স্পোর্টস ডেস্ক:: ১৭৪ রানে পিছিয়ে পড়ে নিজেদের দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে নামা বাংলাদেশ তখন হারিয়ে ফেলে তিন উইকেট। ৩২ রানে তিন উইকেট হারিয়ে বিপর্যয়ে পড়া দলকে টেনে তুলার দায়িত্ব নেন শান্ত ও লিটন। ২৬ রানের জুটি গড়ে আশাও জাগান। তবে চতুর্থ উইকেটে লিটন ফিরে গেলে ভেঙে যায় প্রতিরোধের আশা জাগানিয়ে জুটিটি।
এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত বাংলাদেশ দল ২১ ওভারে ৪ উইকেটের বিনিময়ে তুলেছে ৬৭ রান। এখনো পিছিয়ে আছে ১০৭ রানে। ইনিংস ব্যবধানে হারের শঙ্কায় পড়লো টাইগাররা। ২৪ রানে শান্তকে নিয়ে বিপর্যয় সামলানোর চেষ্টায় ২ রানে অপরাজিত থাকা সাকিব।
দ্বিতীয় ইনিংসেও ভূতুড়ে শুরু হলো টাইগারদের। তামিম ইকবাল-মাহমুদুল হাসান জয়-এনামুল হক বিজয়রা যারপরনাই হতাশ করেছেন। বাংলাদেশ দলকে রীতিমত বিপদের মুখে ফেলে উইকেট বিলিয়ে দিয়ে এসেছেন তারা তিনজন।
কেমার রোচের তোপে ৮.৫ ওভার না যেতেই ৩২ রানে বাংলাদেশ হারায় তামিম-জয়-বিজয়কে। জয় ১৪ রান করলেও তামিম-বিজয় ৪ রানের বেশি করতে পারেননি। আম্পায়ার্স কলের শিকার হয়ে বিজয় ফেরেন সাজঘরে। ইনিংসের ২০তম ওভারের পঞ্চম বলে চতুর্থ উইকেটে লিটন বিদায় নেন ব্যক্তিগত ১৯ রানে।
উইন্ডিজদের হয়ে রোচ ৩টি উইকেট নিয়েছেন।
এর আগে স্বাগতিকরা নিজেদের প্রথম ইনিংসে অলআউট হয় ৪০৮ রানে। দ্বিতীয় দিন শেষে স্বাগতিক ওয়েস্ট ইন্ডিজের সংগ্রহ ছিলো ৫ উইকেটে ৩৪০ রান। ১০৬ রানের লিড নিয়ে তৃতীয় দিন শুরু করা উইন্ডিজদের চেপে ধরেছেন খালেদ-মিরাজরা। সেখান থেকে ৪শ পেরুতেই দলটিকে আটকে দেন পাঁচ উইকেট শিকারে দুর্দান্ত হয়ে উঠা খালেদ আর মিরাজরা। দিনের শুরুতেই খালেদ-মিরাজরা আঘাত হানেন প্রতিপক্ষের ব্যাটিং লাইনআপে। ৪ রান যোগ করতেই দলীয় ৩৪৪ রানে ষষ্ট উইকেট হারায় দলটি। মিরাজের এলবিডাব্লিউ’র ফাঁদে পড়ে সাজঘরে ফিরেন ডি সিলভা। আগের দিন ২৬ রানে অপরাজিত থাকা এই ব্যাটার ২৯ রানেই ফিরেন প্যাভেলিয়নে।
মিরাজের পরপরই খালেদ শিকার করেন আলজারাই জোসেপকে। ইনিংসের ১১১তম ওভারের পঞ্চম বলে দলীয় ৩৬৩ রানে ৬ রান করা এই ব্যাটারকে সাজঘরে পাঠান তিনি। বাংলাদেশের জন্য পথের কাঁটা হয়ে উঠা সেঞ্চুরিয়ান মায়ার্সকেও ফেরান তরুণ এই পেসার। আগের দিন ১২৬ রানে অপরাজিত থাকা এই ব্যাপার খালেদের বলে সাজঘরে ফেরার ১৪৬ রান করেন।
৬৭ রানে শুন্য উইকেট নিয়ে দিন শুরু করা ওয়েস্ট ইন্ডিজকে সকালেই চমকে দেন বাংলাদেশের বোলাররা। দ্রুতই তুলে নেন চারটি উইকেট। এক রানের মধ্যেই তিন উইকেট শিকার করেন স্বাগতিকদের। তবে সকালের প্রথম সশনে চমকে দেওয়া সফরকারী বোলাররা দিনের বাকীটা সময় হতাশায় পুড়েছেন। কাইল মায়ার্সের সেঞ্চুরিতে লিড বড় করার সুযোগ পায় দলটি।
ইনিংসের ২৬তম ওভারের শেষ বলে দলীয় ১০০ রানে প্রথম উইকেট হারায় দলটি। ব্যক্তিগত ৪৫ রানে ওপেনার জন ক্যাম্পেবলকে ফিরিয়ে দেন শরিফুল। এরপরই জোড়া আঘাত করেন পেসার খালেদ। তার আগে অবশ্য মিরাজ ফিরিয়ে দেন ক্যারিবিয়ান অধিনায়ক ব্র্যাথওয়েটকে। দলীয় ১৩১ রানে ইনিংসের ৩৮ ওভারের প্রথম বলে স্বাগতিক অধিনায়ককে ব্যক্তিগত ৫১ রানে সাজঘরে পাঠান তিনি।
৩৯তম ওভারের প্রথম ও শেষ বলে দুটি উইকেট শিকার করে স্বাগতিকদের চমকে দেন পেসার খালেদ। ওভারের প্রথম বলে দলীয় ১৩১ রানের মাথায় ব্যক্তিগত ২২ রান করা রায়মনকে বোল্ড করেন তিনি। ওভারের শেষ বলে রানের খাতা খুলার আগেই সাজঘরে পাঠিয়ে দেন বোনারকে। দিনের শেষ উইকেটটি হারায় স্বাগতিকরা দলীয় ২৪৮ রানের মাথায়। ইনিংসের ৭৪তম ওভারের চতুর্থ বলে ব্ল্যাকউডকে ফেরান মিরাজ। ৪০ রান করা এই ব্যাটার তার আগে পঞ্চম উইকেটে মায়ার্সকে নিয়ে ১১৬ রানের জুটি গড়েন।
বাংলাদেশের হয়ে খালেদ ৫টি, মিরাজ ৩টি ও শরিফুল ২টি করে উইকেট লাভ করেন।
এর আগে টস হেরে ব্যাট করতে নামা বাংলাদেশ কিছুটা ভাল শুরু করেছিলো। তবে হতাশ করেন মাহমুদুল হাসান জয়। তার বিদায়ের পর শান্তকে নিয়ে এগুচ্ছিলেন তামিম ইকবাল। দুর্দান্ত ব্যাট করা এই ড্যাশিং ওপেনার হাফ সেঞ্চুরি থেকে মাত্র ৪ রান দূরে থাকতেই ফিরলেন।
ইনিংসের ১২ ওভার পর্যন্ত নিরাপদেই কাটায় বাংলাদেশ। ১৩তম ওভারের দ্বিতীয় বলে ওপেনার জয় ফিরে গেলে ভাঙে ৪১ রানের উদ্বোধনী জুটি। ৩১ বলে এক চারে ১০ রান করেন এই ওপেনার। তার বিদায়ের পরও অবিচল ছিলেন তামিম ইকবাল। ফিফটি থেকে মাত্র ৪ রান দূরে থাকতে তিনি ফিরেন সাজঘরে। দলীয় ৬৮ রানে তার বিদায়ে দ্বিতীয় উইকেট হারায় টাইগাররা। ৪৬ রানের ইনিংসেই তিনি ৯টি বাউন্ডারি হাঁকানা। ৬৭ বল খেলেন এই ওপেনার।
তামিমের বিদায়ের পর ইনিংসের ৩৪তম ওভারের চতুর্থ বলে শতরা পেরুনো বাংলাদেশ ১০৫ রানে হারায় তৃতীয় উইকেট। ব্যক্তিগত ৩৩ বলে ২৩ রানে ফিলিপসের এলবিডাব্লিউ’র ফাঁদে পড়ে সাজঘরে ফিরেন বিজয়। তার বিদায়ের পর শান্ত ফিরেন পরের ওভারেই। দলীয় ১০৫ রানেই বাংলাদেশ হারায় চতুর্থ উইকেট। ৩৫তম ওভারের দ্বিতীয় বলে মায়ার্সের বলে তিনিও এলবিডাব্লিউ হন ব্যক্তিগত ২৬ রানে। ৭৩ বলের ইনিংসে চারটি চার হাঁকান তিনি। তার আগে দু’জনে মিলে তৃতীয় উইকেটে ৩৭ রানের জুটি গড়েন।
এরপর বাংলাদেশের ব্যাটাররা রীতিমতো যাওয়া-আসার মিছিল শুরু করেন। ৪ উইকেটে ১০৫ থেকে টাইগাররা অলআউট হয়ে যায় ৬৪.২ ওভারে ২৩৪ রানে। হাফ সেঞ্চুরিয়ান লিটন ব্যাট হাতে কিছু লড়াইয়ের চেষ্টা করেন। তবে ফিফটির পরপরই তিনি সাজঘরে ফিরলে বাংলাদেশের বড় স্কোরের স্বপ্ন শেষ হয়ে যায়। দলীয় ১৯১ রানে অষ্টম উইকেটে লিটন ফিরেন ব্যক্তিগত ৫৩ রানে। ৭০ বলের ইনিংসে আটটি চারের মার ছিলো। নবম উইকেটে এবাদত-শরিফুলের তৃতীয় সর্বোচ্চ ৩৬ রানের জুটিতে বাংলাদেশ দুইশো রানের কোটা পেরুতে পারেনি। এবাদত ৩৫ বলে ২১ রানে অপরাজিত থাকেন। চারটি বাউন্ডারিতে সাজান তার ইনিংসটি। পাঁচ চারে ১৭ বলে ২৬ রান করেন শরিফুল। অধিনায়ক সাকিবের ব্যাট থেকে আসে ৮ রান। সোহান করেন ৭ রান। ৯ রান করে সাজঘরে ফিরেন মিরাজ।
ক্যারিবিয়ানদের হয়ে জোসেফ ৫০ রানে ৩টি ও সিলিস ৫৩ রানে ৩টি করে উইকেট লাভ করেন।
এসএনপিস্পোর্টসটোয়েন্টিফোরডটকম/নিপ্র/ডেস্ক/০০