কাইয়ুম আল রনি: মুমিনুল হক সৌরভ। বাংলদেশের সাগরপাড়ের ছেলে। বেড়ে উঠা যার চার দেয়ালের মধ্যেই। সাগরপড়ারের ছেলে হলেও শৈশবে হইহুল্লোড়, ছুটাছুটি ছিল না তার জীবনে। উত্তাল সাগরে ঝাপিয়ে পড়ার সুযোগও ছিলনা তেমনটা।
কক্সবাজারের গইলা পাড়ার ছেলে মুমিনূল হক সৌরভ। আজ জাতীয় টেস্ট দলের অপরিহার্য্য অংশ। তাকে ছাড়া টাইগারদের টেস্ট দল কল্পনাই করা যায়না। সেই মুমিনুল সম্প্রতি এসে ছিলেন সিলেটে। কথা বলেছেন এসএনপিস্পোর্টস২৪ডটকেমর সঙ্গে।
দুই ভাই, এক বোনের সংসারে মুমিনুল হক দ্বিতীয়। স্কুলে পড়া থেকেই ক্রিকেটের প্রতি নেশা ছিলো চরম। বড় ভাই আর বাবা যখন দেখলেন ছেলেটা বড্ড ক্রিকেট পাগল তাই ক্লাস সেভেনে পড়ার সময়ই ভর্তি করিয়ে দিলেন বিকেএসপিতে।
বিকেএসপির কঠিন আর শৃঙ্খলা মেনে চলায়ই তার আজকের মুমিনুল হয়ে উঠা। শৈশবের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে মুমিনুল হক বলেন, শৈশবটা বলতে তেমন কিছুই ছিলো না। যখন থেকে বুঝদার হয়ে উঠলাম তখনি বাড়ি ছাড়া হতে হয়েছে। ক্রিকেটের টানে ভর্তি হয়ে ছিলাম বিকেএসপিতে। বিকেএসপির জীবনে কোন শৈশব নেই। এখানে কঠোর নিয়ম আর শৃঙ্খলায় বড় হয়েছি।
ইচ্ছে করলেই স্বপ্নের ভুবনে পাড়ি দেওয়া যাবে না, ঘুরতে যাওয়া যাবে না জানিয়ে মুমিনুল বলেন, অনেক সময় বাইরে ঘুরার ইচ্ছা থাকলেও তা বিকেএসপিতে কখনোই হবে না। বাড়ির টান থাকলেও অসময়ে যেতে পারবেন না। নিয়ম মেনেই বেরাতে হবে, আবার নিয়ম মেনেই বিকেএসপিতে ফিরতে হবে। খাওয়া-দাওয়া থেকে শুরু করে সবকিছুই করতে হবে নিয়ম মেনে। বলতে গেলে শৈশবটা কেটেছে চার দেওয়ালের বন্দী হয়ে।
তবে কাউকে ক্রিকেটার হতে হলে, ক্রিকেট নিয়ে ক্যারিয়ার গড়তে হলে এমন জীবনই কাটাতে হবে জানিয়ে মুমিনুল হক বলেন, খেলাধূলার ক্যারিয়ারের জন্য বিকেএসপিই সবার সেরা। এখানে যারা সুযোগ পাবে তারা ভালো ক্রিকেটার হবেই। এজন্য হয়তো অনেক কিছু ত্যাগ করতে হবে। কিন্তু এসব ত্যাগ করে যারা টিকে থাকতে পারবে তারাই সফল ক্রিকেটার হিসেবে ক্যারিয়ার গড়বে।
ভালো ক্রিকেটার হওয়ার পূর্ব শত কঠোর অধ্যাবসায়। যারা ক্রিকেটার হতে চায় তাদেরকে কঠোর পরিশ্রম করতে হবে। নিয়ম মেনে চলতে হবে। নিয়ম না মানলে ক্রিকেট খেলা যায় না।
নিজের ভক্তদের উদ্দেশ্যে মুমিনুল বলেন, সবাইকে বলবো ভালো কাজে মনোনিবেশ করতে, ঠিকমত অনুশীলন করতে। যারা যতবেশি পরিশ্রম করবে তারা ঠিক ততটাই উন্নতি করবে। ভালো ক্রিকেটার হতে হলে অবশ্যই পরিশ্রম করতে হবে।
নিজের ক্যারিয়ার নিয়ে মুমিনুল হক এসএনপিস্পোর্টসকে বলেন, লক্ষ্য একটাই ভালো খেলতে চাই। ভালো খেলে যতদূর যাওয়া যায়, সেখানেই যেতে চাই। একজন ক্রিকেটার সব সময়ই লক্ষ্য থাকে ভালো খেলার। আমিও চাই প্রতিটি সিরিজে ভালো খেলতে, নিজের সেরাটা দিতে।
১৯৯১ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর কক্সবাজার শহরের গইলা পাড়ায় জন্ম নেওয়া এই কৃতি ক্রিকেটারের জাতীয় দলে অভিষেক হয় ২০১২ সালে। ওয়ানডে ক্রিকেটে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ২০১২ সালের ৩০ নভেম্বর অভিষেক হয় তার।
টেস্ট দলের এই অপরিহার্য্যের অংশ মুমিনুল হকের টেস্ট অভিষেক হয় ২০১৩ সালের ৮ মার্চ। অভিষেক টেস্টের শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে প্রথম ইনিংসে ১০৮ বলে ৫৫ রানের এক ঝলমলে ইনিংস খেলেন তিনি।
টেস্টে মুমিনুল হকের সর্বোচ্চ ইনিংস ১৮১ রান। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে চট্টগ্রামে টেস্টের সর্বোচ্চ ইনিংসটি খেলেন তিনি। স্বল্প সময়ে করেছেন চারটি সেঞ্চুরি। রয়েছে দশটি অর্ধশতকও।
এসএনপিস্পোর্টসটোয়েন্টিফোরডটকম/নিপ্র/০০