নিজস্ব প্রতিবেদক:: মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। বাংলাদেশের বহু জয়ের নায়ক। টাইগার ক্রিকেটের সাইলেন্ড কিলার। ব্যাটে-বলে প্রায় দুই দশকেরও বেশি সময় সার্ভিস দিয়েছেন লাল সবুজ ক্রিকেটকে। নিরবে নিজের কাজটা করে গেছেন জাতীয় দলের জার্সিতে। ভক্ত-সমর্থকেরা তাই নাম দেন সাইলেন্ড কিলার।
মাঠে নেমে প্রতিপক্ষকে ছারখার করে দিয়েছেন বহু ম্যাচে। টিম বাংলাদেশের অনেক জয়েরও নায়ক তিনি। অভিজ্ঞ এই ক্রিকেটার বাংলাদেশের জার্সিকে ক্রিকেটের সংক্ষিপ্ত ফরম্যাটে টি-২০ থেকে তুলে রাখলেন। তার বিদায়ী ম্যাচে ভারতের বিধ্বংসী ব্যাটিংয়ের সাক্ষী হয়েছে ক্রিকেট দুনিয়া। স্বাগতিক ভারত নিজেদের ক্রিকেট ইতিহাসে টি-২০ ফরম্যাটে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান সংগ্রহ করে বিবর্ণ করে তুলেছে তার বিদায়ী ম্যাচ।
সাইলেন্ড কিলার বিদায়ী ম্যাচে বাংলাদেশের হার ১৩৩ রানের। সাথে তিন ম্যাচের টি-২০ সিরিজে হোয়াইটওয়াশ। অভিজ্ঞ এই ক্রিকেটারের বিদায়ী ম্যাচে লড়াইও জমাতে পারেনি বাংলাদেশ দল। সিরিজের দ্বিতীয় টি-২০’র আগে দিল্লীতে সংবাদ সম্মেলনে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ জানিয়ে দেন, ভারতের বিপক্ষে সিরিজই লাল সবুজ জার্সিতে ক্রিকেটের সংক্ষিপ্ত এই ফরম্যাটে তার শেষ সিরিজ। ম্যাচ শেষে দলের পক্ষ থেকে অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত রিয়াদের হাতে তুলে দেন বিদায়ী স্মারক।
হায়দ্রাবাদে বিদায়ী ম্যাচে রিয়াদ ব্যাটে-বলেও জ্বলে উঠতে পারেননি। ব্যাট হাতে নয় বলে আট রান করেছেন। ১২ মিনিট উইকেটে থেকে হাঁকিয়েছেন একটি বাউন্ডারি। বল হাতেও খুব সুবিধা করতে পারেননি। দুই ওভার বোলিং করে ২৬ রান খরচা করে শিকার করেছেন একটি উইকেট।
বাংলাদেশের তারকার বিদায়ী ম্যাচে আগে ব্যাট করা ভারত নিজেদের টি-২০ ইতিহাসে সর্বোচ্চ সংগ্রহের রেকর্ড গড়ে। সঞ্জু স্যামসনের সেঞ্চুরিতে ভারত থামে ২৯৭ রানে। জবাবে ব্যাট করতে নামা বাংলাদেশ তাওহীদ হৃদয়ের লড়াইয়ের পরও থেমে যায় ১৪৭ রানে। তিন ম্যাচের টি-২০ সিরিজ ৩-০ ব্যবধানেই জিতলো স্বাগতিকরা।
৩৯৮ রানের বিশাল টার্গেটে ব্যাট করতে নামা বাংলাদেশ শুরুটা করে শুন্য রানে প্রথম উইকেট হারিয়ে। ইনিংসের প্রথম বলেই ওপেনার পারভেজ হোসেন ইমন ফিরেন সাজঘরে। উইকেট হারিয়ে শুরু করা বাংলাদেশ দ্বিতীয় উইকেট হারিয়ে দলীয় ৩৫ রানে তানজীদ তামিমের বিদায়ে। ইনিংসের চতুর্থ ওভারের প্রথম বলে বিদায়ের আগে এই ওপেনার করেন ১৫ রান।
তিনে নামা অধিনায়ক শান্তও নিজের ইনিংস বড় করতে পারেননি। ষষ্ট ওভারের দ্বিতীয় বলে দলীয় ৫৯ রানের মাথায় ফিরেন প্যাভেলিয়নে। ১১ বলে করেন ১৪ রান। চতুর্থ উইকেটে লিটন ও তাওহীদ পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করেন। দু’জনে মিলে গড়েন ৫৩ রানের জুটি। দলীয় ১১২ রানে ইনিংসের ১২তম ওভারের চতুর্থ বলে লিটনের বিদায়ে ভাঙে তাদের জুটি। আট চারে ২৫ বলে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৪২ রান করেন লিটন।
লিটন ফিরে গেলেও এক প্রান্ত আগলে রেখে ব্যাট করতে থাকেন তাওহীদ হৃদয়। লড়াকু ইনিংস খেলে শেষ পর্যন্ত তিনি অপরাজিত থাকেন। করেন ৪২ বলে ৬৩ রান। পাঁচ চার আর তিন ছক্কায় সাজানো ছিলো তার ইনিংসটি। ক্যারিয়ারের শেষ টি-২০ ম্যাচ খেলতে নামা মাহমদুউল্লাহ রিয়াদ করেন ৮ রান। বিদায়ী ইনিংসটি খেলেন নয় বলে এক বাউন্ডারিতে। বাংলাদেশ শেষ পর্যন্ত থামে সাত উইকেটে ১৬৪ রানে।
ভারতের হয়ে রবি বিষ্ণু তিনটি ও মায়াঙ্ক ইয়াদব দুটি করে উইকেট লাভ করেন।
এর আগে হায়দ্রাবাদে টস জিতে ব্যটিংয়ের সিদ্ধান্ত নেয় স্বাগতিক ভারত। ওপেনার সঞ্জু স্যামসন শুরু থেকেই ছিলেন বিধ্বংসী। বাংলাদেশ বোলারদের বাজে বোলিংয়ের সঙ্গে বাজে ফিল্ডিংয়ের দিনে সেঞ্চুরি হাঁকান স্বাগতিক ব্যাটার। ব্যাট হাতে তিনি ছিলেন মারমুখী। তাকে থামানোর কোনো উপায় যেনো জানা ছিলো না বাংলাদেশের বোলারদে। ৪৭ বলে ১১১ রান করে থেমেছেন তিনি। ততোক্ষণে ভারত ১৯৫ রান পেরিয়েছে। আট ছয় ও এগারো চারে সাজিয়েছেন সেঞ্চুরির ইনিংসটি।
সঞ্জু স্যামসনের দিনে ব্যাট হাতে ভারতের আরেক ব্যাটার সুরাইয়াকুমার ইয়াদবও ছিলেন মারমুখী। ৩৫ বলে ৭৫ রান করেছেন পাঁচ ছক্কা ও আট চারে। মারমুখী ছিলেন ভারতের সকল ব্যাটারই। দুর্বল ফিল্ডিংয়ের সঙ্গে নিষ্প্রাণ বোলিংয়ের সুযোগ উইকেটে যারা আসেন সকলেই হয়ে উঠেন মারমুখী। টাইগার বোলাররা যেনো ছিলেন রীতিমতো অসহায়।
স্বাগতিকদের হয়ে ১৩ বলে ৩৪ রানের ক্যামিও ইনিংস খেলেছেন রাইয়ান পরাগ। ছোট ইনিংস সাজিয়েছেন ছয় ছক্কা ও একটি চারে। কম যাননি হার্দিক পান্ডিয়াও। ব্যাট হাতে তিনিও ছিলেন স্বভাবসুলভ মারমুখী ভঙ্গিতে। খেলেন ১৮ বলে ৪৭ রানের ঝড়ো ইনিংস। চারটি করে চার ও ছক্কায় সাজানো ছিলো তার ঝড়ো ইনিংসটি। ৮ রানে অপরাজিত থাকেন রিঙ্কু সিং। ভারত থামে ছয় উইকেট ২৯৭ রানে।
বাংলাদেশের হয়ে তানজীম হাসান সাকিব তিনটি, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ, মুস্তাফিজুর রহমান ও তাসকিন আহমদরা একটি করে উইকেট লাভ করেন।
এসএনপিস্পোর্টসটোয়েন্টিফোরডটকম/নিপ্র/ডেস্ক/০০