স্পোর্টস ডেস্কঃ ওয়ানডে বিশ্বকাপ ইতিহাসে সবচেয়ে বড় জয় অস্ট্রেলিয়ার। নেদারল্যান্ডসকে আজ মাত্র ৯০ রানে অলআউট করেছে অজিরা। বুধবার দিল্লিতে আগে ব্যাট করে ৩৯৯ রানের পাহাড় গড়ে প্যাট কামিন্সের দল। জবাব দিতে নেমে মাত্র ৯০ রানে শেষ হয়ে যায় ডাচদের ইনিংস। ৩০৯ রানের জয়ে বিশ্ব রেকর্ড গড়ল সাবেক বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা। রানের হিসেবে সবচেয়ে বড় জয়। ওয়ানডে ইতিহাসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ব্যবধানে।
অস্ট্রেলিয়ার বোলিং তোপে ২১ ওভারে মাত্র ৯০ রানে অলআউট হয় নেদারল্যান্ডস। স্পিনার অ্যাডাম জাম্পা ৮ রানে ৪ উইকেট নেন। এই জয়ে ৫ খেলায় ৬ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের চতুর্থস্থানে আছে অস্ট্রেলিয়া। ৫ ম্যাচ শেষে ভারত ১০, দক্ষিণ আফ্রিকা-নিউজিল্যান্ড ৮ করে পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের শীর্ষ তিনটি স্থানে আছে। এ ম্যাচ বড় ব্যবধানে হেরে যাওয়ায় রান রেটে পিছিয়ে পড়ে ৫ খেলায় ২ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের তলানিতে চলে গেল নেদারল্যান্ডস। এতে নবমস্থানে উঠলো বাংলাদেশ। গতকাল দক্ষিণ আফ্রিকার হেরে টেবিলের তলানিতে জায়গা করে নিয়েছিলো ৫ খেলায় ২ পয়েন্ট পাওয়া সাকিব আল হাসানের দল।
৪০০ রানের টার্গেটে ব্যাট করতে নেমে শুরুটা মন্দ হয়নি নেদারল্যান্ডসের। দুই ওপেনার ম্যাক্স ও’ডাউড এবং বিক্রমজিৎ সিং শুরু করেছেন ভালোভাবেই। ৪ ওভারে রান উঠেছিল ৭ এর উপরে। তবে ওটুকুই ছিল বলার মত। ৫ম ওভারে ম্যাক্সকে সরাসরি বোল্ড করে ধ্বংসযজ্ঞের শুরু করেন মিচেল স্টার্ক। ৯ রান আর এক ওভার পর আবার উইকেটের পতন। ম্যাক্সওয়েলের দুর্দান্ত রানআউটে সাজঘরে ফেরেন বিক্রমজিৎ। ১০ রান পর আরও একবার উইকেটের পতন। এবার অধিনায়ক কলিন অ্যাকারম্যান ফিরেন জশ হ্যাজেলউডের বলে লেগ বিফোরের শিকার হয়ে। আর ৫৩ রানে নির্ভরযোগ্য বাস ডি লিড আউট হলে ডাচদের পরাজয় হয়ে যায় সময়ের ব্যাপার। ৫৩ রানে ৪ উইকেট হারানোর পর ম্যাচে আর খুঁজে পাওয়া যায়নি কমলা শিবিরকে।
অ্যাঙ্গেলব্রাখট, তেজা নিদামানুরু কেউই টিকতে পারেননি এমন বোলিং তোপের সামনে। ৮৪ থেকে ৯০ এই ৬ রান তুলতেই শেষ ৫ উইকেট হারায় ডাচরা। মাঝে হ্যাটট্রিকের সম্ভাবনা জাগিয়েছিলেন লেগস্পিনার জাম্পা। যদিও শেষ পর্যন্ত হতাশই হতে হয়েছে তাকে। ডাচদের ইনিংসে বিক্রমজিৎ সিং ছাড়া ২০ এর বেশি রান করতে পারেননি কেউই। শেষ পর্যন্ত মাত্র ৯০ রানেই অলআউট হয়ে ৩০৯ রানের পরাজয় বরণ করতে হয় তাদের। এটি বিশ্বকাপের ইতিহাসে সর্বোচ্চ ব্যবধানে পরাজয়।
এর আগে দিল্লির অরুণ জেটলি স্টেডিয়ামে নেদারল্যান্ডসের বোলারদের নিয়ে যেন ছেলেখেলায় মেতেছিল অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটাররা। ডেভিড ওয়ার্নার ৮৯ বলেই সেঞ্চুরির দেখা পেয়েছিলেন। রান এসেছিল স্টিভেন স্মিথ এবং মার্নাস লাবুশেনের ব্যাটেও। তবে গ্লেন ম্যাক্সওয়েল ছাড়িয়ে গেলেন সবাইকে। একের পর এক চার-ছয়ে ডাচ বোলারদের দুঃস্বপ্নই উপহার দিয়েছেন তিনি। শেষ পর্যন্ত ৩৯৯ রানের পাহাড় গড়ে অজিরা।
বিশ্বকাপের ইতিহাসে আজ দ্রুততম সেঞ্চুরি হাঁকান ম্যাক্সওয়েল। মাত্র ৪০ বলে সেঞ্চুরির দেখা পান তিনি। এতে তিনি ছাড়িয়ে গেছেন চলতি বিশ্বকাপে দ্রুততম সেঞ্চুরি হাঁকানো দক্ষিণ আফ্রিকার অ্যাইডেন মার্করামকে। আজ ৮ চার ও সমানসংখ্যক ছয়ে সেঞ্চুরি করেন ম্যাক্সওয়েল। শেষ পর্যন্ত ৪৪ বলে ১০৬ রান করে আউট হন তিনি।ম্যাক্সওয়েলের আগে বিশ্বকাপে দ্রুততম সেঞ্চুরির রেকর্ডটি ছিল মার্করামের। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ক’দিন আগেই ৪৯ বলে সেঞ্চুরি করেছিলেন তিনি।
২০১১ সালের বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ৫০ বলে সেঞ্চুরি করেছিলেন আয়ারল্যান্ডের কেভিন ও’ব্রায়েন। এবার তাদেরকে ছাড়িয়ে গেলেন ম্যাক্সওয়েল। এর আগে টস হেরে বোলিংয়ে নামা নেদারল্যান্ডস উইকেট পায় লোগান ফন বিকের বলে। পুলে ক্যাচ তুলে দেন অজি ব্যাটার মিচেল মার্শ, ১৫ বলে ৯ রানেই থেমে যায় তার ইনিংস। এরপর ওয়ার্নার-স্মিথ মিলে ৬৬ রানে পাওয়ার প্লে শেষ করেন। ৪০ বলে ফিফটি হাঁকান বাঁহাতি ওয়ার্নার। স্মিথ ফিফটি পূর্ণ করে ফেলেন ৫৩ বলে। দলীয় ১৬৮ রানে স্মিথ আউট হয়ে যান। ৬৮ বলে ৭১ রান করেন ৯ চার ও ১ ছক্কায়।
নতুন ব্যাটার মারনাস লাবুশেন ৪২ বলে ফিফটি পাওয়ার পর বেশিক্ষণ যদিও টিকেননি। ৪৭ বলে ৬২ রান করে আউট হয়ে যান। দ্রুত ফিরেন জস ইংলিস। ৯১ বলে সেঞ্চুরি পাওয়ার দুই বল পরই আউট হয়ে যান ওয়ার্নারও।এরপর শুরু হয় দিল্লিতে ম্যাক্সওয়েল তাণ্ডব! ২৭ বলে ফিফটি ছুঁয়ে ফেলার পর সেঞ্চুরি এসে যায় ৪০ বলেই! ভেঙ্গে দেন চলতি বিশ্বকাপেই ৪৯ বলে এইডেন মার্করামের গড়া দ্রুততম সেঞ্চুরির রেকর্ড। সেঞ্চুরির পর ম্যাক্সওয়েলের তোলা ঝড় থামে গিয়ে ১০৬ রানে। ৪৪ বলের সে ইনিংসে ৯ চারের সাথে মারেন ৮টি ছয়। শেষ ওভারে ম্যাক্সওয়েল আউট হয়ে গেলে অজিদের সংগ্রহটাও আর চারশ ছাড়িয়ে যায়নি।
এসএনপিস্পোর্টসটোয়েন্টিফোরডটকম/নিপ্র/ডেস্ক/১১০