স্পোর্টস ডেস্ক: মাত্র ১৯ বছরের যুবক। কিশোরের দুরন্তপনায় ছুটে চলায়ই তার কাজ। এই বয়সেই খুলনার কিশোর মেহেদী হাসান মিরাজ হয়ে গেছেন দেশের তারকা, বিশ্বের তারকা।
সপ্তহ পনেরো দিনের ব্যবধানেই হয়ে উঠছেন কোটি ক্রিকেট প্রেমীর হৃদয়ের প্রাণ। পেয়ে গেছেন তারকার যশখ্যাতি। অনেকটা হিরো থেকে জিরোর মতই।
খুলনার সম্ভ্রান্ত এক সাধারণ পরিবারের সন্তান মিরাজ। কষ্ট করেই যার বেড়ে উঠা। বাবা জালাল হোসেনর চোখ ফাঁকি দিয়ে ক্রিকেট মাঠে পড়ে থাকা মিরাজ আজ বাংলাদেশের গর্ব।
অল্প দিনেই তারকা বনে গেলেও মিরাজ জানালেন তিনি আগের মিরাজই থাকবেন। মাঠের পারফর্মে হউক আর বন্ধু, পাড়া-প্রতিবেশি স্বজনে হউক মিরাজ বদলাবেন না। মাঠের পারফর্ম ধরে রাখবেন, বাংলাদেশকে এনে দিতে চান এমন আরো বহু জয়ের গল্প।
তবে বাস্তবতা মানছেন মিরাজ। জানালেন ঢাকার মাঠের সুবিধা পাবেন না অন্য কোথাও। কষ্ট করতে হবে তাঁকে। তবুও পারফর্মে থাকতে চান আগেরই মিরাজ। দুর্দান্ত পারফর্ম করেছেন ক্যারিয়ারের প্রথম দুই টেস্টেই। এর ধারাবাহিকতা চলে আসছে অনেক আগ থেকে। অনুর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপের সেরা খেলোয়াড় হয়েই এসেছেন জাতীয় দলে।
জাতীয় দলে এসেই পেয়ে গেছেন যশখ্যাতি আর তারকার মর্যাাদা। তবে তার যে ছিটেফুঁটে নেই তার কাছে বুঝা গেছে ইতিমধ্যে। টেস্টের পর সোজা চলে গেছেন খুলনার নিজ পাড়ায়।
রাজকীয কোন যান চড়ে নয়, বিলাসি ব্যবস্থাপনায় নয়, সোমবার আগের মিরাজই গেছেন নিজ শহরে। সোমবার-মঙ্গলবার দেখা করেছেন আত্মীয় স্বজন, বন্ধুদের সঙ্গে।
ঢাকা টেস্ট জয়ের পরই হোটেলে ডেকে নিয়ে এসেছেন বন্ধুদেরকে। বন্ধুদের সঙ্গে মেতে উঠে ছিলেন প্রাণবন্ত আড্ডায়। বন্ধুদেরও বিশ্বাস মিরাজ বদলাবেন না, আগের মিরাজই থাকবেন।
ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ইতিহাস গড়া জয়ের পর টিম হোটেলে সিনিয়র খেলোয়াড়দের সঙ্গে বেশ আনন্দ করে কাটিয়েছেন মিরাজ। হৈ-হুল্লোড়ে মেতে ছিলেন দলের সবাই। সে দিন রাতে ঘুমোতে গেছেন বেশ রাত করেই।
ঐতিহাসিক টেস্ট জয়ের রাতে ঘুম থেকে উঠেই মিরাজের মনে পড়ে বন্ধুদের কথা। ছোট বেলার বন্ধু আবির, বাধন ও সোহানকে ফোন করে বললেন, ‘তোরা চলে আয়, একা একা লাগছে’। বন্ধুরা হোটেল রেডিসনে হাজির হয়ে গেলেন ঘণ্টাখানেকের মধ্যেই।
মিরাজের এই বন্ধুরা ঢাকায় এসেছেন শুধু বন্ধর খেলা দেখতেই। চার তরুণের শৈশব-কৈশোর কেটেছে খুলনার খালিশপুরে। প্রাইমারি স্কুল, হাই স্কুল, কলেজের গন্ডি পেরিয়েছেন এক সাথে। খেলেছেন একই ক্রিকেট একাডেমিতে।
সোমবার বিসিবির একাডেমি ভবনের সামনেই মেহেদীর সঙ্গে বেশ ব্যস্ত দেখা যায় তাদেরকে। মিরাজের বন্ধু বাধন সাংবাদিকদের জানালেন, ‘মিরাজ ক্রিকেটার হিসেবে যত ভালো, মানুষ হিসেবে তার চেয়ে অনেক ভালো। সেই ক্লাস ওয়ান থেকে এক সাথে আমরা। খেলা শেষ করে নিজেই ফোন দিয়ে বলবে, কেমন পারফর্ম করেছে। আমরাও উৎসাহ দিয়ে যাই। যত খ্যাতিই পাক না কেন সে আমাদের আগের মিরাজই থাকবে।
প্রথম ইংল্যান্ড বধের নায়ক মেহেদী হাসান মিরাজের আরেক বন্ধু সোহান সাংবাদিকদের জানালেন, ‘মিরাজ ক্রিকেটার হওয়ার আগে যেমন ছিল, এখনও তেমন, কোনো পরিবর্তন নেই। মিরাজ ওই টাইপের না। বন্ধু মানে বন্ধু।’
সোমবার বিসিবি একাডেমিত মিরাজ সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমার এখনও দীর্ঘ পথ যেতে হবে। আমি যতই খেলব ততই আমার সামনে চ্যালেঞ্জ আসতে থাকবে। ঘরের মাঠে আমি টার্ন পাচ্ছি কিন্তু বাংলাদেশের বাইরে টার্ন পাব না। এজন্য আমাকে সব পরিস্থিতিতে মানিয়ে নিতে হবে। নতুন নতুন জিনিস শিখতে হবে। আমি আগের মিরাজই থাকব। কোনো পরিবর্তন হবে না’
এসএনপিস্পোর্টসটোয়েন্টিফোরডটকম/নিপ্র/ডেস্ক/বা/রা/০০