আর মাত্র ক’টা দিন। এরপরই পর্দা উঠতে যাচ্ছে ‘দ্য গ্রেটেস্ট শো অন আর্থ’ খ্যাত বিশ্বকাপ ফুটবলের। কাতারে অনুষ্ঠিত হবে ২০২২ ফুটবল বিশ্বকাপ। ৩২ দলের ফুটবল লড়াই দেখার অপেক্ষায় গোটা বিশ্ব। শুধুমাত্র ফুটবলের লড়াই নয়, এই ক্রীড়া মহাযজজ্ঞের সাথে জড়িয়ে আছে আরও অনেক কিছু। দীর্ঘ প্রচেষ্টায় নিজেদেরকে প্রস্তুত করেছে আয়োজক দেশ কাতার। যেখানে স্টেডিয়াম আছে বড় অংশ জুড়ে। বিশ্বকাপের জন্য সম্পূর্ণ নতুন স্টেডিয়াম গড়ে তুলেছে বিশ্বকাপের আয়োজকরা। সেই স্টেডিয়ামগুলোর বিস্তারিত ধারাবাহিকভাবে তুলা ধরা হবে। আজকের প্রতিবেদনে থাকছে আল জানুব স্টেডিয়ামের কথা।
মধ্য দোহা থেকে ২২ কিলোমিটার দক্ষিণে আল ওয়াকরাহ শহরের অবস্থিত আল জানুব স্টেডিয়াম। কাতারের অন্যতম দৃষ্টিনন্দন স্টেডিয়াম এটি। পূর্বে আল ওয়াকরাহ স্টেডিয়াম বলে পরিচিত ছিল। আল ওয়াকরাহ স্পোর্টস ক্লাবের ঘরের মাঠ এটি। ফুটবল বিশ্বকাপের জন্য নতুন করে তৈরি করার পাশাপাশি নতুন নামও দেওয়া হয়েছে স্টেডিয়ামের।
স্টেডিয়ামটি নৌকার পালের মতোন করে নকশা করা হয়েছে। মূলত কাতারের এক ইতিহাস-ঐতিহ্যের সংস্কৃতিকেই তুলে ধরা হয়েছে। কাতারের ঐতিহ্যবাহী নৌকা, যার নাম কিনা ধৌ, সেটিরই আকর্ষণীয় পালের আকৃতিতে বানানো হয়েছে। ইতিহাস আছে এরকম নৌকায় করে অতীতে মাছ ধরতে কিংবা মুক্তা সেচার জন্য পারস্য উপসাগরে অভিযানে যাওয়া হতো।
বক্রাকার ছাদ এবং বাইরের দৃষ্টিনন্দন উপস্থাপন দর্শকদের মাঠে ফুটবল উপভোগের পাশাপাশি জাহাজে থাকার অনুভূতি দেবে। স্টেডিয়ামটিতে ধনুকের ন্যায় মরীচি ছাদ রাখা হয়েছে, যা কিনা জাহাজের হালের মতো দেখতে। পিটিএফই ফ্যাব্রিক এবং তার দিয়ে তৈরি এই স্টেডিয়ামের ছাদ সরানো যায়।
ইরাকি-ব্রিটিশ স্থপতি জাহা হাদিদ এইসিওএম ফার্মের সাথে মিলে এই স্টেডিয়ামের নকশা করেছেন। বিখ্যাত স্থপতি জাহা হাদিদ ২০০৪ সালে প্রথম মহিলা হিসেবে প্রিটজকার আর্কিটেকচার পুরস্কারে ভূষিত হন। ঢেউ খেলার মতো করে সৃজনশীল ভাবনায় নান্দিনক শিল্পের মাধ্যমের অসাধারণ এক নকশা এই স্টেডিয়ামের।
কাতারের অস্বাভাবিক গরমের কারণে স্টেডিয়ামের ভেতরে শীতলকরণ ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। অতিরিক্ত গরমে যেটি গ্যালরিতে দর্শকদের ১৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং খেলার মাঠে ২০ ডিগ্রি সেলসিয়াস ঠান্ডা তাপমাত্রা রাখতে পর্যন্ত সক্ষম। স্টেডিয়ামে শুধুমাত্র ফুটবল নয়, পুরো স্পোর্টস কমপ্লেক্স হিসেবে তৈরি করা হয়েছে। যার ফলে অন্যান্য খেলাধুলার সুবিধাও আছে। মাল্টিপারপাস হল, সুইমিংপুল, স্পা ও সবুজ ছাদসহ শপিং মলও থাকছে। স্টেডিয়ামের প্রবেশদ্বারে সবুজের ছোঁয়া হিসেবে বিভিন্ন গাছ দিয়ে এক চত্বরের দেখা মিলবে।
সংস্কারের পর ২০১৯ সালের ১৬ মে উদ্বোধন করা হয়েছে এই স্টেডিয়ামের। অত্যাধুনিক সুযোগ-সুবিধা সম্বলিত এই স্টেডিয়ামের দর্শক ধারণক্ষমতা ৪০ হাজার। যদিও বিশ্বকাপ শেষে আসন ২০ হাজারে নামিয়ে আনা হবে। আর আল ওয়াকরাহ স্পোর্টস ক্লাবকে বুঝিয়ে দেওয়া হবে দায়িত্ব।
এই স্টেডিয়ামে বিশ্বকাপের মোট ৭টি ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে। যার মধ্যে ৬টি গ্রুপ পর্বের ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে। একটি নক আউট পর্বের থাকবে, আর সেটি রাউন্ড অব সিক্সটিনের। গ্রুপ পর্বে ফ্রান্স ও অস্ট্রেলিয়ার ম্যাচ দিয়ে প্রথমবার বিশ্বকাপের বল গড়াবে এই মাঠে। এছাড়া উরুগুয়ের ম্যাচ আছে এই মাঠে।
এসএনপিস্পোর্টসটোয়েন্টিফোরডটকম/নিপ্র/সা/00