স্পোর্টস ডেস্ক:: দেশে তখন আন্দোলনে উত্তাল, একের পর প্রাণহানিতে র ক্তা ক্ত পুরো বাংলাদেশ। সামাজিক, রাজনৈতিক ব্যক্তিরা ছাত্র আন্দোলনে সহমর্মিতা জানাচ্ছেন, নানা ভাবে পাশে দাঁড়াচ্ছেন। বাদ যাননি ক্রিকেটার, ফুটবলাররাও। তবে একজন তারকা ছিলেন ব্যতিক্রম।
ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান একটা শব্দও উচ্চারণ করেননি ছাত্র আন্দোলন নিয়ে। সমর্থকেরা চিৎকার, নানা ভাবে তার আকর্ষণ কাড়ার চেষ্টা করেও সফল হননি। ছাত্র আন্দোলনের মুখে অবশেষে সরকারের পতন হয়। সাকিব আল হাসানও হারান তার সংসদ সদস্য পদ।
এরপর থেকেই সাকিবকে নিয়ে নানা আলোচনা-সমালোচনা। ঢাকায় তার বিরুদ্ধে হত্যা মামলাও দায়ের। এ অবস্থায় সাকিব অবসরের ঘোষণা দেন। ঢাকার মাটিতে দেশের হয়ে শেষ টেস্ট খেলতে চান। কিন্তুু বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড শুরুতেই জানিয়ে দেয় ঢাকায় সাকিবকে নিরাপত্তা দেওয়া সম্ভব নয় তাদের পক্ষে।
বিসিবির এমন মনোভাবের পর সরকারও জানিয়ে দেয় আওয়ামীলীগ সরকারের সাবেক একজন সংসদ সদস্যের নিরাপত্তা দেওয়া তাদের পক্ষেও সম্ভব নয়। ক্রিকেটার সাকিবের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা আছে। এরফলে ঢাকায় এসে সাকিবের শেষ ম্যাচ খেলা নিয়ে শঙ্কা দেখা দেয়। যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া জানিয়ে দেন, আগে সাকিবকে তার রাজনৈতিক অবস্থান পরিস্কার করতে হবে।
অবশেষে সাকিব নিজের অবস্থান পরিস্কার করেছেন। ছাত্র আন্দোলনে একাত্মতা প্রকাশ করতে না পারায় দুঃখ প্রকাশ করেছেন। কেন আওয়ামীলীগে যোগ দিয়েছেন সেই ব্যাখাও দিয়েছেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এক পোস্টে সাকিব দুঃখ প্রকাশ করে বিস্তাতরিত ব্যাখা করেন।
সাকিব আল হাসানের স্ট্যাটাসটি হুবহু তুলে ধরা হলো…
‘আসসালামু আলাইকুম, আমার দেশের প্রতিটি মানুষের ভালোবাসার প্রতি শ্রদ্ধা। আমার প্রতি আপনাদের দোয়া ও ভালবাসা আমাকে আজকের এই সাকিব আল হাসান হিসেবে বিশ্ব দরবারে সমাদৃত করেছে।
শুরুতেই আমি শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছি সে সকল আত্মত্যাগকারী ছাত্রদের, যারা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্বে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শহীদ হয়েছেন এবং আহত হয়েছেন। তাদের প্রতি এবং তাদের পরিবারের প্রতি আমার অন্তরের অন্তস্তল থেকে শ্রদ্ধা এবং সমবেদনা। যদিও স্বজন হারা একটি পরিবারের ত্যাগকে কোন কিছুর বিনিময়ে পূরণ করা সম্ভব না। সন্তান হারানো কিংবা ভাই হারানোর বেদনা কোন কিছুতেই পূরণযোগ্য নয়।
এই সংকটকালীন সময়টাতে আমার সরব উপস্থিতি না থাকায় আপনারা যারা ব্যথিত হয়েছেন বা কষ্ট পেয়েছেন তাদের অনুভূতির জায়গাটার প্রতি আমার শ্রদ্ধা এবং এজন্য আমি আন্তরিকভাবে দুঃখিত।
আপনাদের জায়গায় আমি থাকলে হয়তো এভাবে মনঃক্ষুণ্ন হতাম।
আমি খুবই স্বল্প সময়ের জন্য মাগুরা-১ আসনের সংসদ সদস্য ছিলাম। আমার রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত হওয়াটা ছিল মূলত আমার জন্মস্থান অর্থাৎ আমার মাগুরার মানুষের উন্নয়নের জন্য সুযোগ পাওয়া। আপনারা জানেন যে, বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে নির্দিষ্ট কোন দায়িত্ব ছাড়া নিজের এলাকার উন্নয়নে সরাসরি ভূমিকা রাখাটা একটু কঠিন। আর আমার এই এলাকার উন্নয়ন করতে চাওয়া আমাকে সংসদ সদস্য হতে আগ্রহী করে। যাইহোক দিনশেষে আমার পরিচয় আমি একজন বাংলাদেশের ক্রিকেটার। আমি যখন যেখানে যে অবস্থাতেই থেকেছি অন্তর থেকে ক্রিকেটাকেই ধারণ করেছি।
এই ক্রিকেটকে ধারণ করে বিশ্বসেরা অলরাউন্ডারের সম্মান অর্জন করার পথে এগিয়ে নিয়ে গেছেন -আপনারা । আপনাদের ভালোবাসা এবং সমর্থন আমাকে আজকের সাকিব আল হাসান বানিয়েছে। আমি যখন দেশের জন্য ক্রিকেটের মাঠে ব্যাট ধরেছি তখন আমার সাথে ব্যাট ধরেছেন আপনারা সবাই। গ্যালারি থেকে আপনাদের চিৎকার, আপনাদের সমর্থন আমাকে ভালো খেলার অনুপ্রেরণা যুগিয়েছে। ক্রিকেট ম্যাচের দিন চায়ের দোকানে টেলিভিশনের সামনে উপচেপড়া ভিড় -আমাকে শক্তি যুগিয়েছে।
আমি জিতলে, আপনারা সবাই জিতেছেন। আমি হেরে গেলে, হেরে গেছেন আপনারা সবাই! আপনারা জানেন, খুব শীঘ্রই আমি আমার শেষ ম্যাচটি খেলতে যাচ্ছি। আমার ক্রিকেট ক্যারিয়ারের শুরু থেকে আজকের সাকিব আল হাসান হয়ে ওঠা পর্যন্ত এই পুরো জার্নিটাকে ড্রাইভ করেছেন আপনারা।
এই ক্রিকেটের এই গোটা গল্পটা আপনাদের হাতেই লেখা! তাই আমার শেষ ম্যাচে, এই গল্পের শেষ অধ্যায়ে, আমি আপনাদেরকে পাশে চাই। আমি আপনাদের সবাইকে সাথে নিয়ে বিদায় নিতে চাই। বিদায়বেলায়, সেই মানুষগুলোর হাতে হাত রাখতে চাই, যাদের হাতের তালি আমার ভালো খেলতে বাধ্য করেছে। বিদায়বেলায়, সেই মানুষগুলোর চোখে চোখ রাখতে চাই, আমার ভালো খেলায় যাদের চোখ আনন্দে উচ্ছ্বসিত হয়েছে। আবার আমার খারাপ খেলায় যাদের চোখ ছলছল করেছে।
আমি আশা করি, শুধু আশা না বিশ্বাস করি –এই বিদায় বেলায় আপনারা সবাই আমার সাথে থাকবেন। সবাই সাথে থেকে সেই গল্পের ইতি টানবেন, যে গল্পের নায়ক –আমি নই, আপনারা!’
এসএনপিস্পোর্টসটোয়েন্টিফোরডটকম/নিপ্র/ডেস্ক/০০