নিজস্ব প্রতিবেদক:: চট্টগ্রাম টেস্টে বড় লিড পেলো শ্রীলঙ্কা। বাংলাদেশকে মাত্র ১৭৮ রানেই গুটিয়ে দিয়েছে সফরকারীরা। এতেই প্রথম ইনিংসে ৩৫৩ রানের বড় লিড পেলো দলটি।
লঙ্কানদের ৫৩১ রানের জবাবে নিজেদের প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশ চরম ব্যাটিং ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। ব্যাটারদের দায়িত্বহীন ব্যাটিংয়ে মাত্র ১৭৮ রান তুলতে পেরেছে স্বাগতিকরা।
আগের দিন ১ উইকেটে ৫৫ রান তৃতীয় দিন শুরু করা বাংলাদেশ দল একের পর এক উইকেট হারাচ্ছে নিয়মিত বিরতিতে। দুই অপরাজিত ব্যাটার জাকির ও তাইজুল আজ সকালে সাজঘরে ফেরার পরপরই ভেঙে পড়ে টাইগারদের ব্যাটিং লাইনআপ।
সাগরিকার জহুর আহমেদ চৌধুরি স্টেডিয়ামে প্রথম ইনিংসের শুরু থেকে দেখেশুনে খেলতে থাকেন দুই ওপেনার মাহমুদুল হাসান জয় ও জাকির হাসান। ভালো জুটিও দাঁড় করিয়েছিলেন তারা। তবে ১৩তম ওভারের তৃতীয় বলে জয়কে বোল্ডআউট করে ৪৭ রানের সেই জুটি ভেঙে দেন লাহিরু কুমারা। বাংলাদেশ হারায় তাদের প্রথম উইকেট আর ৪২ বলে ৩ বাউন্ডারিতে ২১ রান করেই প্যাভিলিয়নের পথ ধরেন জয়।
এক উইকেট নিয়ে তৃতীয় দিন শুরু করা বাংলাদেশ আজ দ্বিতীয় উইকেট হারায় জাকিরের বিদায়ে দলীয় ৯৬ রানে। ইনিংসের ৩৩তম ওভারের পঞ্চম বলে ফিফটি করে সাজঘরে ফেরেন টাইগার ওপেনার। আট চারে ১০৪ বলে ৫৪ রানের ইনিংসটি সাজান তিনি। তার বিদায়ের পর উইকেটে আসা ফিরেন ১ রানেই।
এরপরই সাজঘরের পথ ধরেন আগের দিন নাইটওয়াচম্যান হিসেবে নামা তাইজুল। ৩৭তম ওভারের চতুর্থ বলে দলীয় ১০৫ রানে চতুর্থ উইকেট হারায় বাংলাদেশ দল। উইকেটে নামা সাকিবও ইনিংস বড় করতে পারেননি। ইনিংসের ৪৫তম ওভারের তৃতীয় বলে দলীয় ১২৬ রানের মাথায় ব্যক্তিগত ১৫ রানে তিনি ফিরেন প্যাভেলিয়নে। তার বিদায়ে পঞ্চম উইকেট হারায় স্বাগতিকরা। একই ওভারের পঞ্চম বলে ফিরেন লিটন দাসও। ১৩৬ রানে ষষ্ট উইকেট হারায় টাইগাররা। ৭ রানে সাজঘরে ফেরেন লিটন দাস।
এরপর উইকেটে কেবল কিছুটা লড়াই করেন মুমিনুল হক। ৮৪ বলে ৩৩ রানের ইনিংস খেলে লঙ্কান বোলারদের বিপক্ষে প্রতিরোধের চেষ্টা করেন। তবে অন্য প্রান্ত থেকে একে একে দীপু, মিরাজ, খালেদরা ফিরেন সাজঘরে। ৩৬ বলে ৮ রান করেন দীপু, ৩১ বলে ৭ রান করেন মিরাজ।১১ বলে ১ রান খালেদের।বাংলাদেশকে থেমে যেতে হয় ৬৮.৪ ওভারে ১৭৮ রানে।
শ্রীলঙ্কার হয়ে আসিথা ফার্নান্দো ৪টি, লাহিরু কুমারা, প্রবাথ জয়াসুরিয়ারা ২টি করে উইকেট লাভ করেন।
এর আগে বাংলাদেশ দলকে রানের চাকায় পিষ্ট করে থামে শ্রীলঙ্কা। প্রায় দুই দিন ব্যাটিং করে নিজেদের প্রথম ইনিংসে ১৫৯ ওভারে ৫৩১ রানে অলআউট হয়েছে লঙ্কানরা।
৪ উইকেটে ৩১৪ রান নিয়ে আগের দিন যেখানে শেষ করেছিল শ্রীলঙ্কা, ঠিক সেখান থেকেই দারুণভাবে চট্টগ্রাম টেস্টের দ্বিতীয় দিনের সকালের শুরুটা করে দলটি। সাগরিকার আকাশে কালো মেঘের সাথে এদিন লঙ্কানদের ব্যাটিংও বাংলাদেশের জন্য কালো মেঘ হয়ে দাঁড়িয়েছিল। প্রথম এক ঘন্টা বেশ ভালো ব্যাটিংও করে সফরকারীরা। দীনেশ চান্দিমাল ও ধনাঞ্জয়া ডি সিলভা তুলে নেন হাফ সেঞ্চুরি।
তবে শ্রীলঙ্কার ৩৭৫ রানের মাথায় দলকে ব্রেক থ্রু এনে দেন সাকিব আল হাসান। ৫৯ রান করা চান্দিমালকে ফিরিয়ে নিজের দ্বিতীয় উইকেট শিকার করেন এই বাঁহাতি স্পিনার। ধনাঞ্জয়ার সাথে চান্দিমালের ৮৬ রানের জুটি ভাঙে। আউট হওয়ার আগে ১০৪ বলে ৫ বাউন্ডারি ও ২ ছক্কায় ৫৯ রান করেন চান্দিমাল। সেই জুটি ভাঙার পর ধনাঞ্জয়া ও কামিন্দু মিলে এগিয়ে নেন সফরকারীদের ইনিংস। দুজনের ৩৬ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটিতে ভর করে চারশ রানের কোটা পার করেই মধ্যাহ্ন বিরতিতে যায় লঙ্কানরা।
তবে মধ্যাহ্ন বিরতি থেকে ফেরার পরই একেবারের প্রথম ওভারে খালেদ আহমেদের এলবিডব্লিউর শিকারে পরিণত হয়ে প্যাভিলিয়নের পথ ধরেন অধিনায়ক ধনাঞ্জয়া। যাওয়ার আগে ১১১ বলে ৬ বাউন্ডারি ও ২ ছক্কায় ৭০ রানে সাজান নিজের ইনিংস। এরপর সপ্তম উইকেটে কামিন্দু মেন্ডিসকে নিয়ে ৬৫ রানের জুটি গড়েন প্রভাত জয়সুরিয়া। চা-বিরতিতে যাওয়ার আগ মূহুর্তে ২৮ রান করা জয়সুরিয়াকে এলবিডব্লিউর ফাঁদে ফেলে সেই জুটি ভাঙেন সাকিব।
চা-বিরতি থেকে এসে এক প্রান্ত আগলে রেখে লোয়ার অর্ডারকে সাথে নিয়ে রান বাড়িয়ে নিতে থাকেন কামিন্দু মেন্ডিস। প্রথম টেস্টে জোড়া সেঞ্চুরি হাঁকানো এই বাঁহাতি এই ম্যাচেও সেঞ্চুরির পথে ছিলেন। তবে বাকিদের ব্যর্থতার কারণে পারেননি। লোয়ার অর্ডারে ব্যাটাররা আউট হয়ে পড়লে, তিনি শেষ পর্যন্ত ১৬৭ বলে ৯ বাউন্ডারি ও ২ ছক্কায় ৯২ রানের অনবদ্য ইনিংস খেলে অপরাজিত থাকেন। ছয় ফিফটিতে লঙ্কানদের ইনিংস থামে ৫৩১ রানে।
বাংলাদেশের হয়ে সাকিব ৩টি, অভিষিক্ত হাসান মাহমুদ ২টি, মিরাজ ও খালেদ ১টি করে উইকেট লাভ করেন। একাধিক ক্যাচ মিস না হলে গল্পটা ভিন্নও হতে পারত।
এসএনপিস্পোর্টসটোয়েন্টিফোরডটকম/নিপ্র/ডেস্ক/০০
Discussion about this post