকেটারদের মধ্যে সবচেয়ে দ্রুততম লিটন। এর জন্য খেলেছেন ৬৮ ইনিংস। দশ ওভারের আগেই দলের রান একশ পূরণ হয় বাংলাদেশের।
লিটনের বিদায়ের পর টপ অর্ডারে নেমে খুব একটা সুবিধা করতে পারেননি ইনফর্ম নাজমুল হোসেন শান্ত। ১ ছয়ের মারে ১৩ বলে ১৪ রান করেন তিনি। ব্যাটিং পজিশনে উন্নতি করে চারে নাম শামীম পাটোয়ারি বেশ ভালো খেলছিলেন। তবে রনির সাথে তার জুটি ৩৬ রানের বেশি টেকেনি।
ফিফটি হাঁকিয়ে নিজের ক্যারিয়ার সেরা ইনিংস খেলে প্যাভিলিয়নের পথ ধরেন রনি। ক্যারিয়ারের প্রথম টি-টোয়েন্টি ফিফটির পর এই ওপেনার ৩৮ বলে ৭ বাউন্ডারি ও ৩ ছক্কায় সাজান ৬৭ রানের ইনিংসটি। দারুণ খেলতে শামীম বিদায় নেন ১৭তম ওভারের প্রথম বলে। এর আগে দেড়শ স্ট্রাইক রেটে ২ বাউন্ডারি ও ১ ছক্কায় ৩০ রান করে যান এই বাঁহাতি।
এরপর অধিনায়ক সাকিবকে সাথে নিয়ে ২৯ রানের জুটি গড়েন তাওহীদ হৃদয়। এক ছয়ে ১৩ রান করে ইনিংসের শেষ দিকে আউট হন হৃদয়। পরবর্তীতে বৃষ্টিতে ম্যাচ বন্ধ হওয়ার আগ পর্যন্ত ৬ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটি গড়েন সাকিব ও মেহেদী হাসান মিরাজ। সাকিব ১৩ বলে ৩ বাউন্ডারিতে ২০ ও মেহেদী হাসান মিরাজ ১ বলে এক বাউন্ডারিতে ৪ রান করে অপরাজিত থেকে মাঠ ছাড়েন।
বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে নিজেদের ইতিহাসে সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড গড়ার একেবারে কাছেই ছিল। সেটা করতে হলে ইনিংসের বাকি থাকা চার বলে ২১৫ রান টপকাতে হতো টাইগারদের। অর্থাৎ, অন্তত আরও ৮ রান করার প্রয়োজন ছিল। তবে বৃষ্টিতে সেটা আর হয়নি।
আয়ারল্যান্ডের হয়ে ক্রেইগ ইয়াং সর্বোচ্চ ২টি উইকেট শিকার করেছেন।
এসএনপিস্পোর্টসটোয়েন্টিফোরডটকম/নিপ্র/সা
Discussion about this post