স্পোর্টস ডেস্ক:: লাল বল মানেই ইনিংসের শুরুতে বাংলাদেশের পতন, জোড়ায় জোড়ায় উইকেট হারানো। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে প্রথম টেস্টের প্রথম ইনিংসেও এমনটা হয়েছে। দ্বিতীয় ইনিংসেও পতন শুরু হয়ে ছিলো।
১৬২ রানে পিছিয়ে পড়ে দ্বিতীয় ইনিংস শুরু করা বাংলাদেশ ২ রানের ব্যবধানেই দুই উইকেট হারিয়েছে। দিনের শেষ বেলায় উইকেট পতন শেষ পর্যন্ত ঠেকিয়েছেন ওপেনার জয় ও শান্ত। ইনিংসের দশম ওভারের চতুর্থ বলে প্রথম উইকেট হারানো বাংলাদেশ দ্বিতীয় উইকেট হারিয়েছে ১১তম ওভারের চতুর্থ বলেই। ৩৩ রানে তামিমকে হারানো বাংলাদেশ ৩৫ রানে হারিয়েছে তিনে নামা মিরাজকে।
শেষ পর্যন্ত বাংলাদেষ দিন শেষ করেছে ২০ ওভারে দুই উইকেটে ৫০ রানে। ১৮ রানে জয় ও ৮ রানে শান্ত অপরাজিত আছেন। টাইগাররা এখনো পিছিয়ে আছে ১১২ রানে। হাতে থাকা ৮ উইকেট নিয়ে তৃতীয় দিন ব্যাটিংয়ে নামবে বাংলাদেশ। ওপেনার তামিম চার চারে ৩১ বলে ২২ রান করেছেন। মিরাজ ৬ বলে করেছেন ২ রান।
ক্যারিবিয়ানদের হয়ে জোসেপই ২টি উইকেট নিয়েছেন।
এর আগে বল হাতে দুর্দান্ত হয়ে উঠা মেহেদী হাসান মিরাজ, এবাদত আর খালেদদের বোলিং তোপে নিজেদের প্রথম ইনিংসে বেশিদূর যেতে পারেনি ওয়েস্ট ইন্ডিজ। সফরকারী বাংলাদেশ তাদেরকে অলআউট করেছে ২৬৫ রানে। স্বাগতিকরা লিড নিয়েছে ১৬২ রানের।
বাংলাদেশের করা প্রথম ইনিংসে ১০৩ রানের জবাবে ক্যারিবিয়ানদের ২৬৫ রানে থামান মিরাজরা। নিজেদের দ্বিতীয় ইনিংসে বাংলাদেশ ব্যাটিংয়ে নামবে ১৬২ রানে পিছিয়ে থেকে।
বল হাতে দুর্দান্ত হয়ে উঠা মিরাজ একাই শিকার করেছেন ৪টি উইকেট, এবাদত, খালেদ নিয়েছেন ২টি করে আর সাকিব ও মুস্তাফিজ শিকার করেছেন ১টি করে উইকেট। স্বাগতিক ওয়েস্ট ইন্ডিজ তাই লিড বেশ বড় করতে পারেনি। দ্বিতীয় দিনের দুই সেশনে প্রতিপক্ষের ৮ উইকেট তুলে নিয়েছে বাংলাদেশ।
৮ রানে পিছিয়ে থেকে দ্বিতীয় দিন শুরু করা স্বাগতিক ওয়েস্ট ইন্ডিজ লিড বড় করছে। প্রথম দিনের মতো দ্বিতীয় দিনের শুরুতেও হতাশ করছেন বাংলাদেশের বোলাররা। তবে দ্বিতীয় সেশনেই মিরাজদের দুর্দান্ত বোলিংয়ে ঘুরে দাঁড়ায় টাইগাররা।
দ্বিতীয় দিন ব্যাট করতে নেমে উইন্ডিজ তৃতীয় উইকেট হারায় সকালের প্রথম সেশনে। সাকিব ইনিংসের ৬৩তম ওভারের শেষ বলে দলীয় ১৩৪ রানের মাথায় ফিরিয়ে দেন বোনারকে। ৯৬ বলে ৩৩ রান করেন এই ব্যাটার। ইনিংসের শুরু থেকেই দারুণ ব্যাট করছিলেন ব্র্যাথওয়েট। বাংলাদেশের জন্য ভয়ঙ্কর হয়ে উঠছিলেন তিনি। সেঞ্চুরির আগেই তাঁকে ফিরিয়েছেন খালেদ। ৬ রানের জন্য সেঞ্চুরি মিস করেছেন স্বাগতিক অধিনায়ক। ২৬৮ বলে নয় চারে করেছেন ৯৪ রান।
তৃতীয় ও চতুর্থ উইকেট জুটিতেই উইন্ডিজরা লিডের পূঁজি পেয়ে যায়। তৃতীয় উইকেটে ব্র্যাথওয়েট ও বোনার মিলে গড়েন ৬২ রানের জুটি। সাকিব বোনারকে ফিরিয়ে ভেঙ্গে দেন দলীয় ১৩৪ রানে। ব্যক্তিগত ৩৩ রানে বোনার ফিরেন প্যাভেলিয়নে।
স্বাগতিক অধিনায়ক ব্র্যাথওয়েট চতুর্থ উইকেটে জুটি গড়েন ব্ল্যাকউডকে নিয়ে। দু’জনে মিলে স্কোর বোর্ডে যোগ করেন ৬৩ রান। খালেদের শিকারে দলীয় ১৯৭ রানে ব্র্যাথওয়েট ফিরে গেলে ভাঙে তাদের প্রতিরোধ গড়া জুটিটি। নয় চারে ২৬৮ বলে ৯৪ রান করেন তিনি। তার বিদায়ের পরপরই জ্বলে উঠেন মিরাজ। একে একে ফিরিয়ে দেন ৪ ব্যাটারকে। ম্যাচে ফিরে বাংলাদেশ। দুই হাফ সেঞ্চুরিয়ান ছাড়া উইন্ডিজদের হয়ে আর কেউ তেমন রানের দেখা পাননি।
বাংলাদেশের হয়ে মিরাজ ৪টি, খালেদ-এবাদত ২টি করে ও সাকিব এবং মুস্তাফিজ ১টি করে উইকেট লাভ করেন।
এর আগে অ্যান্টিগা টেস্টে কোনোমতে একশ পার করে অলআউট হয় বাংলাদেশ। ৩২.৫ ওভারে বাংলাদেশের সংগ্রহ ১০৩। দারুণ চারে ৬৫ বলে ফিফটি হাঁকান সাকিব আল হাসান। এর আগে ৬ উইকেটে ৭৬ রান নিয়ে দ্বিতীয় সেশনে ব্যাট করতে নামে বাংলাদেশ। এক রান যোগ করেই মেহেদী হাসান মিরাজ উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে আউট হয়েছেন জেইডেন সেলেসের বলে। এরপর ফিরেছেন মুস্তাফিজুর রহমানও। এবাদত হোসেনকে নিয়ে ফিফটি হাঁকান সাকিব।
সাকিবের টেস্টে ২৮তম আর উইন্ডিজের সাথে নবম ফিফটি এটি। তার ইনিংস সাজানো ছিল ৬টি চার ও ১টি ছয়ে। হাফ সেঞ্চুরির পর অবশ্য বেশিক্ষণ থিতু হতে পারেননি তিনি। আলজারি জোসেফের ওপর চড়াও হতে গিয়ে লং অনে সীমানার কাছে ক্যাচ দেন রোচের হাতে। এর দুই বল পর জোসেফ খালেদের উইকেট তুলে নিলে বাংলাদেশের ইনিংস গুটিয়ে যায় ১০৩ রানে।
এর আগে চোট কাটিয়ে শেষ মূহুর্তে উইন্ডিজ দলে সুযোগ পাওয়া কেমার রোচের অফ স্টাম্পের বাইরের লেংথ বলে খোঁচা মেরে স্লিপে ক্যাচ দেন মাহমুদুল হাসান জয়। শূন্য রানে ফিরেন এই ওপেনার। পরের ওভারে নাজমুল হোসেন শান্ত ফেরেন রোচের বলে। সরাসরি বোল্ড হন বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যান।
মুমিনুল হক দাঁড়াতেই পারেন নি উইকেটে। ক্যারিবিয় পেসার জেইডেন সিলসের বলে দ্বিতীয় স্লিপে ক্যাচ দেন তিনি। ১৬ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে দিশেহারা বাংলাদেশকে একটু স্থির করার চেষ্টা করেন তামিম ইকবাল ও লিটন দাস। এরপর অহেতুক বল খেলতে গিয়ে উইকেট দেন তামিম। আলজারি জোসেফের লেগ স্টাম্পের বাইরের বলে ব্যাট চালিয়ে উইকেটকিপারের হাতে ক্যাচ দেন তিনি।
নিজের প্রথম ওভারে করতে এসেই কাইল মায়ার্স নেন জোড়া উইকেট। তাঁর বলে কট-বিহাইন্ড লিটন। এরপর শট না খেলে এলবিডব্লু হন নুরুল হাসান। লাঞ্চের আগে অধিনায়ক সাকিব ও মিরাজের ব্যাটে বিপর্যয় সামাল দিতে লড়েছেন। এরপর অবশ্য আর বড় স্কোর হয় নি সফরকারীদের।
উইন্ডিজের হয়ে সর্বোচ্চ ৩ উইকেট করে নিয়েছেন জোসেফ-সিলস। এ ছাড়া ২টি করে উইকেট নেন কেমার রোচ ও কাইল মায়ার্স।
এসএনপিস্পোর্টসটোয়েন্টিফোরডটকম/নিপ্র/ডেস্ক/০০