নিজস্ব প্রতিবেদকঃ সকালের শুরুটা হতশ্রী ব্যাটিংয়ে হলেও, দিনের শেষটায় দুর্দান্ত বাংলাদেশ। তবে সেই দুর্দান্ত হওয়ার নৈপথ্যের কারিগর বোলাররাই। আরও একবার বোলিং দিয়ে সিলেট টেস্টে লড়ছে টাইগাররা। দ্বিতীয় দিন শেষে, দ্বিতীয় ইনিংসে শ্রীলঙ্কার সংগ্রহ ৩৬ ওভারে ৫ উইকেটে ১১৯ রান। দলটির লিড দাঁড়িয়েছে ২১১ রানে। শেষ বিকেলে বাংলাদেশের বোলাররা চেপে ধরেছে শ্রীলঙ্কাকে।
বাংলাদেশকে দুইশ’র আগেই অলআউট করে চা-বিরতির খানিক আগে নিজেদের দ্বিতীয় ইনিংস শুরু করে শ্রীলঙ্কা। ৯২ রানের লিড নিয়ে দ্বিতীয় ইনিংসে ভালো শুরুর আভাস দিয়ে চা-বিরতিতে যাওয়ার দ্বারপ্রান্তে ছিল দল। তবে লঙ্কানদের স্বস্তিতে থাকতে দেয়নি টাইগাররা। দিলশান মধুশঙ্কার উইকেট শিকার করে নাহিদ রানা উল্টো বাংলাদেশকে এনে দেন স্বস্তি। ষষ্ঠ ওভারের চতুর্থ বলে ১০ রান করা মধুশঙ্কাকে উইকেটের পেছনে লিটন দাসের ক্যাচে পরিণত করান এই পেসার।
আর এই উইকেটের সাথে সাথেই চা-বিরতির ঘোষণা দেন ম্যাচের দুই অনফিল্ড আম্পায়ার। চা-বিরতির আগে ৫.৪ ওভারে ১ উইকেট হারিয়ে শ্রীলঙ্কার সংগ্রহ ছিল ১৯ রান। সেখান থেকে ফিরে এসে তৃতীয় সেশনের শুরুতে নাহিদ রানার দ্বিতীয় শিকারে পরিণত হয়ে প্যাভিলিয়নে ফেরেন কুশল মেন্ডিস (৩)। ৩২ রানে দুই উইকেট হারানোর পর ২৮ রানের জুটি গড়ে দলকে স্বস্তি এনে দিতে চেয়েছিলেন দিমূথ করুণারত্নে ও অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউস। তবে সেটি বেশি দূর যেতে দেননি তাইজুল।
১৮তম ওভারে তৃতীয় বলে তাইজুল ইসলামের ডেলিভারিতে মিড অনে ক্যাচ মিস করেন নাঈম হাসান। যদিও বদলি ফিল্ডার হিসেবে নামা নাঈমের জন্য একটু কঠিনই ছিল ক্যাচটি। তবুও হাফ চান্স মিসে হতাশাই ভর করছিল সবার মাঝে। সেই হতাশা দূর হলো নিমিষেই। সেই তাইজুলের হাত ধরেই তৃতীয় সাফল্য পেয়েছে বাংলাদেশ দল।
অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউসের উইকেট তুলে নেন তাইজুল। উইকেটের পেছনে লিটন দাসের ক্যাচে পরিণত হয়ে ২২ রান করেই বিদায় নেন এই তারকা। ২৪ বলে ৩ বাউন্ডারিতে সাজানো ছিল তার ইনিংস। জীবন পেলেও, ইনিংস বড় করতে পারেননি তিনি। প্রথম ইনিংসে রান আউটের পর দ্বিতীয় ইনিংসে ক্যাচ আউট হলেন।
ম্যাথিউসের উইকেটের পর ক্রিজে এসে টিকতে পারেননি আরেক তারকা দীনেশ চান্দিমাল। এই অভিজ্ঞ ব্যাটারকে এলবিডব্লিউর ফাঁদে ফেলে ফিরিয়েছেন মেহেদী হাসান মিরাজ। শুরুতে আম্পায়ার আউট না দিলে, রিভিউ নেয় বাংলাদেশ। আর এতে সফল হয় টাইগাররা। ডাক মেরে চান্দিমাল ফিরলে, চতুর্থ উইকেটের পতন ঘটে লঙ্কানদের। প্রথম ইনিংসের পর দ্বিতীয় ইনিংসেও ব্যর্থ এই অভিজ্ঞ ক্রিকেটার।
এরপর অধিনায়ক ধনাঞ্জয়া ডি সিলভাকে সাথে নিয়ে ৪৯ রানের জুটি গড়ে প্রতিরোধ গড়েন। তবে সেই প্রতিরোধ ভাঙেন শরিফুল ইসলাম। শর্ট ডেলিভারিতে সেট ব্যাটার করুণারুত্নেকে ফাইন লেগ অঞ্চলে নাহিদ রানার ক্যাচে পরিণত করান শরিফুল। আউট হওয়ার আগে ১০১ বলে ৭ বাউন্ডারি ও ১ ছক্কায় ৫২ রানের ইনিংস খেলে যান বাঁহাতি ওপেনার। শেষ বিকেলে আর কোনো উইকেট না হারিয়ে নাইট ওয়াচম্যান বিশ্ব ফার্নান্দোকে নিয়ে কোনোরকমে দিন পার করে দেন ধনাঞ্জয়া। ২৩ রান করে ধনাঞ্জয়া ও বিশ্ব ২ রান করে অপরাজিত আছেন।
বাংলাদেশের হয়ে নাহিদ রানা ২টি, শরিফুল, মিরাজ ও তাইজুল ১টি করে উইকেট লাভ করেন। লক্ষ্য নাগালে রাখতে হলে সকালের সেশনে দ্রুতই অলআউট করতে হবে শ্রীলঙ্কাকে।
এর আগে সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে ব্যাটিং দুর্দশায় ভুগে বাংলাদেশ দল। শ্রীলঙ্কার ২৮০ রানের জবাবে নিজেদের প্রথম ইনিংসে দুইশ রানও করতে পারেনি। ১৮৮ রানে অলআউট জাকির-শান্ত-জয়রা। এতে লঙ্কানরা পায় ৯২ রানের লিড।
আগের দিন ১০ ওভারে ৩ উইকেটে ৩২ রান নিয়ে কোনোমতে পার করে বাংলাদেশ। দ্বিতীয় দিনে বৃষ্টির পূর্ভাবাস থাকলেও, সিলেটের আকাশে সকালের মিষ্টি রোদের দেখা মিলে। তবে বাংলাদেশ দলের জন্য সকালটা মিষ্টি হয়নি। দিনের শুরুতেই ফিরে যান ওপেনার মাহমুদুল হাসান জয়। নাইট ওয়াচম্যান হিসেবে নামা তাইজুল ইসলাম ও ওপেনার জয় দ্বিতীয় দিন সকালের সেশনের শুরুতে ভালো কিছুর ইঙ্গিত দিয়েছিল। যদিও প্রথম পাঁচ ওভারের পর আর সেটি ধরে রাখতে পারেননি তারা।
অপ্রয়োজনীয় শট খেলতে গিয়ে আউট হয়ে ফিরেন জয়। ১৫তম ওভারের প্রথম বলে লাহিরু কুমারার আউটসাইড অফ ডেলিভারিতে থার্ড স্লিপে ক্যাচ দিয়ে ফিরেন তিনি। ১২ রান করা জয়ের বিদায়ে চতুর্থ উইকেটের পতন ঘটে বাংলাদেশের। এরপর উইকেটে এসে শুরুটা ভালোই করেছেন শাহাদাত হোসেন দিপু। তবে ধরে রাখতে পারেননি সেটি। ২২তম ওভারের শেষ বলে লাহিরু কুমারার শিকার হয়ে ফিরেন দিপু। স্লিপে ধনাঞ্জয়া ডি সিলভার ক্যাচে পরিণত হওয়ার আগে ২৬ বলে ১৮ রান করে যান এই তরুণ ব্যাটার। পরবর্তীতে বাংলাদেশের ইনিংসকে টেনে নিয়ে যাওয়ার লড়াই করেন লিটন দাস ও তাইজুল ইসলাম।
৫ উইকেটে ৮৩ রান থেকে দুজন স্বস্তি জোগাচ্ছিলেন ভালোভাবে। কিন্তু মধ্যাহ্ন বিরতির আগ মূহুর্তে ৩৫তম ওভারের চতুর্থ বলে লাহিরু কুমারার ভেতরে ঢুকানো দারুণ এক ডেলিভারিতে বোল্ড আউট হয়ে ফিরতে হয় লিটনকে। ভালো ছন্দে থাকলেও, ৪৩ বলে ৪ বাউন্ডারিতে ২৫ রান করে প্যাভিলিয়নের পথ ধরতে হয় উইকেটরক্ষক ব্যাটারকে। যদিও এতে লাহিরুর কৃতিত্বই বেশি। যেটিতে অস্বস্তি বাড়ে বাংলাদেশ শিবিরে। ৩৬ ওভারে ৬ উইকেট হারিয়ে ১৩৪ রানে থেকে মধ্যাহ্ন বিরতিতে যায় বাংলাদেশ দল
মধ্যাহ্ন বিরতি থেকে ফিরে এসে শুরুতে তাইজুল ইসলামের উইকেট হারায় বাংলাদেশ। আগের দিন দলের বিপদের মুখে নাইট ওয়াচম্যান হিসেবে খেলতে নেমেছিলেন তাইজুল। আর সেই তিনিই পরদিন দলের ভরসা হয়ে দাঁড়ালেন। সিলেট টেস্টে বাংলাদেশের ইনিংসের মান রক্ষার জন্য লড়েছেন। ব্যাট হাতে দলের ঢাল হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন। দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ে ফিফটির পথেই ছিলেন তিনি।
তবে সেটা আর হয়নি। ৪৬ রান করে আউট হয়েছেন তাইজুল। কাসুন রাজিথার বলে উইকেটের পেছনে কুশল মেন্ডিসের হাতে ক্যাচ তুলে দেওয়ার আগে ৮০ বলে ৬ বাউন্ডারিতে সাজিয়েছেন নিজের ইনিংস। যেটি কিনা তার ক্যারিয়ার সেরা। এর আগে সর্বোচ্চ ৩৯ রানের ইনিংস ছিল। ৪০তম ওভারের দ্বিতীয় বলে তাইজুলের বিদায়ে সপ্তম উইকেটের পতন ঘটে বাংলাদেশের।
এরপর বাংলাদেশের ইনিংসের এগিয়ে নিয়ে যান খালেদ আহমেদ, শরিফুল ইসলামরা। এক প্রান্তে ১১ রান করে আউট হন মিরাজ। তবে শরিফুলের ১৫ ও খালেদের ২২ রানের ইনিংস বাংলাদেশকে সম্মানজনক অবস্থানে নিয়ে যায়। তবুও দুইশ করতে পারেনি দল। ৫১.৩ ওভারে ১৮৮ রানে শেষ হয় টাইগারদের ইনিংস।
শ্রীলঙ্কার হয়ে বিশ্ব ফার্নান্দো ৪টি, কাসুন রাজিথা ও লাহিরু কুমারা ৩টি করে উইকেট শিকার করেন।
Discussion about this post