নিজস্ব প্রতিবেদক:: চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামের বাইশ গজ রীতিমতো ব্যাটিং স্বর্গ। তৃতীয় ওয়ানডেতে ৪শ’র বেশি রান করা ভারত প্রথম টেস্টের প্রথম ইনিংসেও তুলেছে ৪০৪ রান। সেই ব্যাটিং রাজ্যেই কিনা ধ্বসে পড়লো বাংলাদেশের ব্যাটিং ইনিংস। টাইগার ব্যাটারদের ব্যর্থতায় সাগরিকায় দুর্বিষহ দ্বিতীয় দিন শেষে বাংলাদেশ পড়েছে ফলোঅনের শঙ্কায়।
ভারতের প্রথম ইনিংসে করা ৪০৪ রানের জবাবে বাংলাদেশ নিজেদের প্রথম ইনিংসে দ্বিতীয় দিন শেষে তুলেছে ৮ উইকেটে ১১৩ রান। পিছিয়ে আছে ২৭১ রানে।
বড় বোঝা কাঁধে নিয়ে ব্যাটিংয়ে নামা বাংলাদেশ ইনিংসের প্রথম বলে হারায় ওপেনার শান্তকে। মোহাম্মদ সিরাজের করা ইনিংসের প্রথম বলেই ক্যাচ তুলে দেন উইকেটের পেছনে পন্থের হাতে। তার দেখানো পথেই হাঁটেন তিনে নামা ইয়াসির আলী। দলীয় ৫ রানেই দ্বিতীয় উইকেট হারায় বাংলাদেশ। ইনিংসের চতুর্থ ওভারের তৃতীয় বলে ব্যক্তিগত ৪ রানে সাজঘরে ফিরেন তিনি।
লিটন দাস ও জাকির হাসান শুরুর বির্পয় সামলে উঠার চেষ্টা করেন। তবে পারেনিন তারা। দলীয় ৩৯ রানেই তৃতীয় উইকেট হারায় টাইগাররা। ১৪তম ওভারের দ্বিতীয় বলে লিটন দাস ফিরেন প্যাভেলিয়নে। ইনিংসের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ২৪ রান এসেছে তার ব্যাট থেকে। ৩০ বলে পাঁচ চারে সাজিয়েছেন নিজের ইনিংসটি।
অভিষিক্ত জাকিরও হাসানও খুব একটা ভালো করতে পারেননি। ব্যাটিং বিপর্যয়ের দিনে দলের তৃতীয় সর্বোচ্চ রান করেছেন তিনি। লিটনের পর আউট হয়েছেন চতুর্থ উইকেটে। ১৮তম ওভারের দ্বিতীয় বলে দলীয় ৫৬ রানের মাথায় ৪৫বলে ২০ রানে ফিরেন তিনি। তিন চারে সাজান অভিষিক্তের ইনিংসটি।
নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারাতে থাকা বাংলাদেশ কোনো উইকেটের জুটি গড়তে পারেনি। দ্বিতীয় দিন শেষে সর্বোচ্চ জুটি তৃতীয় উইকেটে জাকির-লিটনের ৩৪ রানই। দলীয় ৭৫ রানেই বাংলাদেশ হারায় পঞ্চম উইকেট। অধিনায়ক সাকিব আল হাসান ২৫তম ওভারের দ্বিতীয় বলে ব্যক্তিগত ২৫ বলে মাত্র ৩ রানে ফিরে যান সাজঘরে।
শতরানের আগেই ষষ্ঠ উইকেট হারায় বাংলাদেশ। ৩৩তম ওভারের প্রথম বলে দলীয় ৯৭ রানেই সাজঘরের পথ ধরেন নুরুল হাসান সোহান। তিন চারে ২২ বলে ১৬ রান করেন তিনি। টেস্টে এ বছর পারফর্ম করা মুশফিকুর রহিম ফিরেন এরপরই। দলীয় শতক পেরুনোর পরই ব্যক্তিগত ২৮ রানে সাজঘরে যান তিনি। দ্বিতীয় দিনে এটিই ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ। দলীয় ১০২ রানেই তার উইকেট হারায় বাংলাদেশ।
মুশফিকের বিদায়ের পর দলের খাতায় কোনো রান যোগ হওয়ার আগেই অষ্টম উইকেট হারায় টাইগাররা। ইনিংসের ৩৫তম ওভারের শেষ বলে তাইজুল ফিরেন প্যাভেলিয়নে। ৪ বল খেলেও রানের খাতা খুলতে পারেননি তিনি। নবম উইকেটে ৩১ রানে অপরাজিত আছেন মিরাজ ও এবাদত। ১৬ রান নিয়ে মিরাজ ও ১৩ রান নিয়ে এবাদত তৃতীয় দিন আবারো ব্যাট করতে নামবেন। দ্বিতীয় দিন বাংলাদেশ শেষ করেছে ৪৪ ওভারে ৮ উইকেটে ১৩৩ রানে।
কুলদীপ যাদব ৪টি ও মোহম্মদ সিরাজ ৩টি করে উইকেট লাভ করেছেন।
চট্টগ্রাম টেস্টে ব্যাটিংয়ে নামা ভারত দ্রুত টপঅর্ডারের চার উইকেট হারালেও চেতেশ্বর পূজারা, শ্রেয়ার্স আয়ার আর রবিচন্দ্র অশ্বিনদের ব্যাটে চড়ে ৪০৪ রান তুলে নিজেদের প্রথম ইনিংসে অলআউট হয় দ্বিতীয় দিনে।
চট্টগ্রাম টেস্টে আগে ব্যাটিংয়ে নামা ভারত শুরুতেই হারিয়েছে ওপেনার শুভমান গিলকে। স্পিনার তাইজুল ইসলাম ১৪তম ওভারের দ্বিতীয় বলেই ফিরিয়ে দিয়েছেন সফরকারী দলের এই ওপেনারকে।
ভারতের দলীয় ৪১ রানে প্রথম উইকেট হারায় দলটি। ব্যক্তিগত ২০ রানে ইয়াসিরের হাতে ক্যাচ তুলে দেন শুভমান। ৪০ বলে তিন চারে নিজের ইনিংসটি সাজান এই ওপেনার।
এরপরই খালেদ ফিরিয়ে দেন লুকেশ রাহুলকে। ১৯তম ওভারের প্রথম বলে দলীয় ৪৫ রানে দ্বিতীয় উইকেট হারায় ভারত। দুর্দান্ত এক ডেলিভারিতে ভারতীয় অধিনায়কের স্ট্যাম্প ভেঙে দেন খালেদ। তিন চারে ৫৪ বলে ২২ রান করেন তিনি।
পরের ওভারেই তাইজুল প্রথম ইনিংসে নিজের দ্বিতীয় উইকেট তুলে নেন। ২০তম ওভারের তৃতীয় বলে বিরাট কোহলিকে এলবিডাব্লিউ’র ফাঁদে ফেলেন তিনি। দলীয় ৪৮ রানে তৃতীয় উইকেট হারায় ভারত। ৫ বলে ১ রান করেন এই তারকা ব্যাটার।
প্রথম দিন লাঞ্চ ব্রেক পর্যন্ত সফরকারী ভারত ২৬ ওভারে তিন উইকেটে ৮৫ রান তুলে। লাঞ্চের পর মিরাজের প্রথম শিকারে সাজঘরে ফিরেন ঋশভ পন্থ। এরপরই চতুর্থ উইকেটে পূজারা ও পন্থ ৬৪ রানের জুটি গড়ে প্রতিরোধ গড়েন। ৩২তম ওভারের চতুর্থ বলে দলীয় ১৩২ রানে চতুর্থ উইকেট হারিয়েছে ভারত। ছয় চার ও দুই ছয়ে ৪৫ বলে ৪৬ রান করেছেন পন্থ।
পন্থ ফিরে গেলেও অবিচল থাকেন পূজারা। শ্রেয়ার্স আয়ারকে নিয়ে বাংলাদেশের বোলাদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়েন তিনি। পঞ্চম উইকেটে যোগ করেন ১৪৯ রান। ইনিংসের ৮৫তম ওভারের দ্বিতীয় বলে দলীয় ২৬১ রানের মাথায় পূজারাকে ফিরিয়ে জুটি ভাঙেন তাইজুল। সেঞ্চুরি থেকে মাত্র ১০ রান দূরে থাকতে থামেন এই ব্যাটার। ১১ চারে ২০৩ বলে ৯০ রান করেন তিনি।
অষ্টম উইমেটে রবিচন্দ্রন অশ্বিন ও কূলদীপ যাদব বেশ ভুগিয়েছেন বাংলাদেশকে। যোগ করেন আরো ৮৭ রান। ১৩২তম ওভারের দ্বিতীয় বলে অশ্বিনকে ফিরিয়ে এই জুটি ভাঙেন মিরাজ। ৩৮৫ রানে অষ্টম উইকেট হারায় সফরকারীরা। দুই চার ও দুই ছক্কায় ১১৩ বলে ৫৮ রান করেন এই ব্যাটার। ১১৪ বলে ৪০ রান করেন কুলদীপ যাদব। ভারত নিজেদের প্রথম ইনিংসে শেষ পর্যন্ত থামে ১৩৩.৫ ওভারে ৪০৪ রানে।
বাংলাদেশের হয়ে প্রথম ইনিংসে বল হাতে সাকিব ও তাইজুল ৪টি করে, খালেদ এবং এবাদত ১টি করে উইকেট লাভ করেন।
এসএনপিস্পোর্টসটোয়েন্টিফোরডটকম/নিপ্র/০০