স্পোর্টস ডেস্ক:: দ্বিতীয় দিন শেষে আয়ারল্যান্ডের সংগ্রহ ছিলো ২৭ রানে চার উইকেট। তৃতীয় দিন আজ সকালেই বাংলাদেশ ইনিংস ব্যবধানে জিতে যাবে এমন সম্ভাবনা ছিলো। সেই সম্ভাবনা ধোপে টিকেনি। বিপর্যয় থেকে ঘুরে দাঁড়িয়েছে আয়ারল্যান্ড। ৬ অভিষিক্ত ক্রিকেটার নিয়ে মাঠে নামা আয়ারল্যান্ড বাংলাদেশের বোলারদের পরীক্ষা নিচ্ছে নিজেদের দ্বিতীয় ইনিংসে।
তৃতীয় দিন শেষ করেছে আরো চার উইকেট হারিয়ে। দিনের তৃতীয় সেশনেই লিড নেয় সফরকারী দলটি। দিন শেষ করেছে ৮ উইকেটে ২৮৬ রানে। লিড দাঁড়িয়েছে ১৩১ রান। হাতে এখনো দু’টি উইকেট আছে তাদের। লরকান টাকারের পর এন্ড্রি ম্যাকব্রিন ব্যাট হাতে শাসন করছেন বাংলাদেশের বোলারদের। দিন শেষে অপরাজিত আছেন ৭১ রানে। তার সঙ্গী ৯ রানে অপরাজিত থাকা গ্রাহাম হোম।
তৃতীয় দিন হতাশার বোলিংয়ে আয়ারল্যান্ডকে ইনিংস ব্যবধানে হারানো গেলো না। লরকান টাকার ও হ্যারি টেক্টরের ষষ্ঠ উইকেটে ৭২ রানের জুটির পর আইরিশরা লিড নেয়।
আজ সকালে পঞ্চম উইকেট হারানোর পর ষষ্ঠ উইকেটে প্রতিরোধ গড়ে আয়ারল্যান্ড। লরকান টাকার ও হ্যারি টেক্টর বেশ যন্ত্রণা দিয়েছেন টাইগার বোলারদের। লাঞ্চ ব্রেকের পর অবশেষে তাদের ৭২ রানের জুটি ভেঙেছেন তাইজুল।
৫৭তম ওভারের প্রথম বলে দলীয় ১২৩ রানের মাথায় ৭২ রানের জুটি ভাঙেন তাইজুল। ১৫৯ বলে ৫৬ রান করে সাজঘরে ফিরেন টেক্টর। সাত চার ও এক ছক্কায় সাজান নিজের ইনিংসটি।
২৭ রানে চার উইকেট নিয়ে তৃতীয় দিন শুরু করা আয়ারল্যান্ড সকালেই হারিয়েছে পঞ্চম উইকেট। ইনিংসের ৩৩তম ওভারের প্রথম বলে পিটার মুরকে লিটনের ক্যাচে পরিণত করেছেন শরিফুল। ৭৬ বলে ১৬ রান করেছেন তিনি।
বাংলাদেশের হয়ে তাইজুল ৪টি ও সাকিব ২টি করে উইকেট লাভ করেছেন।
নিজেদের প্রথম ইনিংসে দারুণ ব্যাটিংয়ের পর দারূণ বোলিংয়ে দাপট দেখাচ্ছে বাংলাদেশ দল। ম্যাচের দ্বিতীয় দিনে একচ্ছিত্র আধিপত্য টাইগারদের। আর এতেই বিপাকে আয়ারল্যান্ড। দলটির ইনিংস হারের শঙ্কা ঝেঁকে বসেছে। দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাটিং বিপর্যয়ই যার বড় কারণ।
আয়ারল্যান্ডের করা ২১৪ রানের জবাবে বাংলাদেশ নিজেদের প্রথম ইনিংসে অলআউট হয়েছে ৩৬৯ রানে। এরপর শেষ বিকেলে বাংলাদেশের দেওয়া ১৫৫ রানের লিডের বোঝা নিয়ে ব্যাটিং করতে নেমে সাকিব আল হাসান, তাইজুল ইসলামদের দারুণ বোলিংয়ে বিপর্যস্ত হয় সফরকারীদের ব্যাটিং লাইনআপ। দিন শেষে দলটির সংগ্রহ ১৭ ওভারে ৪ উইকেট হারিয়ে ২৭ রান। এখনও বাংলাদেশের চেয়ে পিছিয়ে আছে ১২৮ রানে।
আইরিশরা দ্বিতীয় ইনিংসে খেলতে নেমে একেবারে প্রথম ওভারেই সাকিব আল হাসানের এলবিডব্লিউর শিকারে পরিণত হয়ে গোল্ডেন ডাক মেরে ফিরেন ওপেনার জেমস ম্যাককালাম। শুরুতে আম্পায়ার আলিম দার আবেদনে সাড়া না দিলেও, পরবর্তীতে রিভিউ নেন সাকিব। এতে প্রথম উইকেটের দেখা পায় বাংলাদেশ।
তাইজুল ইসলামের করা চতুর্থ ওভারের চতুর্থ বলে তাইজুলের শিকার হয়ে ফিরেন আরেক ওপেনার মুরে কমিন্স। ১২ বলে ১ রান করা এই ব্যাটার রিভিউ নিয়েও বাঁচতে পারেননি। ষষ্ঠ ওভারে দলীয় ৮ রানের মাথায় তৃতীয় উইকেট হারায় আইরিশরা। এবার তাইজুলের বলে বোল্ড আউট হয়ে ফিরেন অধিনায়ক অ্যান্ড্রি বালবার্নি।
১০ রানের আগেই টপ অর্ডারের তিন ব্যাটারকে হারানো আয়ারল্যান্ড দলীয় ১৩ রানের মাথায় হারায় আরও এক উইকেট। এবার সপ্তম ওভারের তৃতীয় বলে সাকিব আল হাসানের করা বলে এলবিডব্লিউর শিকার হয়ে ফিরেন কার্টিস ক্যাম্ফার। ৪ বলে ১ রান করে প্যাভিলিয়নের পথ ধরেন ক্যাম্ফার।
এরপর দলের হাল ধরার চেষ্টা করেন হ্যারি টেক্টর ও পিটার মুর। দুজনের অবিচ্ছিন্ন ১৪ রানের মাটি কামড়ে পড়ে থাকা জুটিতে কোনো রকমে দিন পার করে আয়ারল্যান্ড। ৪০ বলে ১ বাউন্ডারিতে ৮ রান করে অপরাজিত আছেন টেক্টর। আর ৩৩ বলে ২ বাউন্ডারিতে ১০ রান করে অপরাজিত আছেন পিটার।
এর আগে মিরপুরের হোম অব ক্রিকেটে নিজেদের প্রথম ইনিংসে আগের দিনের করা ২ উইকেট হারিয়ে ৩৪ রান নিয়ে দ্বিতীয় দিন আজ সকালে ফের ব্যাটিংয়ে নামে বাংলাদেশ দল। তবে শুরুতেই বড় ধাক্কা খায় স্বাগতিকরা। দিনের তৃতীয় ওভারেই প্যাভিলিয়নের পথ ধরেন টপ অর্ডার ব্যাটার মুমিনুল হক।
মার্ক অ্যাডায়ারের বলে বোল্ড আউট হয়ে মুমিনুল বিপদে ফেলে যান দলকে। দলীয় ৪০ আর ব্যক্তিগত ১৭ রানে কাঁটা পড়েন এই বাঁহাতি ব্যাটার। ৪০ রানের ৩ উইকেট হারানো দলের হয়ে এরপরই হাল ধরেন দুই অভিজ্ঞ মুশফিকুর রহিম ও সাকিব আল হাসান। দুজনের দারুণ জুটিতে ছুটে চলে বাংলাদেশ। দলের রান দেড়শ’র ঘর পার করেই দুজন মধ্যাহ্ন বিরতিতে যান। এর আগে অবশ্য ফিফটি পূরণ করে নেন। বিরতি থেকে ফিরে এসে, আরও ২৯ রান যোগ করেন দলের নামের পাশে।
তবে দলের রান দুইশ ছোঁয়ার আগেই প্যাভিলিয়নে ফেরেন সাকিব। মধ্যাহ্ন বিরতি থেকে ফিরে এসে ভালো ব্যাট করলেও, মাত্র ১৩ রানের জন্য তিন অঙ্কের রানের ঘর স্পর্শ করতে পারেননি এই বাঁহাতি। ৪৪তম ওভারের শেষ বলে দলীয় ১৯৯ রানের মাথায় তিনি আউট হন ম্যাকব্রাইনের বলে। তবে এর আগে আক্রমণাত্বক ব্যাটিংয়ে ৯৪ বলে ১৪ বাউন্ডারিতে ৮৭ রান করেন তিনি। টেস্ট ক্রিকেটে এটি তার ৩১তম ফিফটি।
চতুর্থ উইকেট মুশফিকুর রহিমের সাথে ১৫৯ রানের অনবদ্য জুটি গড়েছিলেন সাকিব। সেই জুটিতেই বিপদ থেকে রক্ষা পায় বাংলাদেশ। সাকিবের আউটের পর উইকেটে আসেন লিটন দাস। মুশফিকুর রহিম তাকে নিয়ে বেশ ভালোই এগোচ্ছিলেন। দুজনের ব্যাটে আয়ারল্যান্ডের করা ২১৪ রান টপকে লিড নেয় বাংলাদেশ।
সাকিব না পারলেও, সেঞ্চুরি পূরণ করেন মুশফিকুর রহিম। টেস্ট ক্যারিয়ারে নিজের দশম সেঞ্চুরির দেখা পান এই তারকা ব্যাটার। প্রায় এক বছর পর এই ফরম্যাটে সেঞ্চুরি হাঁকান। সবশেষ ২০২২ সালে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে এই মিরপুরে সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছিলেন। মাঝে ভারতের বিপক্ষে দুটি টেস্ট ম্যাচ খেলেছেন গেল বছরের শেষ দিকে। তবে সেসময় খুব একটা রান পাননি।
তবে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচে এসে বড় রানের দেখা পেলেন মিস্টার ডিপেন্ডেবল। বাউন্ডারি হাঁকিয়ে সেঞ্চুরি পূরণ করেন নিজের খেলা ১৩৫ বলে। এর আগে ফিফটিও পূরণ করেছিলেন বাউন্ডারি হাঁকিয়ে। মুশফিকের সেঞ্চুরির সাথে লিটন দাসের আক্রমণাত্বক ব্যাটিংয়ে বাংলাদেশ বেশ ভালোভাবেই এগোচ্ছিল।
তবে হুট করে ৮৭ রানের জুটি ভেঙে প্যাভিলিয়নে ফিরেন লিটন দাস। ম্যাচের ৫৮তম ওভারের তৃতীয় বলে রান আউট হওয়া থেকে বেঁচে যান লিটন। একেবারে সহজ রান আউট করতে পারেনি আইরিশরা। কিন্তু এমন জীবন পেয়েও বেন ওয়াইটের একই ওভারে এক বল পরেই লং অফে উড়িয়ে মারতে গিয়ে মিড অফে লরকান টাকারের সহজ ক্যাচে পরিণত হন।
আউট হওয়ার আগে ৪১ বলে ৮ বাউন্ডারিতে ৪৩ রান করেন। মাত্র ৭ রানের জন্য ফিফটি মিস করেন তাড়াহুরোর কারণে। লিটনের বিদায়ে খানিকটা বিপাকেই বাংলাদেশ দল। সেখান থেকে এখন মিরাজকে সাথে নিয়ে দলকে টানেন মুশফিক। চা-বিরতির আগে ৩০ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটিতে দলের রান পার করেন তিনশ। একইসাথে বাংলাদেশকেও এনে দেন শত রানের লিড।
তবে চা-বিরতি থেকে ফিরেই মুশফিকের গুরুত্বপূর্ণ উইকেট হারায় দল। ব্যক্তিগত ১২৬ রানের মাথায় কাঁটা পড়েন ম্যাকব্রাইনের বলে। ৬৮তম ওভারের দ্বিতীয় বলে লং অনে মুশফিক ক্যাচ আউট হন। দারুণ ডাইভ দিয়ে কমিন্স সেটি লুফে নেন। দলকে বাঁচানো নিজের দুর্দান্ত ইনিংসটি মুশফিক সাজিয়েছেন ১৫ বাউন্ডারি ও ১ ছক্কার মারে।
এই তারকার বিদায়ে খানিকটা বিপাকেই পড়ে বাংলাদেশ। শেষ দিকে লোয়ার অর্ডার ব্যাটিং লাইনআপকে নিয়ে একা লড়াইয়ের চেষ্টা চালান মিরাজ। তবে খুব বেশি দূর যেতে পারেননি। ৮০.৩ ওভারে ৩৬৯ রানেই থেমে যায় বাংলাদেশের ইনিংস। একেবারের শেষ ব্যাটার হিসেবে আউট হওয়ার আগে মিরাজ পূরণ করেন নিজের ফিফটি। টেস্ট ক্যারিয়ারে নিজের চতুর্থ ফিফটি হাঁকিয়ে মিরাজ খেলেন ৮০ বলে ৬ বাউন্ডারি ও ২ ছক্কায় ৫৫ রানের ইনিংস।
আয়ারল্যান্ডের হয়ে একাই ৬ উইকেট শিকার করেন ম্যাকব্রাইন। টেস্ট ক্যারিয়ারে এই প্রথম নিজের পাঁচ বা এর বেশি উইকেটের দেখা পেলেন ডানহাতি এই অফ স্পিনার। শুধুমাত্র নিজেরই না, আয়ারল্যান্ডের ইতিহাসের প্রথম বোলার হিসেবে টেস্টে ছয় উইকেট পেয়েছেন। নিশ্চিতভাবেই তার ক্যারিয়ার সেরা ফিগার এটি। এর বাইরে মার্ক অ্যাডায়ার ও বেন ওয়াইট দুটি করে উইকেট লাভ করেন।
এসএনপিস্পোর্টসটোয়েন্টিফোরডটকম/নিপ্র/ডেস্ক/০০
Discussion about this post