বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের কাঁপিয়ে বাংলাদেশের ঐতিহাসিক জয়

    0
    0

    কাইয়ুম আল রনি:: বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন নিউজিল্যান্ড। আইসিসির টেস্ট র‌্যাঙ্কিংয়েও দলটি দুইয়ে। তাদের বিপক্ষে তাদের মাঠে আগের ৩২ ম্যাচের একটিতে মিলেনি জয়। টেস্টে জয়তো বহু দূরের পথ ছিলো। সেই দূরের পথের ইতি ঘটিয়েছে বাংলাদেশ।

    ঘরের মাঠে স্বাগতিক নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ৮ উইকেটের বড় ব্যবধানে হারিয়ে ঐতিহাসিক জয় তুলে নিয়েছে বাংলাদেশ দল। সাদা পোশাকের বিবর্ণ বাংলাদেশ দল ব্ল্যাক ক্যাপসদের হারিয়ে হয়ে উঠলো রঙিন এক দল। দাপুটে জয়ে ঘুরে দাঁড়ালো। সমালোচকদের কড়া একটা জবাবও দিলো।

    বিশ্ব টেস্ট চ‍্যাম্পিয়ন নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে এখনো টেস্ট জয়ের স্বাদ মিলেনি টাইগারদের। এবার তাদের হারিয়ে সেই অপূূর্ণতা ঘুঁচালো টাইগাররা। ১৩০ রানে পিছিয়ে পড়ে দ্বিতীয় ইনিংস শুরু করা নিউজিল্যান্ড অলআউট হয়েছে মাত্র ১৬৯ রানে। তাতে বাংলাদেশ টার্গেট পায় মাত্র ৪০ রান। ২ উইকেট হারিয়ে হেসে খেলে টপকে যায় লক্ষ্য।

    জয়ের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নামা বাংলাদেশ ইনিংসের ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারের পঞ্চম বলে দলীয় ৩ রানে হারায় প্রথম উইকেট। ব্যক্তিগত ৩ রানে সাজঘরে ফিরে যান ওপেনার সাদমান। চোটে থাকায় ওপেনার জয়ের পরিবর্তে ইনিংস উদ্বোধন করতে নামা আরেক ওপেনার শান্তিও ফিরে যান দ্রুত। ইনিংসের ১৫তম ওভারের দ্বিতীয় বলে দল জয় থেকে ৬ রান দূরে থাকতে ব্যক্তিগত ১৭ রানে তিনি ফিরেন প্যাভেলিয়নে।

    দুই ওপেনারকে হারানো বাংলাদেশকে এরপরে আর বিপদে পড়তে দেননি অধিনায়ক মুমিনুল হক ও ব্যাটার মুশফিকুর রহিম। তিন চারে ৪ বলে ১৩ রানে মুমিনুল ও ৭ বলে এক চারে ৫ রানে মুশফিক ঐতিহাসিক জয় নিয়ে মাঠ ছাড়েন।

    নিউজিল্যান্ডের হয়ে কাইল জেমিসন ও টিম সাউদি ১টি করে উইকেট লাভ করেন।

    এর আগে ৫ উইকেটে ১৪৭ রান নিয়ে চতুর্থ দিন শেষ করা স্বাগতিক নিউজিল্যান্ড দ্বিতীয় ইনিংসে বেশি দূর যেতে পারেনি। আজ সকালে ৫ রান তুরতেই হারায় বাকী ৫ উইকেট। এবাদত, তাসকিনদের বোলিং তোপে স্বাগতিকরা গুটিয়ে যায় ১৬৯ রানে। পিছিয়ে পড়া নিউজিল্যান্ড নিজেদের দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে দ্রুতই হারিয়েছে উইকেট। ইনিংসের নবম ওভারের চতুর্থ বলে তাসকিনের শিকারে কিউ অধিনায়ক টম লাথাম দলীয় ২৯ রানের মাথায় ফিরেন সাজঘরে। দুই বাউন্ডারিতে ৩০ বলে করেন ১৪ রান। প্রথম ইনিংসে স্বাগতিকদের সেঞ্চুরিয়ান ডেভন কনওয়েকে বেশিদুর যেতে দেননি এবাদত হোসেন। ইনিংসের ২৫তম ওভারের দ্বিতীয় বলে ব্যক্তিগত ১৩ রানে আর দলীয় ৬৩ রানে সাদমানের ক্যাচে পরিণত হয়ে তিনি ফিরেন সাজঘরে।

    বাংলাদেশের হয়ে তাসকিন ও এবাদত ২টি করে উইকেট শিকার করেছেন।

    এর আগে তৃতীয় দিন ৬ উইকেটে ৪০১ রান নিয়ে দিন শেষ করা বাংলাদেশ আজ চতুর্থ দিনে অবশ্য বেশিদুর যেতে পারেনি। ১৭৬.২ ওভারে অলআউট হয় ৪৫৮ রানে। তাতে অবশ্য ১৩০ রানের ‍লিড পায় সফরকারী দলটি। শান্ত, জয়ের জোড়া হাফ সেঞ্চুরির পর এবার অর্ধশক করে বাংলাদেশকে লিড এনে দিলেন অধিনায়ক মুমিনুল হক ও ব্যাটার লিটস দাস। এশিয়ার বাইরে প্রথমবারের মতো প্রথম ইনিংসে লিড নিলো বাংলাদেশ।

    বিদেশের মাঠে লিড, তাও কিউ বোলারদের দুর্দান্ত এ্যাটাক সামলে ৩২৮ রান টপকে। মাউন্ট মঙ্গানুই টেস্টে তৃতীয় দিনটাও হয়ে যায় বাংলাদেশের। মুশফিকের বিদায়ের পর পঞ্চম উইকেটে জুটি গড়েন মুমিনুল হক ও লিটন দাস। পঞ্চম উইকেটে তাদের গড়ে উঠে ১৫৮ রানের দুর্দান্ত এক জুটি। বাংলাদেশকে সেই জুটিই লিড এনে দেয়। নিউজিল্যান্ডের করা প্রথম ইনিংসে ৩২৮ রানের ইনিংস টপকে এশিয়ার বাইরে প্রথমবারের মতো প্রথম ইনিংসে লিড নেয় বাংলাদেশ।

    তবে এই জুটি ভাঙেন সেই বোল্টই। মুমিনুলকে এলবিডব্লিউতে ফেরান তিনি। মুমিনুল ফিরেছেন ৮৮ রান করে। তার ইনিংসটি অবশ্য ছিল চোয়ালবদ্ধ ব্যাটিংয়ে সাজানো। ২৪৪ বলের ইনিংসটিতে হাঁকিয়েছেন ১২ বাউন্ডারি। কিন্তু ১২ রানের পুড়তে হয়ে সেঞ্চুরি মিসের আক্ষেপে। মুমিনুলের বিদায়ের পর বেশি সময় উইকেটে টিকতে পারেননি লিটনও।

    আবারও বোল্টের বলে ফিরেছেন উইকেটের পেছনে টম ব্লান্ডেলের হাতে ক্যাচ দিয়ে। তবে এর আগে ১৭৭ বলে খেলে যান ৮৬ রানের দারুণ এক ইনিংস। যেখানে হাঁকিয়েছেন ১০ বাউন্ডারি। কিন্তু বাংলাদেশের সেঞ্চুরি মিসের তালিকাটা লম্বা করে যান। দিনের বাকিটা সময় বেশ ভালোভাবেই পার করেন ইয়াসির ও মিরাজ। আজ সকালে ব্যাট করতে নামা দুই অপরাজিত ব্যাটার মিরাজ ও ইয়াসির অবশ্য বেশিদুর যেতে যারেননি। ব্যক্তিগত ১১ রান নিয়ে ব্যাট করতে নামা ইয়াসির আজ ফিরেছেন ২৬ রানে। ২০ রানে ব্যাট করতে নামা মিরাজ ফিরেন ৪৭ রানে। বাংলাদেশ তাতে থামে ৪৫৮ রানে।

    তৃতীয় দিনের শুরুটা অবশ্য ভাল হয়নি টাইগাদের। আগের দিন আগের দিন ২ উইকেটে ১৭৫ রান নিয়ে মাঠে নামা বাংলাদেশ শুরুতেই হারায় জয়ের উইকেট। ৭০ রানে অপরাজিত থাকা বাংলাদেশ ওপেনার ৭৮ রানে ফিরে যান সাজঘরে। দলীয় ১৮৪ রানে ইনিংসের ৭৬তম ওভারের শেষ বলে নেইল ওয়াগনারের শিকার হন জয়। ২২৮ বলের ঝলমলে ইনিংসে সাতটি বাউন্ডারি হাঁকান এই তরুণ। তার আগে মুমিনুল হককে নিয়ে তৃতীয় উইকেট জুটিতে ৩২ রান।

    চতুর্থ উইকেটে মুমিনুলকে সঙ্গ দিতে মাঠে নামান মুশফিকুর রহিম। তবে তিনিও বেশি দূর যেতে পারেননি। দলীয় ২০৩ রানে, ইনিংসের ৮৩তম ওভারের দ্বিতীয় বলে বোল্ট বোল্ড করেন এই ব্যাটারকে। এক বাউন্ডারিতে ৫৩ বলে ১২ রান করেন মুশফিক।

    মুশফিকের বিদায়ের পর পঞ্চম উইকেটে জুটি গড়েন মুমিনুল ও লিটন দাস। এখন পর্যন্ত তাদের জুটি থেকে এসেছে ১২৬ রান। ১৪৭ বলে ৮ চারে হাফ সেঞ্চুরি করা মুমিনুল ৬৯ রানে অপরাজিত আছেন। ৯৩ বলে ৬ চারে অর্ধশতক তুলে নেওয়া লিটন দাস অপরাজিন আছেন ৬৫ রানে।

    এর আগে স্বাগতিকদের ৩২৮ রানের জবাবে ব্যাট করতে নামা বাংলাদেশ দ্বিতীয় দিন শেষেও ছিলো সুবিধা জনক স্থানে। সাদমান ও শান্তর উইকেট হারানো বাংলাদেশ দ্বিতীয় দিন শেষ করে ছিলো ২ উইকেটে ১৭৫ রানে।
    দলীয় অর্ধশতকের আগে প্রথম উইকেট হারানো বাংলাদেশের হয়ে কিউ বোলারদের প্রতিরোধ গড়েন নাজমুল হোসেন শান্ত ও মাহমুদুল হাসান জয়। দু’জনেই তুলে নেন হাফ সেঞ্চুরি। দলীয় ১৪৭ রানে ইনিংসের ৫৮তম ওভারের শেষ বলে শান্ত ফিরে গেলে ভাঙ্গে তাদের দায়িত্বশীল জুটি। দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে দু’জনে তুলে নেন ১০৪ টি রান।

    নিজেদের প্রথম ইনিংসে ব্যাট করতে নামা বাংলাদেশ দুই ওপেনার জয় ও সাদমানের ব্যাটে দারুণ শুরু করে। ১৯.১ ওভার স্থায়ী তাদে উদ্বোধনী জুটি থেকে আসে ৪৩ রান। ব্যক্তিগত ২২ রানে ওয়াগনারের শিকারে সাদমান সাজঘরে ফিরে যান। তার ৫৫ বলের ইনিংসে একটি বাউন্ডারি ছিলো। সাদমানের বিদায়ের পর জয় ও শান্ত জুটি গড়েন।

    নিউজিল্যান্ডের হয়ে ট্রেন্ট বোল্ট ৪টি, নেইল ওয়াগনার ৩টি ও টিম সাউদি ২টি করে উইকেট শিকার করেছেন।

    এর আগে প্রথম দিনের ৫ উইকেটে ২৫৮ রানের সঙ্গে দ্বিতীয় দিন বাকী ৫ উইকেটে আরো ৭৩ রান তুলতেই স্বাগতিক নিউজিল্যান্ডকে গুটিয়ে দেয় বাংলাদেশ। প্রথম টেস্টের প্রথম ইনিংসে নিউজিল্যান্ড অলআউট হয় ৩২৮ রানে। বাংলাদেশের বোলারদের নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে ইনিংস তেমন বড় করতে পারেনি স্বাগতিকরা। নিজেদের প্রথম ইনিংসে ব্যাটিংয়ে নেমেছে সফরকারী বাংলাদেশ।

    দ্বিতীয় দিন বল হাতে দুর্দান্ত ছিলেন পেসার শরিফুল, স্পিনার মিরাজ-মুমিনুলরা। প্রতিপক্ষের সেরা দুই ব্যাটারকে নিজের শিকার বানিয়েছেন বাংলাদেশের অধিনায়ক, পার্টটাইম স্পিনার মুমিনুল হক। আগের দিন ৩২ রানে অপরাজিত থাকা হেনরি নিকোলাসই কেবল কিছুটা প্রতিরোধ গড়তে পেরে ছিলেন। ব্যক্তিগত ৭৫ রানে তাকে থামান বাংলাদেশের অধিনায়ক মুমিনুল হক। কিউদের আর কোনো ব্যাটারই দ্বিতীয় দিন সাফল্যের দেখা পাননি। রোববার দুই অঙ্কের কোটা পেরুতে পেরেছেন আরো একজন ব্যাটার। তিনি ট্রেন্ড বোল্ড।

    আগের দিনই বাংলাদেশকে সাফল্য এনে দেন মুমিনুল হক। কিউদের সেঞ্চুরিয়ান ডেভন কনওয়েকে ১২৭ রানে সাজঘরে পাঠান তিনি। ইনিংসের ৮০তম ওভারের প্রথম বলে দলীয় ২২৭ রানে চতুর্থ উইকেটে কনওয়ে ফিরেন যান সাজঘরে। তার আগেই আরেক হাফ সেঞ্চুরিয়ান উইল ইয়ংকে প্যাভেলিয়ানে ফেরত পাঠান বাংলাদেশের ফিল্ডাররা। ইনিংসের ৪৯তম ওভারের তৃতীয় বলে দলীয় ১৩৯ রানের মাথায় উইল ইয়ং রানাউটের শিকার হলে দ্বিতীয় উইকেট হারায় দলটি। ১৩৫ বলে চারটি চারে ৫২ রান করেন তিনি। দলীয় ১ রানে প্রথম উইকেট হারানো নিউজিল্যান্ড দ্বিতীয় উইকেটে কনওয়ে ও উইল ইয়ংয়ের জুটিতে প্রতিরোধ গড়ে। দু’জনে মিলে গড়েন ১৩৮ রানের জুটি। এটিই স্বাগতিকদের প্রথম ইনিংসে সবচেয়ে সফল জুটি।

    এরপর তৃতীয় উইকেটে কনওয়ে রস টেলরকে নিয়ে গড়েন ৫০ রানের জুটি। ইনিংসের ৬৭তম ওভারের চতুর্থ বলে দলীয় ১৮৯ রানে তৃতীয় উইকেটে টেলরকে সাজঘরে পাঠিয়ে স্বতি এনে দেন শরিফুল। ৩১ রান করেন টেলর। স্বাগতিকদের হয়ে আর কোনো ব্যাটার প্রতিরোধ গড়তে পারেননি। বোল্ডের ১১ রান ছাড়া আর কোনো ব্যাটারই দুই অঙ্কের কোটা ছুঁতে পারেননি। ১০৮.১ ওভারে ৩২৮ রানেই থেমে যায় স্বাগতিকদের ইনিংসে।

    বাংলাদেশের হয়ে শরিফুল ২৬ ওভারে ৬৭ রানে ৩টি, মিরাজ ৩২ ওভারে ৮৬ রানে ৩টি ও মুমিনুল হক ৪.১ ওভারে ৬ রানে ২টি উইকেট লাভ করেন।

    এসএনপিস্পোর্টসটোয়েন্টিফোরডটকম/নিপ্র/০০

    LEAVE A REPLY

    Please enter your comment!
    Please enter your name here