নিজস্ব প্রতিবেদক:: ক্রিকেট পাড়ায় এখন আতঙ্ক। কে কে ফেঁসে যাচ্ছেন এ নিয়েই চলছে নানা গুঞ্জন। হোম অব ক্রিকেটে দুর্নীতি দমন কমিশনের হানা দেওয়ার ঘটনায় এখন তোলপাড় দেশের ক্রীড়াঙ্গণে। দুদকের অভিযানিক দল ক্রিকেট বোর্ডে পেয়েছে শত কোটি লুটপাটের অভিযোগ। কোয়ালিফাই রাউন্ড তথা তৃতীয় বিভাগে অতিরিক্ত দল নিয়েও আছে ক্ষমতার প্রভাব।
মঙ্গলবার দুপুরে মিরপুরে শের-ই-বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে দুদকের দল অভিযান চালিয়ে নিয়ে গেছে নানা ডকুমেন্ট। চলছে যাচাই বাছাই। দুদকের দুই সহকারী পরিচালক আল আমিন ও মাহমুদুল হাসানসহ ৩ সদস্যর দল আজ এই অভিযান পরিচালনা করে নানা নথিপত্র জব্দ করে নিয়ে গেছেন।
অভিযান শেষে দুদক কর্মকর্তারা সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, মুজিব শত বর্ষের নামে দুর্নীতি করা হয়েছে। ১৫ কোটির বাজেট করে খরচ দেখানো হয়েছে ২৫ কোটি। অথচ খরচ করা হয়েছে মাত্র সাত কোটি টাকা। মুজিব বর্ষের সব নথিপত্র তাই নিয়ে গেছেন দুদক কর্মকর্তারা।
অভিযানি দল জানিয়েছে, ক্রিকেট বোর্ডের বিভিন্ন টুর্নামেন্ট ও সিরিজের টিকিট নিয়েও দুর্নীতির অভিযোগ পেয়েছে তারা। নয় আসরে যেখানে ১৫ কোটি টাকা আয় সেখান এবার এক আসরেই ১৩ কোটি টাকাও আয় হয়। দুদকের কাছে তাই মনে হচ্ছে এখানেও ঘাপলা আছে।
ক্রিকেট বোর্ডের অধীনে চলছে কোয়ালিফাই রাউন্ড তথা তৃতীয় বিভাগ। যেখানে আগে মাত্র ৩/৪টি দল অংশ নিতো, এবার সেখানে অংশ নিয়েছে ৬০টি দল। দুদকের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, তরুণ ক্রিকেটারদের উঠে আসার মঞ্চ তৃতীয় বিভাগেও ক্ষমতা প্রদর্শনের ঘটনা ঘটছে। সবকিছুই তারা খতিয়ে দেখছেন।
দুদকের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন,. মুজিব বর্ষের নাম করে প্রাথমিকভাবে ১৯ কোটি টাকা সরানো হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে, কিন্তু সংখ্যাটা আরও বাড়তে পারে বলেও আভাস দুদকের। বরাদ্দ ছিল ১৫ কোটি, খরচ দেখানো হয়েছে ২৫ কোটি, আর খরচ আসলে হয়েছে ৭ কোটিরও কম।
দুদক সহকারী পরিচালক মাহমুদুল হাসান বলেন, আমাদের কাছে কিছু সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ছিল। তৃতীয় বিভাগ বাছাই লিগে এবার ৬০টি দল অংশ নিয়েছে। আগে ২-৩ বা সর্বোচ্চ ৪ দলের লিগ হতো। এখানে হয়তো কোনো কারণ আছে। আমরা কাগজপত্র সংগ্রহ করেছি, এক্ষেত্রে ব্যক্তিগত বা বোর্ডের কোনো প্রভাব ছিল কিনা দেখার জন্য। এমনিতেই বোঝা যাচ্ছে, আগে হয়তো অংশগ্রহণের স্বাধীনতা ছিল না। কোনো চাপ ছিল যে কারণে দলগুলো আসত। আমরা বিস্তারিত যাচাইবাছাই করে বুঝতে পারবো এখানে কী অসঙ্গতি ছিল।
বোর্ডের টিকিট বিক্রির দুর্নীতি নিয়ে তিনি বলেন, ‘আগে একটা নির্দিষ্ট পরিমাণে অর্থ নিয়ে টিকেটের ব্যাপারে চুক্তি করা হতো। তারা টিকেট বিক্রি করে বিসিবিকে একটা অংশ দিত। গত ৩-৪ আসরে বিসিবি নিজ থেকে টিকেট বিক্রি করছে। যার প্রেক্ষিতে একাদশ আসরে আমরা দেখেছি, ১৩ কোটি টাকা আয় হয়েছে। আট বছরে যেখানে ১৫ কোটি, এক বছরেই ১৩ কোটি। রেকর্ডপত্র আমরা পেয়েছি। বিস্তারিত যাচাই করলেই বোঝা যাবে কী অসঙ্গতি এখানে।’
মুজিব বর্ষের নামে লোপাট করা হয়েছে জানিয়ে দুদকের এই সহরকারী পরিচালক বলেন‘এছাড়া মুজিব শতবর্ষের ব্যয়ের হিসেবে কিছু অস্বাভাবিকতা আছে। এসব অভিযোগের বিষয়ে রেকর্ডপত্র সংগ্রহ করা হয়েছে। সেগুলো যাচাইবাছাই করে আমরা আমাদের এনফোর্সমেন্ট ইউনিটে প্রতিবেদন দাখিল করবো। সেই অনুযায়ী পরবর্তী পদক্ষেপের ব্যাপারে কমিশন সিদ্ধান্ত নেবে।’
দুদকের অভিযান নিয়ৈ বিসিবি প্রধান নির্বাহী নিজামউদ্দীন চৌধুরী সুজন সাংবাদিকদের বলেন, ‘দুদকের পক্ষ থেকে যেসব অভিযোগ আনা হয়েছে, এসবের ব্যাপারে আমাদের কাছে যত কাগজপত্র আছে, সব বিভাগকে সেগুলো দুদকের কাছে দিয়ে সহযোগিতার জন্য বলে দেওয়া হয়েছে। আমাদের দিক থেকে সর্বোচ্চ সহযোগিতা করা হবে। এখন যেহেতু অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত করা হচ্ছে, তাই এর বেশি কিছু বলা উচিত হবে না।’
এসএনপিস্পোর্টসটোয়েন্টিফোরডটকম/নিপ্র/ডেস্ক/০০