নিজস্ব প্রতিবেদকঃ বিশ্বকাপের ফাইনালে অল্পতেই গুঁটিয়ে গেল উড়তে থাকা ভারত। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে রোববার আগে ব্যাট করতে নেমে ২৪০ রান করেছে রোহিত শর্মার দল। ফিফটি হাঁকিয়েছেন বিরাট কোহলি ও লোকেশ রাহুল। টানা ১০ জয়ের সুখস্মৃতি নিয়ে ফাইনাল খেলতে নামা ভারত শিরোপা জিততে অজিদের আটকাতে হবে এই রানের মধ্যে। রান বন্যার বিশ্বকাপে মামুলীই লক্ষ্য বলা যায় এটি!
দীর্ঘ এক মাস ১৪ দিন পর বিশ্বকাপের ৪৭তম ও শেষ ম্যাচ মাঠে গড়াল আজ। আহমেদাবাদের নরেন্দ্র মোদী স্টেডিয়াম দিয়ে যাত্রা শুরু হয়েছিল এবারের আসরে। শেষটাও হচ্ছে এখানে। রোববার দুপুর আড়াইটায় শুরু হয় ভারত ও অস্ট্রেলিয়া ম্যাচ। দীর্ঘ ২০ বছর পর ওয়ানডে বিশ্বকাপ ফাইনালে মুখোমুখি এই দু’দল। এর আগে ২০০৩ সালে সবশেষ ফাইনালে দেখা হয়েছিল তাদের। সেবার ভারতকে হারিয়ে শিরোপা উৎসব করেছিল অজিরা। ভারতের সামনে আজ বদলা নেওয়ার সুযোগ।
শিরোপা জয়ের লক্ষ্যে টস হেরে আগে ব্যাট করতে নেমে ভারত শুরুতেই হারায় ওপেনার শুভমান গিলকে। বল হাতে অস্ট্রেলিয়াকে প্রথম ব্রেক থ্রু এনে দেন মিচেল স্টার্ক। ম্যাচের পঞ্চম ওভারে তিনি ফেরান গিলকে। অফ স্ট্যাম্পের বাইরে শর্ট বলে পুল করতে গিয়ে মিড অনে ক্যাচ দিলেন ভারতীয় ওপেনার। ৭ বলে মাত্র ৪ রান করেছেন গিল। তিন নম্বরে নামেন বিরাট কোহলি। এরপর ভারত অধিনায়ক রোহিত শর্মা ছিলেন হাফ সেঞ্চুরির পথে। তবে মাইলফলক আর স্পর্শ করা হয় নি ডানহাতি এই ব্যাটারের।
আক্রমণাত্বক খেলতে গিয়ে রোহিত থেমেছেন ৩১ বলে ৪৭ রান করে। ৪ চার ও ৩ ছক্কায় এই ইনিংস সাজান তিনি। চার নম্বরে নেমে শ্রেয়াস আইয়ার দ্বিতীয় বলেই বাউন্ডারি মেরেছেন। তবে টিকতে পারেন নি। প্যাট কামিন্সের ব্যাক অব লেংথ ডেলিভারি খোঁচা মেরে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়েছেন আইয়ার। ৩ বলে তিনি করেছেন ৪ রান। দ্রুত ২ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে ভারত। পাঁচ নম্বরে নামেন রাহুল।
ইনিংসের ১৪তম ওভারে বল করছিলেন অস্ট্রেলিয়ার লেগ স্পিনার অ্যাডাম জাম্পা। উইকেটে তখন কোহলি ও রাহুল। তখন মাঠে ঢুকে পড়েন এক দর্শক। খানিকক্ষণ খেলা বন্ধ ছিল। অবশ্য দ্রুত সেই আগুন্তুককে নিরাপত্তাকর্মীরা মাঠের বাইরে নিয়ে যান। কঠোর নিরাপত্তার ফাঁকগলে মাঠে ঢুকে পড়া সেই দর্শকের মুখে ফিলিস্তিনি পতাকার আদলে মাস্ক, গায়ের টি-শার্টে লেখা- ফিলিস্তিনে আগ্রাসন থামাও। মাঠে ঢুকেই ক্রিজে থাকা বিরাট কোহলির কাছাকাছিও চলে যান ওই আগন্তুক। কোহলির কাঁধেও হাত দেয়। তার টি-শার্টের পেছনে ফিলিস্তিনের পতাকা আঁকা আর তাতে লেখা ছিল ‘ফ্রি প্যালেস্টাইন’।
দ্রুত ৩ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়া ভারতের রান বাড়ানোর কাজ করে যাচ্ছিলেন কোহলি ও রাহুল। দুজনের জুটিতে আসে ৬৭ রান। তবে কোহলির বিদায়ে ভেঙেছে ৬৭ রানের চতুর্থ উইকেট জুটি। কামিন্সের শর্ট লেংথের বল আলতো করে খেলতে চেয়েছিলেন কোহলি। তবে বল ব্যাটের কানায় লেগে ভেঙেছে স্টাম্প। ফাইনালের মহাগুরুত্বপূর্ণ উইকেট নিলেন অস্ট্রেলিয়া অধিনায়ক। কোহলি থেমেছেন ৬৩ বলে ৫৪ রান করে। চলতি আসরে ১১ ইনিংসে ৩ সেঞ্চুরি ও ৬ ফিফটিতে তার সংগ্রহ ৭৬৫ রান। বিশ্বকাপের এক আসরে আর কোনো ব্যাটারের ৭০০ রান নেই।
কোহলির বিদায়ের পর দায়িত্বশীল ব্যাটিংয়ে পঞ্চাশ পূর্ণ করেন রাহুল। মাত্র এক চারে এই মাইলফলক ছুঁতে তিনি খেললেন ৮৬ বল। বিশ্বকাপ ফাইনালে পঞ্চাশ ছোঁয়া ইনিংসে দ্বিতীয় ভারতীয় ও সব মিলিয়ে পঞ্চম কিপার-ব্যাটার রাহুল। অবশ্য তাঁর মাইলফলকের পরই দলকে বিপদে ফেলেন রবীন্দ্র জাদেজা। ৩৬তম ওভারের চতুর্থ বলে তার বিপক্ষে কট বিহাইন্ডের ব্যর্থ রিভিউ নেয় অস্ট্রেলিয়া। পরের বলে কিপারের গ্লাভসে ক্যাচ দিয়েই ফেরেন জাদেজা। ২২ বলে ৯ রান করেছেন বাঁহাতি ব্যাটার। এরপর ফিরেন রাহুল। উইকেটে লম্বা সময় কাটালেও মন্থর ব্যাটিংয়ে ইনিংস বেশি বড় করতে পারলেন না তিনি। মিচেল স্টার্কের বলে কট বিহাইন্ড হয়ে তিনি ফিরলেন ১০৭ বলে ৬৬ রান করে। মাত্র ১ চার তাঁর ইনিংসে।
বড় শট খেলতে গিয়ে উইকেট ছুড়েন মোহাম্মদ শামি। মিচেল স্টার্কের বলে দূর থেকেই স্লগ করার চেষ্টায় কট বিহাইন্ড হলেন তিনি। ১ চারে ১০ বলে ৬ রান করেছেন শামি। এরপর ফিরেন জাসপ্রিত বুমরাহও। তাঁকে ফিরিয়ে চলতি আসরে নিজের ২৩তম উইকেট নিলেন অ্যাডাম জাম্পা। একইসঙ্গে ছুঁলেন শ্রীলঙ্কান কিংবদন্তি মুত্তিয়া মুরালিধরনকে। এত দিন বিশ্বকাপের এক আসরে স্পিনারদের মধ্যে সর্বোচ্চ উইকেটের রেকর্ড ছিল মুরালিধরনের। ২০০৭ বিশ্বকাপে ১০ ইনিংসে ২৩ উইকেট নেন তিনি। ১৬ বছর পর তার পাশে বসলেন জাম্পা।
শেষদিকে দলের হাল ধরতে পারলেন সুর্যকুমার। জশ হেজেলউডের স্লোয়ার বাউন্সারে পুল খেলার চেষ্টায় আগেই ব্যাট চালান তিনি। বল তার গ্লাভসে লেগে উঠে যায় আকাশে। উইকেটের পেছনে সহজ ক্যাচ ক্যাচ নেন জশ ইংলিস। ১ চারে ২৮ বলে ১৮ রান করে ফিরেছেন সুর্যকুমার। অস্ট্রেলিয়ার হয়ে ৩ উইকেট নেন স্টার্ক। ২টি করে উইকেট নেন প্যাট কামিন্স ও হেজেলউড।
এসএনপিস্পোর্টসটোয়েন্টিফোরডটকম/নিপ্র/ডেস্ক/১১০
Discussion about this post