নিজস্ব প্রতিবেদকঃ ১৫৯ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে যেভাবে ইংল্যান্ডকে চালাচ্ছিলেন ডেভিড মালান ও জস বাটলার চালাচ্ছিলেন, এতে মহা চিন্তায় পড়ে গিয়েছিল বাংলাদেশ। হোয়াইটওয়াশ বুঝি আর হলো না। তবে মুস্তাফিজুর রহমান ও তাসকিন আহমেদের দুর্দান্ত বোলিংয়ে ম্যাচ ফিরে বাংলাদেশ।
অবদান কম নয় মেহেদী হাসান মিরাজের দুর্দান্ত ফিল্ডিং আর সাকিব আল হাসানের ডেথ ওভারে দারুণ বোলিংও। এরপরও শেষ ওভারে ৩১ রানের সমীকরণে ক্রিস ওকস যখন হাসান মাহমুদের প্রথম দুই বলে এক ছয় ও এক চারে ১০ রান নেন, বাংলাদেশের কপালে দুঃশ্চিন্তার ভাঁজ।
তবে সেখান থেকে শেষ চার বল দারুণভাবেই করেছেন হাসান। আর এতেই নতুন ইতিহাস। ইংল্যান্ডকে ১৬ রানে হারিয়ে ৩-০’তে সিরিজ জয় নিশ্চিত করলো টাইগাররা। ইংলিশদের দিল ‘বাংলাওয়াশের’ লজ্জা। বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের এই প্রথম কোনো সিরিজে হোয়াইটওয়াশ করলো বাংলাদেশ।
বাংলাদেশের ছুঁড়ে দেওয়া লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে ইনিংসের প্রথম ওভারেই ফিল সল্টের উইকেট হারায় ইংল্যান্ড। অভিষিক্ত তানভীরের বলে স্টাম্পিংয়ের শিকার হয়ে গোল্ডেন ডাক মেরে ফিরেন সল্ট। এতে দুঃশ্চিন্তায় পড়ে সফরকারীরা। তবে সেই দুঃশ্চিন্তা কাটিয়ে দলকে কক্ষপথে ফেরান ডেভিড মালান ও অধিনায়ক জস বাটলার। দুজনের ৯৫ রানের জুটিতে জয়ের সুবাস পাচ্ছিল সফরকারীরা।
কিন্তু ১৪তম ওভারে এসে সেই জুটি ভেঙেছেন মুস্তাফিজুর রহমান। ক্যারিয়ারের ১৫তম টি-টোয়েন্টি ফিফটি হাঁকানো মালানকে প্যাভিলিয়নের পথ ধরান। উইকেটের পেছনে লিটন দাসের লাফিয়ে উঠা দারুণ ক্যাচে পরিণত হয়ে ৫৩ রান করে আউট হন এই বাঁহাতি। ৪৭ বলের ইনিংসে ৬ বাউন্ডারি ও দুই ওভার বাউন্ডারিতে যখন মালান আউট হন, তখন কিছুটা স্বস্তি মিলে বাংলাদেশ শিবিরে।
এরপরের বলেই আরও একটি উইকেট তুলে নিয়ে ম্যাচ জমিয়ে তুলে স্বাগতিকরা। এবার মেহেদী হাসান মিরাজের দুর্দান্ত এক সরাসরি থ্রো’তে রান আউটে কাঁটা পড়েন আরেক সেট ব্যাটার জস বাটলার। ৩১ বলে ৪ বাউন্ডারি ও ১ ছক্কায় ৪০ রান করা ইংলিশ অধিনায়ক বাটলারকে ফেরাতেই ম্যাচে ফিরে বাংলাদেশ। দুই বলে দুই সেট ব্যাটার আউট হওয়ায় ইংলিশদের কপালে তখন দুঃশ্চিন্তার ভাজ।
যদিও উইকেটে এসে খানিকটা আতঙ্ক ছড়ান মঈন আলি ও বেন ডাকেট। তবে ১৭তম ওভারে নিজের কোটার শেষ ওভারটি করতে এসেই চমক দেখান তাসকিন আহমেদ। দুজনের ১৯ রানের জুটি ভেঙে দেন ৯ রান করা মঈনকে ফিরিয়ে। একই ওভারে ১১ রান করে বেন ডাকেটকে বোল্ড আউট করলে বাংলাদেশের জয়ের আশা খুঁজে পায়। ১৮তম ওভারে এসে দারুণ বোলিং করে সেই আশা আরও বাড়িয়ে দেন মুস্তাফিজ। আর ১৯তম ওভারের প্রথম বলেই স্যাম কারানকে আউট করে প্রায় জয় নিশ্চিত করে ফেলেন অধিনায়ক সাকিব।
শেষ ওভারের শুরুতে খানিকটা দুঃশ্চিন্তা দেখা দিলেও, শেষ পর্যন্ত তীরে এসে তরি ডুবনি। ইংল্যান্ডকে ২০ ওভারে ৬ উইকেটে ১৪০ রানে আটকে দিয়ে জয়ের দেখা পায় বাংলাদেশ। ১৩ রানে অপরাজিত থাকেন ওকস। আর ২ রানে অপরাজিত থাকেন ক্রিস জর্ডান।
বাংলাদেশের হয়ে তাসকিন ২৬ রানে ২টি উইকেট নিয়েছেন। ১ উইকেট পাওয়া মুস্তাফিজ মাত্র ১৪ রান খরচ করেছেন। তানভীর-সাকিবরাও ১টি করে উইকেট লাভ করেছেন।
এর আগে হোম অব ক্রিকেটে টস হেরে ব্যাট করতে নামা বাংলাদেশ দল ২০ ওভারে ২ উইকেট হারিয়ে ১৫৮ রান তুলে স্কোরবোর্ডে। লিটন দাস ও রনি তালুকদারের ৫৫ রানের উদ্বোধনী জুটিতে শুরুটা বেশ দারুণ করে টাইগাররা। ২২ বলে ৩ বাউন্ডারিতে ২৪ রান করে রনি ফিরলে ভাঙে সেই জুটি।
তবে টপ অর্ডারে নামা শান্তর সাথে ৮৪ রানের দুর্দান্ত এক জুটি গড়ে দলের রান বাড়াচ্ছিলেন লিটন দাস। কিন্তু আক্রমণাত্বক হতে গিয়ে ফিফটি হাঁকিয়ে ফিরে যান লিটন। এর আগে আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে ক্যারিয়ার সেরা ৭৩ রানের ইনিংস খেলে যান তিনি। ৫৭ বলে ১০ চার ও ১ ছক্কায় অনবদ্য এই ইনিংস সাজান এই ওপেনার। ৪১ বলে আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টির নিজের নবম ফিফটি পূর্ণ করেন লিটন। অবশ্য অর্ধ-শতকের পরই ফিরে যেতে পারতেন তিনি। তবে লিটনের সহজ সেই ক্যাচ ছেড়ে দেন বেন ডাকেট। এরপরই শুরু হয় লিটনের চার-ছক্কার ফুলঝরি।
লিটনের বিদায়ে সাকিব আসেন উইকেটে। তবে খুব একটা সুবিধা করতে পারেননি। শেষ পাঁচ ওভারে হাতে উইকেট থাকা স্বত্ত্বেও বড় রান করতে পারেনি বাংলাদেশ। শেষ ৫ ওভারে ব্যাটারদের ব্যাট থেকে এসেছে মাত্র ২৭ রান। কোনোমতে দেড়শ পার করেই থামে দলের ইনিংস। ইনফর্ম শান্ত অপরাজিত থাকেন ৩৬ বলে ৪৭ রানে। ২ ছক্কা ও ১ চারে তিনি এই ইনিংস সাজান। ৬ বলে ৪ রান করে অপরাজিত ছিলেন সাকিব।
ইংল্যান্ডের হয়ে ১টি করে উইকেট নিয়েছেন আদিল রশিদ ও ক্রিস জর্ডান। এই দুটি উইকেটই জোর্ফ্রা আর্চারের নামের পাশে থাকতে পারত। কিন্তু দুটি সহজ ক্যাচ মিস সেটি হতে দেয়নি।
এসএনপিস্পোর্টসটোয়েন্টিফোরডটকম/নিপ্র/সা
Discussion about this post