স্পোর্টস ডেস্ক:: ভারতীয় অধিনায়ক রোহিত শর্মা বিশ্ব ক্রিকেটে অনন্য এক কীর্তি গড়লেন। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে দারুণ এক জয়ে আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ফাইনাল নিশ্চিত করেছে ভারত। সেই সাথে অধিনায়ক হিসেবে রোহিত শর্মাও ‘রেকর্ড’ গড়েছেন। বিশ্ব ক্রিকেটের একমাত্র অধিনায়ক তিনি, যিনি আইসিসির সবগুলো বৈশ্বিক আসরে দলকে নেতৃত্ব দিয়েছেন।
রোহিত শর্মার আগে কোনো অধিনায়ক এমন অর্জনে নাম লেখাতে পারেননি। বিশ্ব ক্রিকেটের নিয়ন্ত্রক সংস্থার বৈশ্বিক সবগুলো টুর্নামেন্টেই অধিনায়কত্বের স্বাদ পাচ্ছেন তিনি। ভারত এর আগে রোহিত শর্মার নেতৃত্বে ২০২৩ বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ, ২০২৩ ওয়ানডে বিশ্বকাপ, ২০২৪ টি-২০ বিশ্বকাপের ফাইনাল খেলেছে। এবার খেলছে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ফাইনাল।
চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির প্রথম সেমিফাইনালে ভারতের বিপক্ষে চ্যালেঞ্জিং পূঁজি গড়েছিলো অস্ট্রেলিয়া। অধিনায়ক স্টিভেন স্মিথ ও অ্যালেক্স কেয়ারির হাফ সেঞ্চুরিতে অস্ট্রেলিয়া অলআউট হয় ২৬৪ রানে। বিরাট কোহলির দুর্দান্ত এক হাফ সেঞ্চুরিতে ভারত এই রান টপকে যায় ছয় উইকেট হারিয়ে ১১ বল হাতে রেখে।
২৬৫ রানের টার্গেটে ব্যাট করতে নামা ভারত শুরুতেই হারায় ওপেনার গিলকে। দলীয় ৩০ রানে, ইনিংসের পঞ্চম ওভারের শেষ বলে ১১ বলে ৮ রান করে প্যাভেলিয়নে ফেরেন তিনি। তার বিদায়ের পর অধিনায়ক রোহিত শর্মাও দ্রুত ফেরেন প্যাভেলিয়নে। দু’বার জীবন পেয়েও ইনিংস বড় করতে পারেননি। দলীয় ৪৩ রানে অষ্টম ওভারের পঞ্চম বলে সাজঘরে ফেরেন এই ওপেনার। তিন চার ও এক ছক্কায় ২৯ বলে করেন ২৮ রান।
দ্রুত দুই উইকেট হারানো ভারতের হয়ে এরপরই প্রতিরোধ গড়েন বিরাট কোহলি ও শ্রেয়ার্স আয়ার। দু’জনে মিলে তৃতীয় উইকেট জুটিতে তুলে নেন ৯১রান। ২৭তম ওভারের দ্বিতীয় বলে দলীয় ১৩৪ রানে শ্রেয়ার্স আয়ারের বিদায়ে তৃতীয় উইকেট হারায় ভারত। তিন চারে ৬২ বলে ৪৫ রান করেন আয়ার। চতুর্থ ও পঞ্চম উইকেটে বিরাট কোহলি আরো দু’টি জুটি গড়ে ভারতকে ম্যাচে রাখেন। চতুর্থ উইকেটে অক্ষর প্যাটেলকে নিয়ে ৪৪ রানের জুটি গড়েন। দলীয় ১৭৮ রানে, ইনিংসের ৩৫তম ওভারের শেষ বলে প্যাটেলের বিদায়ে ভাঙে সেই জুটি। একটি করে চার ও ছক্কায় ৩০ বলে ২৭ রান করেন তিনি।
এক প্রান্ত আগলে রাখা কোহলি পঞ্চম উইকেটে লুকেশ রাহুলকে নিয়ে যোগ করেন আরো ৪৭ রান। দলের রান দুইশো পার করে পঞ্চম উইকেটে সাজঘরে ফেরেন ভারতের এই তারকা। ৪৩তম ওভারের চতুর্থ বলে দলীয় ২২৫ রানে কোহলি ফিরেন প্যাভেলিয়নে। তার আগে খেলেন ম্যাচ জয়ী ৮৪ রানের দারুণ এক ইনিংস। ৯৮ বলে পাঁচ বাউন্ডারিতে ধৈর্য্যশীল ইনিংসটি সাজান তিনি। লুকেশ রাহুলের অপরাজিত ৪২ আর হার্দিক পান্ডিয়ার ২৮ রানে ভারত ছয় উইকেট হারিয়ে ৪৮.১ ওভারেই জিতে যায় ম্যাচ।
অস্ট্রেলিয়ার হয়ে নাথান এলিস ও অ্যাডাম জাম্পা দুটি করে উইকেট লাভ করেন।
এর আগে দুবাইয়ে টস জিতে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নেন অজি অধিনায়ক স্মিথ। তবে অধিনায়কের প্রত্যাশা মতো শুরু করতে পারেনিন ওপেনার কুপার কোনিলি। দলীয় ৪ রানে ইনিংসের তৃতীয় ওভারের শেষ বলে রানের খাতা খুলার আগেই সাজঘরে ফিরেন তিনি। অবশ্য শুরুর এই ধাক্কা সামলে নেয় অজিরা। অধিনায়ক স্মিথ ওপেনার ট্রাভিস হেডকে নিয়ে দ্বিতীয় উইকেটে ৫০ রানের জুটি গড়েন। ইনিংসের নবম ওভারের দ্বিতীয় বলে দলীয় ৫৪ রানে হেডের বিদায়ে ভাঙে সেই জুটি। পাঁচ চার ও দুই ছক্কায় ৩৩ বলে ৩৯ রান করেন এই ওপেনার।
তৃতীয় উইকেটে মার্কাস লাবুশনেকে নিয়ে স্মিথ আরো একটি হাফ সেঞ্চুরির জুটি গড়েন। তাদের ৫৬ রানের জুটি ভাঙে লাবুশেনের বিদায়ে। ইনিংসের ২৩তম ওভারের তৃতীয় বলে দলীয় ১১০ রানে ব্যক্তিগত ২৯ রানে লাবুশেনে ফিরেন প্যাভেলিয়নে। এক প্রান্ত আগলে রেখে স্মিথ দারুণ ব্যাট করতে থাকেন। চতুর্থ উইকেটে জস ইংলিশকে নিয়ে ৩৪ রানের জুটি গড়েন। ১২ বলে ১১ রানে জস ইংলিশ ফিরে গেলে সেই জুটি ভাঙে।
স্মিথ এবার অ্যালেক্স কেয়ারিকে নিয়ে আরো একটি হাফ সেঞ্চুরির জুটি গড়েন। যে জুটির কল্যাণে অজিরা পায় চ্যালেঞ্জিং পূঁজি। পঞ্চম উইকেটে ৫৪ রানের জুটি গড়ে এবার ফিরে যান অজি অধিনায়ক স্মিথ। দলীয় ১৯৮ রানে, ইনিংসের ৩৭তম ওভারের চতুর্থ বলে বিদায়ের আগে অজি অধিনায়ক ৯৬ বলে ৭৩ রানের দারুণ এক জুটি গড়েন। দায়িত্বশীল ইনিংসটি সাজান চার চার ও এক ছক্কায়।
স্মিথের বিদায়ের পর ঝড় তুলেন কেয়ারি। আট চার ও এক ছক্কায় ৫৭ বলে ৬১ রানে দারুণ ঝলমলে এক ইনিংস খেলে রানআউটে কাটা পড়েন তিনি। ৪৮তম ওভারের প্রথম বলে দলীয় ২৪৯ রানে তার বিদায়ে অষ্টম উইকেট হারায় অজিরা। শেষ পর্যন্ত ইনিংসের তিন বল বাকী থাকতে ২৬৪ রানে গুটিয়ে যায় দলটি।
ভারতের হয়ে মোহাম্মদ শামি তিনটি, বরুণ চক্রবর্তী ও রবীন্দ্র জাদেজা দু’টি করে উইকেট লাভ করেন।
এসএনপিস্পোর্টসটোয়েন্টিফোরডটকম/নিপ্র/ডেস্ক/০০