সিলেটের ফুটবল: প্রধান বাঁধা ‘খ্যাফ’ : সৈয়দ গোলাম জিলানী

0
41

একসময় ক্রিকেটের মত জাতীয় ফুটবলেও ছিলো সিলেটের আধিপত্য। কায়সার হামিদ, রণজিত দাস সহ অনেক কিংবদন্তি ফুটবলারই খেলেছেন জাতীয় দলে। দিন দিন সে জায়গটাও হারিয়ে ফেলছে সিলেট। কিন্তুু কেন? সিলেট থেকে ফুটবলাররা সে ভাবে বেরুচ্ছে না, কেন সিলেটের মেধাবী ফুটবলাররা যেতে পারছে না জাতীয় পর্যায়ে এসব নিয়ে আজ এসএনপিস্পোর্টটোয়েন্টিফোরডটকম এর অতিথি কলামে লিখেছেন জাতীয় ফুটবল দলের সাবেক সহকারী কোচ, দেশের কিশোরদের প্রথম সাফজয়ী সাফ অনুর্ধ্ব- ১৬ দলের প্রধান কোচ, সিলেটস্থ বাফুফে একাডেমির প্রধান কোচ সৈয়দ গোলাম জিলানী।

10352607_1357259130966545_1264360229599875647_n

সৈয়দ গোলাম জিলানী, অতিথি লেখক, এসএনপিস্পোর্টসটোয়েন্টিফোরডটকম: সিলেট অঞ্চলে প্রচুর মেধাবী ফুটবলার রয়েছে। ফুটবলের জন্য একে বারেই উপযুক্ত একটি শহর সিলেট। সিলেটের মানুষ ফুটবল পাগল। ফুটবলের শহরই বলা যেতে পারে সিলেটকে।

বাফুফের একমাত্র একাডেমিটি সিলেটে অবস্থানের কারণে আমাকেও সিলেটে থাকতে হতো এক সময়। সেই সময় আমি দেখি সিলেটের মানুষের ফুটবল প্রীতি। সিলেটে অনুষ্টিত বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপসহ  কিশোর ফুটবলারদের টুর্ণামেন্টে ফুটবলের যে জনপ্রিয়তা দেখেছি সিলেটে তা অন্য কোথাও দেখিনি।  দর্শক ভর্তি গ্যালারী খেলোয়াড়দের মনে জয়ের ক্ষুধাটা বাড়িয়ে দেয় বহুগুণ।

আমরা প্রথমবরের মত সাফের বয়স ভিত্তিক টুর্ণামেন্টে চ্যাম্পিয়ান হয়েছি এই সিলেটের মাঠেই। এই চ্যাম্পিয়ানশীপে সিলেটের অবদান কিন্তুু কম নয়। সবচে বড় ‘মানসিক’ সমর্থনটা সিলেটের দর্শকরাই দিয়েছেন আমাদেরকে। আমাদের ছেলেদের মাঠে তারা চাঙ্গা রেখেছেন। অনুশীলনের জন্যই সিলেটই উপযুক্ত বলে আমি মনে করি। নিরিবিলি পরিবেশ, উন্মক্ত অনুশীলনের স্থান, শুধু  একাডেমিতেই নয়। একাডেমির আশপাশের এলাকায় নিরাপদেই আমি ফুটবলারদের অনুশীলন করিয়েছি। ঠিকমত ফুটবলারদের অনুশীলন করাতে হলে সুন্দর ও নিরিবিলি পরিবেশ থাকতে হয়। ফুটবলারদের মাঠে মনোযোগী রাখতে এটা খুবই জরুরী। এ দিক দিয়ে অন্য শহরের চেয়ে শতভাগ এগিয়ে আছে সিলেট। এজন্যই আমি সাফ অনুর্ধ্ব- ১৬ ও এএফসি অনুর্ধ্ব-১৬ জাতীয় দলের অনুশীলনের জন্য সিলেটকেই বেছে নিয়ে ছিলাম। সেই ফলটাও আমরা পেয়েছি প্রথমবারের মত সাফ চ্যাম্পিয়ান হয়ে।

এতসব থাকার পরও কিন্তুু একটা ‘দুর্ভাগ্য’ আছে সিলেটের ফুটবল পাগল মানুষদের জন্য। জাতীয় ফুটবল ও ঢাকার ফুটবলে যতটা সিলেটের আধিপত্য থাকার কথা ছিল আমার মনে হয় ততটা নেই। উপযুক্ত শহর সিলেটের ফুটবলাররা এ জায়গায় অনেক পিছিয়ে আছে এখনো। এটা যে ফুটবল মেধার অভাবের কারণে তা নয়।

সিলেটে যথেষ্ট ফুটবল মেধা আছে। সঠিক ভাবে পরিচর্যা করলে জাতীয় ফুটবলে সিলেটের আরও বেশি ফুটবলাররা খেলতে পারবে। এখানে আমি যে বাঁধা দেখেছি তা হলো একমাত্র ‘খ্যাফ’ খেলা। সিলেটে ফুটবলের সবচে লোভনীয় এই জায়গাটা। ফুটবলের বেশি ‘খ্যাফ” এই সিলেটেই হয়। সিলেটের স্থানীয় ফুটবলারার নিজেদের প্রতিভার প্রতি মনোযোগী না হয়ে বিভিন্ন টুর্ণামেন্টে গিয়ে ‘চড়া দামে’ খ্যাফ খেলার প্রতিই বেশি মনোযোগী হন। ফলে সঠিক প্রতিভাটা সঠিক ভাবে কাজে লাগছে না।

এখানে একটা উদাহরণ দিতে পারি। ২০১৪-১৫ মৌসুমে ঢাকা ১ম বিভাগ ফুটবল লীগে টি এন্ড টি ক্লাবের হয়ে সিলেটের মতিন দুর্দান্ত পারফর্ম করেছে। দারুণ পারফর্মের পর ঢাকা মোহামেডানই নিজেদের দলে নিতে চেয়েছিল মতিনকে। এছাড়াও টি এন্ড টি ক্লাব সহ আরও অনেক ক্লাবই মতিনকে চেয়ে ছিল। কিন্তুুই তাকে দলে আনতে পারেনি। যার একমাত্র কারণই এই ‘খ্যাফ’ খেলা। মতিন চড়া দাম চেয়ে বসে ক্লাব গুলোর কাছে। এখানে তার ব্যাখাটা ছিল স্থানীয় ভাবে বিভিন্ন টুর্ণামেন্টে ‘খ্যাফ’ খেললে সে এর চেয়েও বেশি টাকা বছরে আয় করতে পারবে। একমাত্র এই লোভনীয় ‘খ্যাফ’ই প্রতিভাবান এই খেলোয়াড়কে আলোয় নিয়ে আসতে দেয়নি। সিলেটের খেলোয়াড়দের যে পেশাদারিত্বের অভাব তা এখানেই স্পষ্ট হয়ে যায়।

জাতীয় দলে এখন সিলেটের বেশ কয়েকজন আছে। ওয়াহেদ, তকলিছ, মুন্নারা খেলছে। তরুণ প্রতিভা সাদ, বক্কর, ফয়সালরা আছে। কিন্তুু এদেরকে ধরে রাখতে হলে, জাতীয় ফুটবলে আর বেশি করে নিয়ে আসতে হলে এলাকার বিভিন্ন টুর্ণামেন্টে গিয়ে খেলাটা এদের বন্ধ করতে হবে। তার চেয়ে ঢাকার ফুটবলে, জাতীয় ফুটবলে মনোযোগী হতে হবে। অনেক সময় দেখা যায় ফুটবল মৌসুমে ঢাকায় বিভিন্ন টুর্ণামেন্টে খেলার জন্য সিলেটের ফুটবলারদের বলা হলেও স্থানীয় ভাবে বিভিন্ন টুর্ণামেন্টে গিয়ে খেলার জন্য ঢাকায় আসতে চায় না সিলেটের ফুটবলারা। এটা রোধ করতে পারলেই ফুটবলের উপযুক্ত শহর সিলেট জন্ম দিবে আরও অনেক প্রতিভাবান ফুটবলার।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here