স্পোর্টস ডেস্কঃ এশিয়া কাপের সুপার ফোরে জায়গা করে নিল শ্রীলঙ্কা। আফগানিস্তান পারে নি ৩৭.১ ওভারে ২৯১ রান করে রান রেটে লঙ্কানদের চেয়ে এগিয়ে যেতে। মোহাম্মদ নবির বিধ্বংসী ইনিংসে কঠিন সমীকরণের সামনে দাঁড়িয়েও সুপার ফোরের বন্দরে পৌঁছে গিয়েছিল আফগানরা। কিন্তু শেষদিকে গিয়ে খেই হারিয়ে ফেলে রশিদ-মুজিবরা। আফগানদের মাত্র ২ রানে হারিয়ে সুপার ফোর নিশ্চিত করেছে এশিয়া কাপের সহ-আয়োজকরা।
লাহোরে মঙ্গলবার আগে ব্যাটিং করতে নেমে ৫০ ওভার শেষে করেছে ৮ উইকেটে ২৯১ রান করেছিল শ্রীলঙ্কা। আফগানিস্তানকে সুপার ফোরে যেতে হলে ৩৭.১ ওভারের মধ্যেই নিজেদের জয় নিশ্চিত করতে হতো। সেটা পারেনি তারা। শেষ পর্যন্ত ৩৭.৪ ওভারে সবকটি উইকেট হারিয়ে ২৮৯ রান তুলেছে। তাতে ২ রানের জয়ে আসরে টিকে রইল শ্রীলঙ্কা। শেষ দিকে রশিদ খান ঝড়ো ইনিংস খেলেও দলকে জেতাতে পারেন নি। অপরাজিত ২৭ রান করেন তিনি।
কঠিন সমীকরণ মাথায় নিয়ে ব্যাট হাতে শুরুটা ভালো হয়নি আফগানিস্তানের। ২৭ রানের মধ্যে দুই ওপেনারকে হারায় তারা। রহমানউল্লাহ গুরবাজ ৪ ও ইব্রাহিম জাদরান ৭ রানে পেসার কাসুন রাজিথার শিকার হন। তিন নম্বরে নেমে ৪টি চারে ১৬ বলে ২২ রান করেন গুলবাদিন নাইব। এরপর জুটি গড়েন অধিনায়ক হাশমাতউল্লাহ ও রহমত শাহ। দুজনে ৬৩ বলে ৭১ রান তুলেন। ৪০ বলে ৪৫ রান করা রহমতকে ফেরান রাজিথা।
উইকেটে এসেই বিধ্বংসী রুপ দেখান মোহাম্মদ নবি। ঝড়ো ব্যাটিংয়ে মাত্র ২৪ বলে ওয়ানডেতে ১৬তম হাফ-সেঞ্চুরি তুলে নেন তিনি। ব্যক্তিগত ৬৫ রানে ফেরেন এই আফগান অলরাউন্ডার। তাতে ম্যাচে ফেরে লঙ্কানরা। আউট হওয়ার আগে ৩২ বল খেলে ৬টি চার ও ৫টি ছক্কা মারেন নবি। ১৩ বলে ২২ রানের ইনিংস খেলেন করিম জানাত। এরপর দ্রুত ফিরেন জানাত-হাশমাতউল্লাহ। দুই আফগান ব্যাটারকেই ফেরান স্পিনার ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গার বদলি হিসেবে চলতি টুর্নামেন্টে সুযোগ পাওয়া দুনিথ ওয়েলালাগে। ৬৬ বলে ৫৯ রান করেন হাশমাতউল্লাহ।
এরপর ১৫ বলে ২৩ রান করা নাজিবউল্লাহ জাদরানকে থামান রাজিথা। দলের স্বীকৃত শেষ ব্যাটারকে হারিয়ে দায়িত্ব নিজের কাঁধে তোলে নেন রশিদ খান। ওয়েলালাগের করা ৩৭তম ওভারে ৩টি চারে ১২ রান নেন তিনি। এমন অবস্থায় ম্যাচ জিতে সুপার ফোর নিশ্চিত করতে শেষ বলে (৩৭.১ ওভার) ৩ রান দরকার পড়ে আফগানদের। কিন্তু সেই বলে মুজিবকে শিকার করে শ্রীলঙ্কার সুপার ফোর নিশ্চিত করেন স্পিনার ধনাঞ্জয়া। তবে এরপরও সুযোগ ছিল রশিদদের। তবে সমীকরণ বুঝতে পারেন নি দলের কেউই!
৩৭ ওভার ১ বলে আফগানিস্তান করে ৯ উইকেটে ২৮৯ রান। কিন্তু পরবর্তী তিন বলের মধ্যে ছক্কা হাকিয়ে ২৯৫ রান করলেও সুযোগ ছিল তাদের। এমনকি ম্যাচ টাই হওয়ার পর, মানে ২৯১ রান করার পর ছক্কা মারলে সুযোগটি ছিল ৩৮.১ ওভার পর্যন্ত। সেক্ষেত্রে নেট রানরেট দুদলের হতো সমান, টসের নিষ্পত্তি জয়-পরাজয়। কিন্তু সমীকরণটা জানতো না আফগানরা! তাই নিজে বড় শট খেলা বা সিঙ্গেল নিয়ে রশিদকে স্ট্রাইকে দেওয়ার কোনো চেষ্টাই করলেন না শেষ ব্যাটার ফজলহক ফারুকি। উল্টো আউট হয়েছেন। রোমাঞ্চকর জয়ে সুপার ফোরে নাম লেখায় শ্রীলঙ্কা।
এর আগে শ্রীলঙ্কার ইনিংসের শুরু থেকেই আগ্রাসী ব্যাটিং করেন পাথুম নিশাঙ্কা ও দিমুথ করুনারত্নে। আফগানিস্তানের তিন বোলার মুজিব উর রহমান, ফজল হক ফারুকি ও গুলবাদিন নাইব কাউকেই ছাড় দেননি তারা। পাওয়ারপ্লের ১০ ওভারের মধ্যে স্কোরবোর্ডে ৬২ রান তোলেন দুজন। এরপরই ঘটে ছন্দপতন। করুনারত্নে একাদশ ওভারের দ্বিতীয় বলে ৩৫ বলে ৬ বাউন্ডারিতে ৩২ রান করে প্যাভিলিয়নে ফেরেন। দ্রুত ফিরে যান আরেক ওপেনার নিশাঙ্কাও। তার আগে ৪০ বলে ৬ বাউন্ডারিতে ৪১ রান করেন তিনি। ইনিংস বড় করতে পারেননি সাদিরা সামারাভিক্রমাও।
চতুর্থ উইকেট জুটিতে মেন্ডিস-আসালাঙ্কা জুটি দলকে এনে দেন ১০২ রান। দলীয় ১৮৮ রানে ৩৬ রানের ইনিংস খেলে রশিদের শিকার হন আসালাঙ্কা। ৪৩ বলে ২ চার ও ১ ছক্কায় সাজানো ছিল তার ইনিংসটি। এরপর আবার ছন্দপতন হয় লঙ্কানদের। ১৯ বলে ১৪ রান করে মুজিব উর রহমানের শিকার হন ধনাঞ্জয়া ডি সিলভা। ৮৪ বলে ৬ চার ও ৩ ছক্কায় ৯২ রান করে রান আউটের শিকার হন মেন্ডিস। ২২৬ রানের মধ্যে প্রথম ৬ ব্যাটারকে হারিয়ে কিছুটা চাপে পড়ে শ্রীলঙ্কা।
শেষ ১০.৩ ওভারে মহিশ থিকশানা ও দুনিথ ভেল্লালাগে মিলে দলকে আরও ৬৫ রান এনে দিয়ে আফগানদের সামনে বিশাল চ্যালেঞ্জ দাঁড় করান। ৩৯ বলে ৩ চার ও ১ ছক্কায় ৩৩ রানে অপরাজিত ছিলেন ওয়েলালাগে। ২৪ বলে ২ চার ও ১ ছক্কায় ২৮ রান করে শেষ বলে আউট হন থিকশানা। ১০ ওভারে ৬০ রান খরচায় আফগানদের পক্ষে সর্বোচ্চ ৪ উইকেট তুলে নেন গুলবাদিন নাইব। ৬৩ রান খরচায় ২ উইকেট নিয়েছেন রশিদ।
এসএনপিস্পোর্টসটোয়েন্টিফোরডটকম/নিপ্র/ডেস্ক/১১০
Discussion about this post