নিজস্ব প্রতিবেদকঃ ব্যাটে-বলে পাত্তায়ই পেলে না আয়ারল্যান্ড। বৃষ্টির কারণে ২০ ওভার কেটে ১৭ ওভারে নেমে আসা ম্যাচে ৭৭ রানের বিশাল ব্যবধানে জিতেছে বাংলাদেশ দল। আর এই জয়ে এক ম্যাচ হাতে রেখেই ২-০’তে টি-টোয়েন্টি সিরিজ জয় নিশ্চিত করেছে টাইগাররা। ব্যাট হাতে লিটন-রনি-সাকিবদের দুর্দান্ত পারফম্যান্সের পর বল হাতে সাকিব-তাসকিনদের নৈপুণ্য। সহজেই ধরাশায়ী আইরিশরা।
বাংলাদেশের দেওয়া ২০৩ রানের বিশাল লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে শুরুতেই বড় ধাক্কা খায় আয়ারল্যান্ড। ইনিংস শুরুর একেবারে প্রথম বলেই বাংলাদেশকে সাফল্য এনে দেন তাসকিন। পল স্টার্লিংকে উইকেটের পেছনে থাকা লিটন দাসের ঝাঁপিয়ে পড়া দুর্দান্ত ক্যাচে ফেরান এই স্পিড স্টার। গোল্ডেন ডাক মেরে প্যাভিলিয়নের পথ ধরেন আইরিশ অধিনায়ক।
পরের ওভারের প্রথম বলেই উইকেটের দেখা পান অধিনায়ক সাকিব আল হাসানও। টপ অর্ডারে নামা লরকান টাকারকে রনি তালুকদারের সহজ ক্যাচে ফেরান সাকিব। এক বাউন্ডারিতে ৫ বলে ৬ রান করেই প্যাভিলিয়নের পথ ধরেন টাকার। দলীয় ৭ রানেই দুই উইকেট হারানো আইরিশরা আরও দুই উইকেট হারিয়েছে চতুর্থ ওভারে।
নিজের দ্বিতীয় ও দলের চতুর্থ ওভার করতে সাকিব আরও দুই উইকেট তুলে নেন প্রথম বলে রস অ্যাডায়ারকে ফিরিয়েছেন বোল্ড আউটে। যিনি কিনা ৬ রান করেছেন। এই ওভারের শেষ বলে গ্যারেথ ডেলানিকে ফিরিয়েছেন সাকিব উইকেটের পেছনে থাকা লিটন দাসের ক্যাচে পরিণত করে। ৬ রান করেই প্যাভিলিয়নের পথ ধরেন ডেলানিও।
দলের ষষ্ঠ ও নিজের তৃতীয় ওভারে সাকিব তুলে নেন আরও দুটি উইকেট। সেই ওভারের তৃতীয় বলে ২ রান করা জর্জ ডকরেল ও শেষ বলে ২২ রান করা হ্যারি টেক্টরকে ফিরিয়ে আইরিশ ব্যাটিং লাইনআপের মেরুদণ্ড ভেঙে দেন এই বাঁহাতি। ৬ ওভার শেষে ৪৩ রান তুলতেই ৬ উইকেট হারিয়ে চরম বিপর্যয়ে আইরিশরা।
এরপর ৩১ রানের জুটি গড়েন কার্টিস ক্যাম্ফার ও মার্ক অ্যাডায়ার। দলীয় ৮৬ রানেই ৮ উইকেট হারিয়ে বসে সফরকারীরা। দলীয় একশর আগেই অলআউটের শঙ্কা জাগে। তবে নবম উইকেটে ৩০ রানের জুটি গড়ে সেটা হতে দেননি ক্যাম্ফার ও গ্রাহাম হিউম। এক প্রান্ত আগলে রেখে লড়াই করা ক্যাম্ফার ফিফটি হাঁকিয়ে ফিরলে ভাঙে সেই জুটি। ৩০ বলে ৩টি করে চার ও ছয়ের মারে ৫০ রান করেন ক্যাম্ফার।
কোনোমতে একশ পার করা আয়ারল্যান্ড শেষ পর্যন্ত নির্ধারিত ১৭ ওভারে ৯ উইকেট হারিয়ে ১২৫ রানে থামে। দুই ছক্কায় ১৭ বলে ২০ রান করে গ্রাহাম হিউম অপরাজিত থাকেন। বেন ওয়াইট ২ রানে অপরাজিত থাকেন।
বাংলাদেশের হয়ে সাকিব আল হাসান একাই ৫ উইকেট শিকার করেন। ৪ ওভারে মাত্র ২২ রান খরচায় তুলে নিয়েছেন ৫ উইকেট। যা কিনা তাঁর আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারের তাঁর দ্বিতীয় সেরা বোলিং ফিগার। এর আগে উইন্ডিজের বিপক্ষে ২০ রানে ৫ উইকেট তাঁর ক্যারিয়ার সেরা বোলিং ফিগার। তবে আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে প্রথম অধিনায়ক হিসেবে দুই বার ৫ উইকেট শিকার করা ক্রিকেটার এখন সাকিব।
এদিন আরও দুই মাইলফল গড়েছেন। নিউজিল্যান্ডের টিম সাউদিকে টপকে আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট ইতিহাসের সর্বোচ্চ উইকেটশিকারি বোলার এখন সাকিব আল হাসান। সর্বোচ্চ ১৩৬ উইকেট এখন এই বাঁহাতির নামের পাশে। এছাড়া স্বীকৃত টি-টোয়েন্টিতে ৪৫০ উইকেটের মাইলফলক স্পর্শ করেছেন সাকিব।
সাকিবের ৫ উইকেট ছাড়াও তাসকিন আহমেদ ৩টি উইকেট শিকার করেছেন। হাসান মাহমুদ লাভ করেছেন ১ উইকেট।
এর আগে চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরি স্টেডিয়ামে দুই বারের বৃষ্টি শেষে কার্টেল ওভারের ম্যাচে টস হেরে ব্যাট করতে নেমে নির্ধারিত ১৭ ওভারে ৩ উইকেট হারিয়ে ২০২ রানের বিশাল পুঁজি পায় বাংলাদেশ। সাগরিকায় তাণ্ডব চালান দুই ওপেনার লিটন দাস ও রনি তালুকদার। উদ্বোধনী জুটিতে যোগ করেন ১২৪ রান। যা টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ উদ্বোধনী রানের জুটি ও সব মিলিয়ে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রানের জুটি।
১৯১’র বেশি স্ট্রাইক রেটে মাত্র ২৩ বলে ৩টি চার ও ২ ছক্কায় রনি ৪৪ রান করে ফিরলে ভাঙে ৯.২ ওভার স্থায়ী উদ্বোধনী জুটি। বেশি সময় টিকতে পারেননি লিটন দাস। ১২তম ওভারের শেষ বলে আউট হওয়ার আগে অবশ্য খেলে যান ক্যারিয়ার সেরা ৮৩ রানের ইনিংস। ৪১ বলে ১০ চার ও ৩ ছক্কায় সাজান তাণ্ডবময় ইনিংসটি। দুইশ’র বেশি স্ট্রাইক রেটে ব্যাটিং করে গড়েছেন নতুন রেকর্ডও।
মাত্র ১৮ বলে ফিফটি পূরণ করেন আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের হয়ে সবচেয়ে দ্রুততম ফিফটির রেকর্ড গড়েন লিটন। তিনি ভেঙেছেন ১৬ বছর আগে মোহাম্মদ আশরাফুলের করা ২০ বলে দ্রুততম ফিফটির রেকর্ড। এদিন স্বীকৃত টি-টোয়েন্টিতে ৪ হাজার রান করার কীর্তিও গড়েছেন। দ্বিতীয় বাংলাদেশি হিসেবে আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে পার করেছেন ৫০ বা এর বেশি ছক্কা হাঁকানোর কীর্তি।
রনি-লিটনের বিদায়ের পর ২৯ বলে ৬১ রানের ঝড়ো জুটি গড়েন তাওহীদ হৃদয় ও সাকিব আল হাসান। ইনিংসের এক বল বাকি থাকতে ৩ চার ও ১ ছক্কায় ২৪ রানের ক্যামিও খেলে ফেরেন হৃদয়। তবে ২৪ বলে ৩ বাউন্ডারি ও ২ ছক্কায় ৩৮ রানের ঝড়ো ইনিংস খেলে অপরাজিত থাকেন অধিনায়ক সাকিব। ১ বলে ২ রান করে অপরাজিত থাকেন নাজমুল হোসেন শান্ত।
আয়ারল্যান্ডের হয়ে বেন ওয়াইট ২টি উইকেট লাভ করেন।
এসএনপিস্পোর্টসটোয়েন্টিফোরডটকম/নিপ্র/সা