নিজস্ব প্রতিবেদক:: ‘আলোর নিচ’ নিশ্চিত অন্ধকার হতে যাচ্ছে। এমনিতেই মাঠ সংকটে সিলেটের ক্রিকেট লিগ আয়োজন করতেই প্রতি বছর গলদগর্ম হতে হয়ে ক্রিকেট কর্তাদের। মাঠ নিয়ে টানপোড়ানে বিসিবির জাতীয় স্কুল ক্রিকেট মাঝে মধ্যে আয়োজন করতে হয় এম সি কলেজ মাঠে। যেখানে পানি আর কাঁদা থাকে ক্রিকেটারদের সঙ্গী। বিসিবির ক্রিকেটার উঠে আসার আরেক পাইপলাইন বয়স ভিত্তিক ক্রিকেটের ভেন্যূ মিলে না সিলেটে।
বিকালে ক্রিকেট ম্যাচ চলছে, পাশেই অপেক্ষা করছেন হকি লিগের খেলোয়াড়রা। ক্রিকেট লিগের ম্যাচ শেষ হলেই মাঠে নামবেন তারা হকি লিগে খেলতে। এমন দৃশ্যও দেখা যেতো সিলেট জেলা স্টেডিয়ামে। বিভাগীয় বিভিন্ন পর্যায়ের খেলাধুলা, নানা ইভেন্ট আয়োজনে সারা বছর ব্যস্ত থাকে জেলা স্টেডিয়ামে। ক্রিকেট, হকিসহ অন্য ইভেন্টগুলোকে সংকটে ফেলে জেলা স্টেডিয়াম নিয়ে গেলো বাফুফে।
সিলেটের ঐতিহ্যবাহী জেলা স্টেডিয়ামে, বিভাগীয় শহরের খেলাধুলার প্রাণ। ক্রিকেট, হকি, ফুটবল সবই হতো যেই মাঠে, সেই জেলা স্টেডিয়াম নিয়ে গেলো বাফুফে। এখন থেকে শুধুই ফুটবল হবে জেলা স্টেডিয়ামে। বাফুফে পেয়েছে মাঠের কৃতিত্ব। নিজেদের খরচে মাঠ সংস্কার, রক্ষণাবেক্ষণ করবে ফুটবল ফেডারেশন। আয়োজন করবে নিজেদের ফুটবল ম্যাচ।
সিলেট জেলা স্টেডিয়ামের মালিকানা জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের। এনএসসি এই স্টেডিয়ামকে ফুটবলের জন্য বরাদ্ধ দিয়েছে ২৫ বছর। সিলেট জেলা ক্রীড়া সংস্থা, সিলেটের ক্রীড়া সংগঠক, কারো সাথে কোনো পরামর্শ না করেই এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে ক্রীড়াঙ্গণের অভিভাবক সংস্থাটি। সিলেটে আরো দু’টি ক্রিকেট মাঠ আছে। আন্তর্জাতিক এই দুই মাঠে চাইলেও স্থানীয় ক্রিকেট খেলার সুযোগ থাকে না। বিসিবির নানা প্রোগ্রামে ব্যস্ত থাকবে দুই মাঠই। জাতীয় দলের ম্যাচ, মহিলা দলের ম্যাচ ক্যাম্প, অনূর্ধ্ব-১৯ দলের ক্যাম্প, জাতীয় লিগের ম্যাচসহ নানা কাজে সারা বছর ব্যস্ত থাকে বিসিবির সেই দুই মাঠ।
প্রতি বছর লিগের সময় মাত্র কয়েকটা ম্যাচ আউটারে আয়োজনের জন্যও রীতিমতো দেনদরবার করতে হয় ক্রীড়া সংস্থার কর্মকর্তাদের। স্থানীয় ক্রিকেটের জন্য, জেলা ক্রীড়া সংস্থার ক্লাবগুলোর জন্য আন্তর্জাতিক মাঠ চাওয়াটাও বেমানান। তবুও বিসিবি মাঝে মধ্যে সিলেট লিগের কিছু ম্যাচ আয়োজনের সুযোগ দিয়ে থাকে। তবে পুরো লিগ বা মৌসুম জুড়ে সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়াম ও আউটার মাঠ কখনো পাওয়া যাবে না।
জেলা স্টেডিয়ামেও খেলা যাবে না ক্রিকেট। তাহলে সিলেটের ক্রিকেট কোথায় হবে? লিগ আয়োজন কোন মাঠে হবে এই প্রশ্নই সিলেটের ক্রিকেটাঙ্গণের। জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের এমন সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ সিলেটবাসী। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চলছে সমালোচনার ঝড়। আন্দোলনের প্রস্তুুতি নিচ্ছেন ক্রিকেটার, সংগঠকেরাও। সিলেট ক্রিকেটার্স এসোসিয়েশনের সভাপতি ইমতিয়াজ হোসেন চৌধুরী তান্না আজ দেশে ফিরবেন। এরপরই বৈঠকে বসবেন সিলেটের ক্রিকেটাররা। নির্ধারণ করবেন করণীয়।
সিলেটের সংগঠকেরা বলছেন, বাফুফে মাঠ নেবে, তারা সংস্কার করবে। ক্রিকেট, হকি যাবে কোথায়? তাদের দাবি ফুটবলের জন্য পৃথক মাঠ হোক। সেটা না হলে ক্রিকেটকে বিকল্প ব্যবস্থা করে দেওয়া হোক। এভাবে মাঠ ফুটবলকে দেওয়া হলে ক্রিকেট, হকি বন্ধ হয়ে যাবে। সিলেটের ক্রিকেট একাডেমিগুলোর প্রেকটিসের একমাত্র জায়গায় জেলা স্টেডিয়াম। একাডেমিগুলো অনুশীলনের সুযোগ না পেলে ক্রিকেটার উঠে আসার পথটাও বন্ধ হয়ে যাবে।
জানতে চাইলে সিলেট ক্রিকেটার্স এসোসিয়েশের সহ-সম্পাদক ইমরান আলী এনাম বলেন, ‘আমরা ক্রিকেটাররা এটা নিয়ে বসবো। আমাদের সভাপতি আজ সিলেটে আসছেন। আমরা ক্লাব অফিসিয়াল, ক্রীড়া সংস্থার কর্মকর্তাদের সাথে বৈঠকে বসে করণীয় নির্ধারণ করবো।’
জানতে চাইলে ক্রীড়া সংগঠক ও বিভাগীয় দলের ম্যানেজার, সিলেট প্রথম বিভাগ ক্রিকেট লিগের ক্লাব অফিসিয়াল আলী ওয়াসিকুজ্জামান চৌধুরী অনী এসএনপিস্পোর্টসকে বলেন, জেলা স্টেডিয়ামে ক্রীড়া সংস্থার তত্ত্বাবধানে আছে। এর সংস্কার, রক্ষণাবেক্ষণ ক্রীড়া সংস্থা করে। ক্রীড়া সংস্থার নিবন্ধিত ২০টি ক্রিকেট ক্লাব, ১২টি হকি ক্লাব এই মাঠেই খেলে। আমাদের স্কুল ক্রিকেট, বয়স ভিত্তিক ক্রিকেট সবই এই মাঠেই হয়। এতোদিন আমরা ক্রিকেট, ফুটবল, হকি সব একসাথেই খেলে আসছি। এখন মাঠটি বাফুফেকে দিয়ে দিলে ক্রিকেট ধ্বংস হয়ে যাবে। আমাদেরতো কোথাও যাওয়ার জায়গা নেই। একাডেমিগুলো এই মাঠেই প্রেকটিস করে। তারা প্রেকটিস করতে না পারলে ক্রিকেটার আসবে কোথা থেকে? বিষয়টা নিয়ে আমরা সবাই বসবো খুব শীঘ্রই।’
এসএনপিস্পোর্টসটোয়েন্টিফোরডটকম/নিপ্র/ডেস্ক/০০