নিজস্ব প্রতিবেদক:: তিন ম্যাচের সিরিজে ১-১ সমতায় ফিরলো সফরকারী শ্রীলঙ্কা। পাথুম নিশাঙ্কার সেঞ্চুরি আর চারিথ আসলাঙ্কার সেঞ্চুরি ছুঁই ছুঁই ইনিংসে বাংলাদেশের দেওয়া ২৮৭ রানের টার্গেট ৭ উইকেট হারিয়ে টপকে গেছে দলটি।
২৮৭ রানের টার্গেটে ব্যাট করতে নামা শ্রীলঙ্কা শরিফুলের শিকারে ইনিংসের প্রথম ওভারেই হারায় উইকেট। দলীয় ১ রানের মাথায় দ্বিতীয় বলেই এই পেসার শুন্য রানে সাজঘরে ফেরত পাঠান অভিষেক ফার্নান্দোকে।
দ্রুত প্রথম উইকেট হারানো লঙ্কানরা ইনিংসের ষষ্ট ওভারের প্রথম বলেই হারায় দ্বিতীয় উইকেট। দলীয় ৪২ রানের মাথায় অধিনায়ক কুশল মেন্ডিসকে মুশফিকের গ্লাভস বন্দী করান পেসার তাসকিন। তিন চারে ১৩ বলে ১৬ রান করেন অতিথি দলনেতা। পরের ওভারেই তৃতীয় উইকেট হারায় দলটি। দলীয় ৪৩ রানের মাথায় শরিফুল দ্বিতীয় শিকারে প্যাভেলিয়েন পাঠান সাদিরাকে। ৪ বলে ১ রানের ইনিংস খেলেন তিনি।
চতুর্থ উইকেটে কুশল মেন্ডিস ও পাথুম নিশাঙ্কা ১৮৫ রানের জুটি গড়ে ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ নেন। দলীয় ২২৮ রানে ১১৩ বলে ১১৪ রানের ঝলমলে এক ইনিংস খেলে নিশাঙ্কা সাজঘরে ফিরলে ভাঙে সেই জুটি। ১৩ চার ৩ ছক্কায় ম্যাচ জয়ী ইনিংসটি খেলেন তিনি।
সেঞ্চুরিয়ানের বিদায়ের পর পঞ্চম উইকেটে চারিথ আসলাঙ্কাও দ্রুত ফিরেন সাজঘরে। দলীয় ২৩৫ রানে ইনিংসের ৩৮তম ওভারের শেষ বলে তাসকিনের শিকারে পরিণত হওয়ার আগে ৯১ রানের এক ইনিংস খেলেন তিনি। সেঞ্চুরি ছুঁই ছুঁই ইনিংসটি সাজান ছয় চার ও চার ছক্কায়। ১৫ রানে অপরাজিত থাকেন দিমুথ ভেল্লালাগে। ২৫ রান করেন ওয়ানিন্দু হাসরাঙ্গা। তাতেই সাত উইকেট হারিয়ে ৪৭.১ ওভারে দলটি পৌঁছে যায় জয়ের বন্দরে।
বাংলাদেশের হয়ে তাসকিন ও শরিফুল ২টি করে উইকেট লাভ করেন।
এর আগে ব্যাট করে নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৭ উইকেটে ২৮৬ রান সংগ্রহ করেছে স্বাগতিকরা। টাইগারদের হয়ে জোড়া ফিফটি হাঁকিয়েছেন তাওহীদ হৃদয় ও সৌম্য সরকার।
এর মধ্যে হৃদয়ের ইনিংসটি ছিল দুর্দান্ত। মাত্র ৪ রানের জন্য সেঞ্চুরি মিস করেছেন এই ব্যাটার। এদের সঙ্গে শেষ দিকে ক্যামিও ইনিংস খেলেছেন তাসকিন আহমেদ। ব্যাট হাতে ভালো অবদান রেখেছেন তানজিম হাসান সাকিবও।
চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরি স্টেডিয়ামে টস হেরে ব্যাট করতে নেমে ইনিংসের শুরুতেই ডাক মেরে ফিরে যান ওপেনার লিটন দাস। প্রথম ম্যাচেও গোল্ডেন ডাক মেরেছিলেন। এবার দ্বিতীয় ম্যাচে এসে আবার ডাক মারলেন। সব মিলিয়ে ওয়ানডে ক্যারিয়ারে ১৪তম ডাকের দেখা পেলেন এই তারকা।
শুরুর ধাক্কা সামলে নেন আরেক ওপেনার সৌম্য সরকার ও টপ অর্ডারে নামা অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত। দুজনে মিলে ৭৫ রানের দারুণ এক জুটি গড়ে দলকে ভালো অবস্থানে নিয়ে যান। আগের ম্যাচে সেঞ্চুরি হাঁকানো শকানো এই ম্যাচে জীবন পেলেও, বড় ইনিংস খেলতে পারেননি। তবে তার ৩৯ বলে ৪০ রানের ইনিংসটি কার্যকর ছিল। তার বিদায়ে ভাঙে জুটি।
তবে সমর্থকদের দুঃশ্চিন্তা করতে না দিয়ে এদিনে রানের চাকা সচলে রাখেন স্বরূপে ফেরা সৌম্য। নিজের দিনে কতটা আগ্রাসী তিনি আরও একবার দেখিয়েছেন। যদিও ভুল সময়ে ভুল শট খেলে ফিরে যান ব্যক্তিগত ৬৮ রানের মাথায়। হাসারাঙ্গার বলে আউট হওয়ার আগে ৬৬ বলে ১১ বাউন্ডারি ও ১ ছক্কায় নিজের ইনিংসটি সাজান এই ব্যাটার। বাংলাদেশের হয়ে ওয়ানডেতে দ্রুততম দুই হাজার রানের রেকর্ড গড়েন (৬৪ ইনিংসে)। তার বিদায়ে হৃদয়ের সাথে ৫৫ রানের জুটি ভাঙে।
এরপর উইকেটে এসেই ভুল করে বসেন আরেক অভিজ্ঞ মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। হাসারাঙ্গাকে ডাউন দ্য উইকেটে এসে উড়িয়ে মারতে গিয়ে স্টাম্পিংয়ের শিকার হয়ে ডাক মারেন রিয়াদ। ২২তম ওভারে জোড়া উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে বাংলাদেশ। সেখান থেকে দলকে টেনে তুলার চেষ্টা করেন হৃদয় ও মুশফিকুর রহিম। ৪৩ রানের সেই জুটিতে ২৫ রান করে মুশফিক আউট হলে চাপ বাড়ে বাংলাদেশের উপর।
মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের মতো একই ভুলের পুনরাবৃত্তি করে মাত্র ১২ রানেই হাসারাঙ্গার বলে কাঁটা পড়েন মিরাজ। দুইশ রান হবে কি-না শঙ্কা জাগে। এরপর তানজিম হাসান সাকিবকে সাথে নিয়ে ৪৭ রানের জুটি গড়ে দলকে ভালো অবস্থানে নিয়ে যান হৃদয়। ১৮ রানের কার্যকর ইনিংস খেলে বিদায় নেন সাকিব।
এরপর অষ্টম উইকেটে তাসকিনের সাথে মাত্র ২৩ বলে ৫০ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটি গড়েন হৃদয়। দলকে বড় সংগ্রহ এনে দিয়ে একেবারে ইনিংস শেষ করে মাঠ ছাড়েন দুজন। তবে মাঠ ছাড়তে ছাড়তে আফসোসে পুড়তে দেখা যায় হৃদয়কে। কারণ অনবদ্য ব্যাটিংয়ে ৯৬ রানে অপরাজিত ছিলেন।
ক্যারিয়ার সেরা ইনিংস খেললেও, মাত্র একটি শটের জন্য সেঞ্চুরির দেখা পাননি। ১০২ বলে ৩ চার ও ৫ ছক্কায় ৯৬ রানে অপরাজিত ছিলেন এই ব্যাটার। শুরুর দিকে খানিক ধীর গতির থাকলেও, ধীরে ধীরে আগ্রাসী হন চরম। বিশেষ করে শেষ দিকে ছিলেন দুর্দান্ত। এদিকে ১০ বলে ২ চার ও ১ ছক্কায় ১৮ রান করে অপরাজিত থাকেন তাসকিন।
শ্রীলঙ্কার হয়ে ১০ ওভারে ১ মেইডেনসহ ৪৫ রান খরচায় ৪ উইকেট পান ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গা। দিলশান মধুশঙ্কা ২টি উইকেট লাভ করেন।
এসএনপিস্পোর্টসটোয়েন্টিফোরডটকম./নিপ্র/০০
Discussion about this post