স্পোর্টস ডেস্কঃ আইপিএলে সোমবার রেকর্ডের ছড়াছড়ি দেখা গেছে। রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু ও সানরাইজার্স হায়দরাবাদ ম্যাচে রান হয়েছে ৫৪৯। আইপিএল তো বটেই, স্বীকৃত টি-টোয়েন্টিতেও এটাই এক ম্যাচে সর্বোচ্চ রান। আগের রেকর্ড ছিল ৫২৩ রানের; চলতি আসরেই হায়দরাবাদ ও মুম্বাই ইন্ডিয়ান্স ম্যাচে হয়েছিল সেটি।
বেঙ্গালুরুতে টস হেরে আগে ব্যাট করতে নেমে নির্ধারিত ২০ ওভারে ৩ উইকেট হারিয়ে ২৮৭ রান করে হায়দরাবাদ। দলের হয়ে সর্বোচ্চ ১০২ রান করেছেন ট্রাভিস হেড। তাছাড়া ৩১ বলে ৬৭ রান এসেছে হেনরিখ ক্লাসেনের ব্যাট থেকে। শুরুতে ব্যাট করতে নেমে হায়দরাবাদকে উড়ন্ত শুরু এনে দেন দুই ওপেনার হেড ও অভিষেক শর্মা। প্রথম পাওয়ার প্লেতে কোনো উইকেট না হারিয়ে ৭৬ রান যোগ করেন তারা। ৩৪ রান করে অভিষেক সাজঘরে ফিরলে ভাঙে ১০৮ রানের উদ্বোধনী জুটি।
অভিষেক ফিরলেও রানের গতিতা তা প্রভাব ফেলেনি। তিনে নেমে হেডের সঙ্গে রান উৎসবে যোগ দেন হেনরিখ ক্লাসেন। হেড প্রথম ফিফটি করেন ২০ বলে। আর সেঞ্চুরি পূর্ণ করেছেন ৩৯ বলে। সবমিলিয়ে ৪১ বলে ১০২ রান করেছেন এই অজি ওপেনার। হেডের বিদায়ের পর ঝড় অব্যাহত রাখেন ক্লাসেন। এই প্রোটিয়া ২৩ বলে ফিফটি করেছেন। আর সাজঘরে ফেরার আগে ৩১ বলে করেছেন ৬৭ রান। শেষদিকে ১০ বলে অপরাজিত ৩৭ রানের ক্যামিও খেলেছেন আব্দুল সামাদ। তাতেই আইপিএল ইতিহাসের সর্বোচ্চ রানের সংগ্রহ পায় হায়দরাবাদ।
রান তাড়ায় বিরাট কোহলি, ফাফ ডু প্লেসিস এবং দিনেশ কার্তিকরা যা করলেন সেটাও রূপকথার চেয়ে কোনো অংশে কম নয়। ২৮৮ রানের পাহাড়সম লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে শেষ পর্যন্ত লড়েছে দলটি। বোলারদের ব্যর্থতা ব্যাট হাতে পুষিয়ে দেয়ার সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছেন কোহলি-কার্তিকরা। তবে ২৮৮ রানের লক্ষ্যটা যে অনেকটাই অসম্ভব। তাই কাছাকাছি গিয়ে শেষমেশ হেরেছে ডু প্লেসির দল। ২৫ রানে হারে বেঙ্গালুরু। হায়দরাবাদের দেয়া ২৮৮ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে নির্ধারিত ২০ ওভারে ৭ উইকেট হারিয়ে ২৬২ রান করেছে কোহলিরা। এই হারে এবারের আইপিএলে টানা পঞ্চম হারের স্বাদ পেল বেঙ্গালুরু। ৭ ম্যাচে মাত্র ২ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের তলানিতে আছে দলটি।
বেঙ্গালুরুর উইল জ্যাকস, রজত পাতিদার ও সৌরভ চৌহানরা রান পাননি। ৪ ছক্কা ও ৭ চারে ২৮ বলে ৬২ রান করেন ডু প্লেসিসও আউট হন। ষষ্ঠ উইকেটে মহীপাল লোমরোর ও দিনেশ কার্তিক ২৫ বলে ৫৯ রানের জুটি গড়ে চেষ্টা করেছিলেন। তবে তাতে শুধু হারের ব্যবধানই কমেছে। ১৫তম ওভারে এই জুটি ভাঙার পর ওই ওভার শেষে জয়ের জন্য শেষ ৩০ বলে ১০১ রানের ‘অসম্ভব’ লক্ষ্য ছিল বেঙ্গালুরুর সামনে। বাকিটা কার্তিকের একার লড়াই। ৭ ছক্কা ও ৫ চারে সাজানো তাঁর ৩৫ বলে ৮৩ রানের ইনিংসটি হারের ব্যবধান কমিয়েছে শুধু। চার-ছক্কার বৃষ্টিতে মোট ৫৪৯ রানের এই ম্যাচও অনেক দিন মনে রাখবেন দর্শকেরা।
- ম্যাচটিতে মোট রান হয়েছে ৫৪৯। আইপিএল তো বটেই, স্বীকৃত টি-টোয়েন্টিতে এটাই এক ম্যাচে সর্বোচ্চ রানের বিশ্ব রেকর্ড।
- আইপিএলে এই প্রথম এক ম্যাচে দুই দলই করলো আড়াইশ ছাড়ানো রান। হায়দরাবাদের করা ৩ উইকেটে ২৮৭ রানের জবাবে বেঙ্গালুরুর ইনিংস থামে ৭ উইকেটে ২৬২ রানে।
- এই ম্যাচে হয়েছে ছক্কা বৃষ্টি। হায়দরাবাদ তাদের ইনিংসে মেরেছে ২২টি ছক্কা, আইপিএলে যা সর্বোচ্চ। পরে বেঙ্গালুরু মেরেছে ১৬টি। তাতে স্বীকৃতি টি-টোয়েন্টি ফের দেখা গেল ৩৮ ছক্কার বিশ্ব রেকর্ড। মুম্বাই ও হায়দরাবাদ ম্যাচেও হয়েছিল ৩৮ ছক্কা।
- দুই দল মিলিয়ে এই ম্যাচে চার হয়েছে মোট ৪৩টি। এতে ম্যাচে মোট বাউন্ডারি হয় ৮১টি। টি-টোয়েন্টিতে এর চেয়ে বেশি বাউন্ডারি হয়নি আর কোনো ম্যাচে। সমান ৮১টি বাউন্ডারি হয়েছিল গত বছর ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও দক্ষিণ আফ্রিকার ম্যাচে।
- এদিন বাউন্ডারি থেকে রান হয়েছে ৪০০। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে চার-ছক্কায় এই প্রথম ৪০০ রান দেখল কোনো ম্যাচ। আগের রেকর্ড ছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও দক্ষিণ আফ্রিকা ম্যাচে ৩৯৪ রান।
- হায়দরাবাদ-বেঙ্গালুরু ম্যাচে মোট ৭ টি ফিফটি প্লাস জুটি হয়েছে। যা টি-টোয়েন্টিতে এক ম্যাচে ফিফটি প্লাস জুটির সংখ্যায় সর্বোচ্চ। আগের রেকর্ড ছিল ৫টি।
- বেঙ্গালুরুর রিস টপলি (৬৮), ইয়াশ দয়াল (৫১), লকি ফার্গুসন (৫২) ও বিজায়কুমার (৬৪) দিয়েছেন পঞ্চাশের বেশি রান। স্বীকৃত টি-টোয়েন্টিতে এক ম্যাচে একই দলের চার বোলারের পঞ্চাশ বা তার বেশি রান দেওয়ার ঘটনা এটিই প্রথম।
- হায়দরাবাদের ২৮৭/৩ টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ইনিংস। সর্বোচ্চ ইনিংস নেপালের ৩১৪/৩, মঙ্গলিয়ার বিপক্ষে ২০২৩ সালে।
- ট্রাভিস হেড এদিন ৩৯ বলে সেঞ্চুরি (১০২) করেন। যা আইপিএলের চতুর্থ দ্রুততম সেঞ্চুরি।
এসএনপিস্পোর্টসটোয়েন্টিফোরডটকম/নিপ্র/ডেস্ক/১১০
Discussion about this post