নিজস্ব প্রতিবেদকঃ ম্যাচের প্রথম ইনিংসে ইংল্যান্ডের রান পাহাড় দেখেই, অনেকটা আন্দাজ করা যাচ্ছিল। দ্বিতীয় ইনিংসে সেটা নিশ্চিত হয়ে গেল বাংলাদেশের ব্যাটিং ব্যর্থতায়। ফলাফল ইংল্যান্ডের বিপক্ষে আরও একটি হার। ইংলিশদের বিপক্ষে ১৩২ রানের বিশাল হারে সিরিজ হারও নিশ্চিত হয়ে গেছে।
২-০ ব্যবধানে ইতিমধ্যেই সিরিজ নিজেদের করে নিয়েছে সফরকারীরা। তৃতীয় এবং শেষ ওয়ানডে এখন কেবল আনুষ্ঠানিকতার। ঘরের মাঠে সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডেতে বোলিংয়ের পর ব্যাট হাতেও চরম ব্যর্থ বাংলাদেশ দল। যার ফলে ৩২৭ রানের বিশাল লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে ৪৪.৪ ওভারে মাত্র ১৯৪ রানেই গুঁটিয়ে গেছে স্বাগতিকরা। দেখেছে লজ্জার হার।
মিরপুরের হোম অব ক্রিকেটে বিশাল লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে ইনিংসের একেবারে প্রথম ওভারেই স্যাম কারানের জোড়া শিকারে ডাক মেরে ফিরে যান ওপেনার লিটন দাস ও টপ অর্ডার ব্যাটার নাজমুল হোসেন শান্ত। এর মধ্যে গোল্ডেন ডাক মেরে ফিরে যান নাজমুল হোসেন শান্ত।
বাংলাদেশ দলের বিপদ বাড়িয়ে দেন মুশফিকুর রহিম। দলীয় ৯ আর ব্যক্তিগত ৪ রানের মাথায় কারানের তৃতীয় শিকারে পরিণত হয়ে প্যাভিলিয়নের পথ ধরেন মিস্টার ডিপেন্ডেবল। ইনিংসের প্রথম ১৪ বলেই গুরুত্বপূর্ণ তিন ব্যাটারকে হারিয়ে চোখে-মুখে অন্ধকার দেখে টাইগাররা। সেখান থেকে দলকে টেনে তুলেন অধিনায়ক তামিম ইকবাল ও সাকিব আল হাসান। দুই বন্ধুর মাঝে যে ফাটল ধরেছে, সেটা ধরে পড়েনি খেলায়।
দুজনে বেশ ভালোই টানছিলেন। কিন্তু হুট করেই ছন্দ হারান তামিম। মেরে খেলতে গিয়ে মঈন আলির শিকারে পরিণত। ৬৫ বলে ৪ বাউন্ডারিতে ৩৫ রানে আউট হয়ে দলের জন্য বিপদই ডেকে আনেন। সাকিব-তামিমের ৭৯ রানের জুটি ভেঙে যাওয়ার কিছুক্ষণ পরই সাকিব আল হাসান ফিফটি পূরণ করেন।
চাপের মুখে ব্যাট করে ক্যারিয়ারের ৫১তম ফিফটি পূরণ করেন সাকিব। আর সেই ফিফটি যখন আশা দেখাচ্ছিল বাংলাদেশকে, তখনই আউট হয়ে ফেরেন তিনি। আদিল রশিদের বলে উড়িয়ে মারতে গিয়ে স্যাম কারানের সহজ ক্যাচে পরিণত হন। ড্রেসিং রুমের পথ ধরার আগে ৬৯ বলে ৫ বাউন্ডারিতে ৫৮ রান করেন। সাকিবের বিদায়ে বাংলাদেশের জয়ের আশা একেবারেই ক্ষীণ হয়ে যায়। একইসাথে ভাঙে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের সাথে তার ৩৪ রানের জুটি।
ষষ্ঠ উইকেটে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ও আফিফ হোসেন ধ্রুবর ৩৮ রানের জুটি কেবল বাংলাদেশের পরাজয়ের ব্যবধানই কমায়। ৪৯ বলে ৩ বাউন্ডারিতে ৩২ রান করেন মাহমুদউল্লাহ। ৩৩ বলে ২ বাউন্ডারি ও ১ ছক্কায় ২৩ রান করেন আফিফ। ৪ বাউন্ডারির মারে ২১ রান করেন তাসকিন আহমেদও। রান আউটের শিকার হওয়ার আগে দলের হয়ে শেষ লড়াই চালিয়েছিলেন তিনি। মাঝে মাত্র ৭ রান করে ব্যর্থতার পরিচয় দেন মেহেদী হাসান মিরাজ। গোল্ডেন ডাকে মুস্তাফিজুর রহমান আউট হলেই শেষ পর্যন্ত ৩২ রান বাকি থাকতেই থামে বাংলাদেশের ইনিংস।
ইংল্যান্ডের হয়ে একাই ৪ উইকেট নিয়ে বাংলাদেশের ইনিংস ধসিয়ে দেন স্যাম কারান। ৪ উইকেট শিকার করেন আদিল রশিদও।
এর আগে টস হেরে ব্যাট করতে নেমে নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৭ উইকেট হারিয়ে ৩২৬ রান সংগ্রহ করে ইংল্যান্ড। টাইগার বোলারদের উপর চড়াও হয়েছিলেন এদিন অতিথি দলের ব্যাটাররা। শুরুতে ধীর-স্থির হিসেবে খেলতে থাকেন ইংল্যান্ড দল। তবে দুই ওপেনার জেসন রয় ও ফিল সল্টের জুটি দলীয় ২৫ রানে ভেঙে যায়। টাইগারদের হয়ে প্রথম ব্রেক থ্রু এনে দেন তাসকিন আহমেদ। ইংলিশ ওপেনার ফিল সল্টকে ফিরিয়েছেন তিনি। ম্যাচের সপ্তম ওভারে এসে ওভারের তৃতীয় বলে সল্টকে স্লিপে ক্যাচ দিতে বাধ্য করেন। নাজমুল হোসেন শান্ত সেই ক্যাচ দারুণভাবে লুফে নিয়েছেন। যার ফলে ১৫ বলে ১ বাউন্ডারিতে ৭ রান করেন প্যাভিলিয়নের পথ ধরেন সল্ট।
দ্বিতীয় উইকেটে জুটি গড়েন ওপেনার জেসন রয় ও টপ অর্ডারে নামা ডেভিড মালান। দুজনে মিলে গড়ে তুলেন ৫৮ রানের জুটি। সেই জুটিতে ভাঙন ধরান মিরাজ। মালানকে এলবিডব্লিউর ফাঁদে ফেলেন এই অফ-স্পিনার। ১৯ বলে ১১ রান করেন এই বাঁহাতি তারকা। এরপর উইকেটে আসা জেমস ভিন্সকেও দ্রুত ফেরান তাইজুল ইসলাম। উইকেটের পেছনে মুশফিকুর রহিমের হাতে ক্যাচ তুলে দেন ভিন্স। দলীয় একশ পূরণের আগে প্যাভিলিয়নে ফেরেন এই ডানহাতি ব্যাটার। ১৬ বলে ৫ রান করেন তিনি।
৯৬ রানে তিন উইকেট হারিয়ে খানিকটা বিপদে পড়ে ইংল্যান্ড দল। তবে জস বাটলার ও জেসন রয়ের ব্যাটে ঘুরে দাঁড়িয়েছে সফরকারীরা। চতুর্থ উইকেটে দুই তারকার ১০৯ রানের জুটিই ইংলিশদের বড় স্কোরের ভিত গড়ে দেয়। সাকিব আল হাসানের বলে এলবিডব্লিউর শিকার হয়ে জেসন ফিরলে ভাঙে সেই জুটি। তবে এর আগে ক্যারিয়ারের ১২তম ওয়ানডে সেঞ্চুরি পূরণ করে নেন। খেলেন ১২৪ বলে ১৮ বাউন্ডারি ও ১ ছক্কায় ১৩২ রানের দুর্দান্ত এক ইনিংস।
উইকেটে এসে টিকতে পারেননি উইল জ্যাকস। তাসকিনের শিকারে পরিণত হওয়ার আগে ৪ বলে মাত্র ১ রান করেন তিনি। এরপর ষষ্ঠ উইকেটে ৫২ রানের ঝড়ো জুটি গড়েন বাটলার ও মঈন আলি। অতি আক্রমণাত্বক হতে গিয়ে মিরাজের শিকারে প্যাভিলিয়নের পথ ধরেন বাটলার। তবে ইংলিশ অধিনায়ক এর আগে ৬৪ বলে ৫ চার ও ২ ছক্কায় ৭৬ রানের ইনিংস খেলেন।
শেষ দিকে মঈন আলির ৩৫ বলে ৩ বাউন্ডারি ও ২ ছয়ে ৪২ রানের ক্যামিও এবং স্যাম কারানের ১৯ বলে ২ চার ও ৩ ছক্কায় ৩৩ রানের অপরাজিত ঝড়ো ইনিংস ভর করেই বিশাল পুঁজি পায় ইংলিশরা। এক বাউন্ডারিতে ৬ রান করে স্যাম কারানের সাথে অপরাজিত থেকে মাঠ ছাড়েন আদিল রশিদ।
বাংলাদেশের হয়ে সব বোলাররাই এদিন বেশ খরুচে ছিলেন। তবে ৩টি উইকেট শিকার করেছেন পেসার তাসকিন আহমেদ। মেহেদী হাসান মিরাজ ২টি উইকেট লাভ করেন। সাকিব ও তাইজুল ১টি করে উইকেট পকেটে পুড়েন।
এসএনপিস্পোর্টসটোয়েন্টিফোরডটকম/নিপ্র/সা
Discussion about this post