নিজস্ব প্রতিবেদকঃ অবিশ্বাস্য, অকল্পনীয়, রোমাঞ্চকর যা-ই বলা হোক না কেন, কোনোটাই বাড়িয়ে বলা হবে না বিন্দুমাত্র! নির্ধারিত সময়ের প্রথমার্ধে পিছিয়ে পড়া, দ্বিতীয়ার্ধে দুর্দান্তভাবে ফিরে আসা, সেখান থেকে অতিরিক্ত সময়ে গড়ানো ম্যাচে এগিয়ে যাওয়া। তবে সমতায় ফিরে টাইব্রেকারে যাওয়া। দুই দলের সমর্থকদের উচ্ছ্বাস-উদ্দীপনা, পাগলামো, কী ছিল না ম্যাচে!
কুমিল্লার শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত স্টেডিয়ামে দুর্দান্ত, অসাধারণ এক ফাইনাল দেখা গেল ফেডারেশন কাপে। ১৪ বছর পর টুর্নামেন্টটির ফাইনালে দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী আবাহনী লিমিটেড ও মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের লড়াই সবকিছুকে ছাড়িয়ে গেল। হলো ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি।
রুদ্ধশ্বাস ফাইনালে নির্ধারিত ৯০ মিনিটের খেলা ৩-৩ সমতায় শেষ হয়েছিল। যার ফলে ম্যাচ গড়ায় অতিরিক্ত সময়ে। সেখানেও দুই দলের দুর্দান্ত লড়াই। দুই দলই ১টি করে গোল করেছে। যার জন্য ৪-৪ গোলের সমতায় দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীর ম্যাচের অতিরিক্ত সময়ের খেলা শেষ হয়েছে। এর মধ্যে মোহামেডানের অধিনায়ক সুলেমান দিয়াবাতে মোহামেডানের হয়ে একাই ৪ গোল করেছেন।
শেষ মূহুর্তে অন টার্গেটের গোল করার খেলায় বাজিমাত করেছে মোহামেডান। আবাহনীকে টাইব্রেকারে ৪-৩ গোলে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে সাদা-কালো শিবির।
ফুটবলে নিজেদের পুনর্জাগরনের ফিরিয়ে এনেছে ১৪ বছরের পুরোনো স্মৃতি। ১৪ বছর আগে ফেডারেশন কাপ ফাইনালে সবশেষ আবাহনী-মোহামেডানের লড়াই দেখা গিয়েছিল। আর সেটিও গড়ায় টাইব্রেকারে। সেবার আকাশী-নীলদের হতাশা উপহার দিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয় মোহামেডান। এবারও ইতিহাসের একই পুনরাবৃত্তি দেখলো দেশের ফুটবল। ১৪ বছর পর আবারও ফেডারেশন শিরোপার স্বাদ পেল মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব।
ম্যাচের প্রথমার্ধে দুই গোল করে লিড নেয় আবাহনী। গোল দুটি করেন যথাক্রমে ফাহিম ও ড্যানিয়েল কলিনদ্রেস। তবে দ্বিতীয়ার্ধে সবাইকে অবাক করে ঘুরে দাঁড়ায় মোহামেডান। ৫৭ ও ৫৯তম মিনিটে আগে মাত্র ৩ মিনিটের ব্যবধানে দুই গোল করে দলকে সমতায় ফেরান অধিনায়ক সুলেমান দিয়াবাতে।
এরপর ৬৫তম মিনিটে এমেকার গোলের ফের লিড নেয় আবাহনী। কিন্তু সেই লিড বেশি সময় ধরে রাখতে পারেনি দলটি। ৮২তম মিনিটে আবারও দিয়াবাতের গোলে সমতায় ফিরে মোহামেডান। একইসাথে গড়েন নতুন ইতিহাসও। ৪৩ বছরের ফেডারেশন কাপের ফাইনালের ইতিহাসে এই প্রথম দেখা মিলে কোনো হ্যাটট্রিকের।
শেষ পর্যন্ত ৩-৩ সমতায় অতিরিক্ত ৩০ মিনিট সময়ে গড়ায় ম্যাচ। সেখানে প্রথমার্ধের যোগ করা সময়ে ডি-বক্সের ভেতর ফাউলের শিকার হয়ে পেনাল্টি পায় সাদা-কালোরা। স্পট-কিক থেকে গোল করতে বিন্দুমাত্র ভুল করেননি দিয়াবাতে। নিজের চতুর্থ গোলের দেখা পান দিয়াবাতে। এতে করে দিয়াবাতে বনাম আবাহনী ম্যাচ ধারণ করে এসময়।
মোহামেডান লিড নিলেও, নাটকীয়তার তখনও বাকি। অতিরিক্ত সময়ের দ্বিতীয়ার্ধের শেষ দিকে দারুণ এক গোলে স্কোরলাইন ৪-৪ করেন আবাহনীর রহমত মিয়া। মাথায় ব্যান্ডেজ নিয়ে খেলা এই ডিফেন্ডার প্রাণ এনে দিয়েছিলেন আবাহনী সমর্থকদের হৃদয়ে। ১২০ মিনিটের খেলায় ৪-৪ গোলের সমতায় ম্যাচ গড়ায় তখন টাইব্রেকারে।
সেখানে মোহামেডানের নায়ক বদলি গোলরক্ষক আহসান হাবিব। আবাহনীর দুই তারকা বিদেশি রাফায়েল ও কলিনদ্রেসের গোল আটকে দিয়ে দলকে শিরোপা এনে দেন তিনি। অপরদিকে আবাহনীর গোলরক্ষক শহিদুলও একটি গোল ঠেকিয়ে দিয়ে ম্যাচে নাটকীয়তা তৈরি করেছিলেন। তবে সব ছাপিয়ে ধ্বংসযজ্ঞ থেকে ম্যাচে ফিরে ফেডারেশন কাপের চ্যাম্পিয়ন হয় মোহামেডান।
এসএনপিস্পোর্টসটোয়েন্টিফোরডটকম/নিপ্র/সা