স্পোর্টস ডেস্কঃ ভারতের রান পাহাড় টপকাতে গিয়ে মুখ থুবড়ে পড়ল শ্রীলঙ্কা। মোহাম্মদ শামি-মোহাম্মদ সিরাজের বোলিং তোপে মাত্র ৫৫ রানে অলআউট হয়েছে তারা। ৩০২ রানের রেকর্ডগড়া জয়ে বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে জায়গা করে নিয়েছে ভারত। বিশ্বকাপের ইতিহাসে রানের ব্যবধানে এটা দ্বিতীয় সর্বোচ্চ জয়।
এর আগে গত ২৫ অক্টোবর নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে ৩০৯ রানের জয় পেয়েছিল অস্ট্রেলিয়া। আর ওয়ানডে ক্রিকেটে এটা তৃতীয় সর্বোচ্চ রানের ব্যবধানে জয়। শীর্ষে থাকা রেকর্ডটাও ভারত-শ্রীলঙ্কারই। এ বছরের জানুয়ারিতে কেরালার ত্রিভান্ধ্রুমে ৩১৭ রানে লঙ্কাকে হারায় ভারত। আর আজ বিশ্বকাপের মঞ্চে আরও একবার।
৩৫৮ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে লজ্জাজনক ব্যাটিং করেছে শ্রীলঙ্কা। মোহাম্মদ সিরাজ এবং মোহাম্মদ শামির অসাধারণ বোলিংয়ের সামনে দাঁড়াতেই পারেনি কুশল মেন্ডিসের দল। ২৯ রানে ৮ উইকেট হারানোর পর মহেশ থিকশানা এবং কাসুন রাজিথার ব্যাটে কোনোরকমে ৫৫ রান পর্যন্ত যেতে পেরেছে লঙ্কানরা। বড় ব্যবধানে হেরে টুর্নামেন্ট থেকে প্রায় বাদ তারা।
ভারতের দেয়া ৩৫৮ রানের পাহাড়সম লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে মোহাম্মদ সিরাজ এবং জাসপ্রীত বুমরাহর তোপে প্রথম ৪ ওভারেই ৪ উইকেট হারায় শ্রীলঙ্কা। সিরাজ একাই নেন তিন উইকেট। লঙ্কানদের ইনিংসের প্রথম বলেই পাথুম নিসাঙ্কাকে ফেরান বুমরাহ। সিরাজ নিজের প্রথম বলেই দিমুথ করুনারত্নেকে এলবিডব্লিউ করেন। একই ওভারের পঞ্চম বলে সাদিরা সামারাবিক্রমাকেও ফেরান এই পেসার। এরপর নিজের দ্বিতীয় ওভারে দুর্দান্ত এক বলে লঙ্কান অধিনায়ক কুশল মেন্ডিসকে ফেরান সিরাজ।
সিরাজ-বুমরাহর শুরুর ধাক্কা কোনোমতে সামলে যাওয়ার পর মোহাম্মদ শামির তোপের মুখে পড়ে শ্রীলঙ্কা। নিজের পরের পাঁচ ওভারে রীতিমতো ঝড় তোলেন শামি। পাঁচ ওভার থেকে তোলেন ৫ উইকেট। তাতে ম্যাচ শেষে ম্যাচসেরার পুরষ্কারটাও উঠেছে তার হাতে। ম্যাচের শেষ উইকেটটা নিয়েছেন রবীন্দ্র জাদেজা। দিলশান মাদুশঙ্কাকে আউট করে ইনিংসের ইতি টানেন তিনি। ৫৫ রানে থামে শ্রীলঙ্কার ইনিংস। যা বিশ্বকাপের ইতিহাসে সর্বনিম্ন সংগ্রহ। এর আগে বাংলাদেশের দখলে ছিল এই রেকর্ড। ২০১১ বিশ্বকাপে মাত্র ৫৮ রানে অলআউট হয়েছিল সাকিব আল হাসানের দল।
এদিকে বিশ্বকাপের প্রথম চার ম্যাচে ডাগআউটে কাটানো শামি যেন সুদে-আসলে সব পরিশোধ করতে নেমেছেন। তিন ম্যাচের মধ্যেই তিনি দুবার ফাইফার (৫ উইকেট) পেয়েছেন। আরেক ম্যাচে তার শিকার ৪টি। সবমিলিয়ে তিন ম্যাচে ১৪ উইকেট শামির পকেটে। গতি ও সুইংয়ের মিশেলে তিনি ব্যাটারদের তটস্থ করে রাখার কৌশল আয়ত্ত করেছেন। শ্রীলঙ্কার টপ ও মিডল অর্ডারের ব্যর্থতার মাঝে একমাত্র দুই অঙ্কের রানে পৌঁঁছা ব্যাটার অভিজ্ঞ অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউস। ২৫ বলে তিন ১২ রান করেন।
২৯ রানে ৮ উইকেট হারিয়ে লঙ্কানরা বিশ্বকাপ ইতিহাসের সর্বোচ্চ ব্যবধানে হারের প্রহর গুনছিল। সেখান থেকে তাদের উদ্ধার করেছেন টেল-এন্ডারে নামা মাহেশ থিকশানা ও কাসুন রাজিথা। দুজনের ব্যাটে যথাক্রমে আসে ১২ ও ১৪ রান। মাত্র ১৯.৪ ওভারেই ভারতের দেওয়া লক্ষ্যের চেয়ে ৩০২ রান দূরত্বে নোঙর ফেলে লঙ্কান জাহাজ! লজ্জার হারে বিশ্বকাপ থেকে বিদায়ের পথে তারা। শামির ৫ ছাড়া ৩ উইকেট নেন সিরাজ। ১টি করে উইকেট নেন বুমরাহ ও জাদেজা। রেকর্ডগড়া জয়ে পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষস্থান পুনরুদ্ধার করেছে রোহিত শর্মার দল।
এর আগে দারুণ ব্যাট করেছেন ভারতের তিন ব্যাটার- শুভমান গিল, বিরাট কোহল ও শ্রেয়াস আইয়ার। টস হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে দুই বলের মাথায় অধিনায়ক রোহিত শর্মার উইকেট হারায় ভারত। তবে এরপরই জুটি গড়েন বিরাট কোহলি-শুভমান গিল। দ্বিতীয় উইকেটে ১৮৯ রানের জুটি গড়েন তারা। সেঞ্চুরির কাছাকাছি থাকতে গিল এবং বিরাটকে ফেরান দিলশান মাদুশঙ্কা। ৯৪ বলে ৮৮ করে ফেরেন কোহলি, গিল করেন ৯২ রান।
গিল ৯২ রান করেন ১১টি চার ও দুটি ছক্কায়। কোহলি ৮৮ রান করেন ১১টি চারের মারে। বড় রানের দেখা পাননি লোকেশ রাহুল এবং সূর্যকুমার যাদব। তাতে ৪০০ রানের সম্ভাবনা থাকলেও সেটা আর হয়নি। শেষদিকে টর্নেডো ইনিংস খেলেছেন শ্রেয়াস আইয়ার। ৫৬ বলে তার ৮২ রানের ইনিংসে ৩৫০ রান পার করে ভারত। ছয়টি ছক্কা ও তিন চারে ৮২ রানের ইনিংস খেলেন আইয়ার। রবীন্দ্র জাদেজা খেলেছেন ২৪ বলে ৩৫ রানের ইনিংস। শ্রীলঙ্কার হয়ে ৫ উইকেট নিয়েছেন মাদুশঙ্কা। দুশমন্থ চামিরা নিয়েছেন একটি উইকেট।
Discussion about this post