নিজস্ব প্রতিবেদকঃ শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজ জয় দিয়ে শুরু করল বাংলাদেশ। বুধবার তিন ম্যাচ সিরিজের প্রথম ওয়ানডেতে টাইগাররা দাপুটে জয় তুলে নিয়েছে। চট্টগ্রামে আগে ব্যাট করে ২৫৫ রানে অলআউট হয় লঙ্কানরা। জবাব দিতে নেমে শুরুতে ৩ উইকেট হারালেও নাজমুল হোসেন শান্ত ও মুশফিকুর রহিমের রেকর্ডময় জুটিতে ৬ উইকেট হাতে রেখে ম্যাচ জিতে নেয় স্বাগতিকরা। এ জয়ে তিন ম্যাচের সিরিজে ১-০তে এগিয়ে গেল বাংলাদেশ।
লক্ষ্য তাড়া করেত নেমে অবশ্য শুরুটা ভালো হয়নি বাংলাদেশের। ইনিংসের প্রথম বলেই সাজঘরে ফেরেন ওপেনার লিটন দাস। দিলশান মাদুশঙ্কার করা গুড লেংথ ও ব্যাক অব লেংথের মাঝামাঝি করা ডেলিভারি স্টাম্পে টেনে এনে বোল্ড হন এই ওপেনার। লিটনের মতো হতাশ করলেন ওপেনার সৌম্য সরকারও। ইনিংসের তৃতীয় ওভারের চতুর্থ বলটি খাটো লেংথে করেছিলেন মাদুশঙ্কা। অফ স্টাম্পের বেশ খানিকটা বাইরের বল জায়গায় দাঁড়িয়ে অন সাইডে পুল করতে চেয়েছিলেন সৌম্য। মিস টাইমিংয়ে ৩০ গজের বৃত্তের ভেতরে স্কয়ার লেগে ধরা পড়েন। ৯ বলে ৩ রান করে আউট হন সৌম্য।
টাইগারদের দুই ওপেনার দ্রুত ফেরার পর দলকে শক্ত ভিত গড়ে দেওয়ার দায়িত্ব ছিল তাওহিদ হৃদয়ের ওপর। বিপদে দলের হাল ধরতে পারেননি এই মিডল অর্ডার ব্যাটার। উল্টো দ্রুত সাজঘরে ফিরে দলের বিপদ আরো বাড়িয়েছেন তিনি। ইনিংসের ষষ্ঠ ওভারে আক্রমণে ছিলেন প্রমোদ মাদুশান। এই পেসারের করা গুড লেংথের ডেলিভারিতে ডিফেন্স করতে গিয়ে লাইন মিস করেছেন হৃদয়। বোল্ড হওয়ার আগে ৮ বলে ৩ রান এসেছে তার ব্যাট থেকে। দলীয় ২৩ রানের মধ্যে টপ অর্ডারের তিন ব্যাটারকে হারিয়ে ব্যাটিং বিপর্যয়ে পড়েছিল বাংলাদেশ। এমন পরিস্থিতিতে দলের হাল ধরেন নাজমুল হোসেন শান্ত ও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। দুজনেই দেখে-শুনে খেলে বড় জুটির দিকে এগোচ্ছিলেন। তবে ৩৭ রানে থেমেছেন মাহমুদউল্লাহ। ১৬তম ওভারের তৃতীয় বলে লাহিরু কুমারাকে পুল করতে গিয়ে মাদুশঙ্কার হাতে ধরা পড়েন এই মিডল অর্ডার ব্যাটার।
মাহমুদউল্লাহ থিতু হয়ে ফিরলে মুশফিকুর রহিমের সঙ্গে ১৬৫ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটি গড়েন শান্ত। ব্যাট হাতে দলকে সামনে থেকে নেতৃত্ব দেওয়ার পথে সেঞ্চুরির দেখা পেয়েছেন বাংলাদেশ অধিনায়ক। ৫২ বলে ফিফটি করেছিলেন। পরের ৫০ রান করেছেন ৫৬ বলে। সবমিলিয়ে ১০৮ বলে তিন অঙ্ক স্পর্শ করেছেন শান্ত। শেষ পর্যন্ত ১২২ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলেছেন শান্ত। যা ওয়ানডেতে তার ক্যারিয়ারসেরা। আর মুশফিক অপরাজিত ৭৩ রান করে দলকে জিতিয়ে মাঠ ছেড়েছেন। ১২৯ রানের ইনিংসে ১৩ চারের সঙ্গে দুটি ছয় মারেন বাংলাদেশ অধিনায়ক। মুশফিক অপরাজিত থাকেন ৮৪ বলে ৭৩ রান করেন ৮ চারে। দুজনের ম্যাচ জেতানো অবিচ্ছিন্ন জুটিতে আসে ১৭৫ বলে ১৬৫ রান। পঞ্চম উইকেট যা দেশের মাঠে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রান। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষেও পঞ্চম উইকেটে বাংলাদেশের সেরা জুটি এটি।
এর আগে ব্যাট করতে নেমে দারুণ সূচনা পায় শ্রীলঙ্কা। দুই ওপেনার পাতুম নিশাঙ্কা ও আভিস্কা ফার্নান্ডো মাত্র ১০ ওভারেই ৭১ রান তুলে ফেলেন। দশম ওভারের পঞ্চম বলে প্রথম আঘাত হানেন তানজিম সাকিব।৩৩ বলে ৩৩ রান করা আভিস্কাকে সাজঘরে পাঠান তিনি। দ্বিতীয় আঘাতটাও হানেন তানজিম সাকিবই। দ্বাদশ ওভারে বল করতে এসে প্রথম বলেই শিকার করেন ভয়ঙ্কর নিশাঙ্কাকে। তানজিমের শট বলে পুল করেছিলেন নিশাঙ্কা। তবে শট খেলে ফেলেন বেশ আগেই। ব্যাটের একদম নিচের কানায় লেগে ক্যাচ চলে যায় সৌম্যর কাছে। ২৮ বলে ৫ চার ও ১ ছয়ে ৩৬ রান করেন তিনি। ত্রাস হয়ে ওঠা সাকিব নিজের করা পরের ওভারে ফেরান সাদিরা সামারাবিক্রমাকেও।
এরপর আসালাঙ্কা ও কুশল মেন্ডিস সতর্ক ব্যাটিংয়ে ধীরলয়ে আগাচ্ছিলেন। দুজনের জুটিতে ৪৪ রান আসে। আসালঙ্কাকে ফিরিয়ে এই জুটি ভাঙেন মেহেদী হাসান মিরাজ। ৩৭ বলে ১৮ রান করেন আসালঙ্কা। টি-টোয়েন্টি সিরিজের পর ওয়ানডে সিরিজেও রানের মধ্যে আছেন কুশল মেন্ডিস। ৩৩তম ওভারে ৬৭ বলে অর্ধশতক পূর্ণ করেন লঙ্কান অধিনায়ক। তাকে ফেরান তাসকিন। ৭৫ বলে ৫ চার ও ১ ছয়ে ৫৯ রান করে বিদায় নেন কুশল মেন্ডিস। অর্ধশতকের দেখা পেয়েছেন জানিথ লিয়ানাগেওত। ৬৯ বলে ৩ চার ২ ছয়ে ৬৭ রান করে শরিফুলের বলে আউট হন তিনি। শেষ দুই ব্যাটার হিসেবে প্রমোদ মাদুশান ও দিলশান মাদুশাঙ্কার উইকেটও নেন শরিফুল।তানজিম সাকিব ৮.৪ ওভারে ৪৪ রানে ৩ উইকেট শিকার করেন। ১০ ওভারে ৬০ রান ও ৯.৫ ওভারে ৫১ রান দিয়ে ৩টি করে উইকেট শিকার করেন তাসকিন ও শরিফুলও। বাকি উইকেটটি মেহেদী মিরাজের দখলে যায়।
এসএনপিস্পোর্টসটোয়েন্টিফোরডটকম/নিপ্র/১১০
Discussion about this post