স্পোর্টস ডেস্ক:: ক্রিকেট বোর্ডের সভাপতির পদ হারিয়েছেন ফারুক আহমদ। এই মূহুর্তে বিসিবির কোনো সভাপতি নেই। জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ (এনএসসি) বৃহস্পতিবার রাতে ফারুক আহমদের মনোনয়ন বাতিলের প্রজ্ঞাপন জারি করেছে। এই প্রজ্ঞাপন জারির পরপরই বিসিবির সব পদ হারিয়েছেন সাবেক অধিনায়ক ফারুক আহমদ।
এনএসসি জানিয়েছে, ক্রিকেট বোর্ডের ৮জন পরিচালক সভাপতির দায়িত্বে থাকা ফারুক আহমদের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব দিয়েছেন। এর প্রেক্ষিতে গঠনতন্ত্র মোতাবেক তার পরিচালক মনোনয়ন বাতিল করা হয়েছে। ফারুক ক্রীড়া পরিষদের কোটায় বোর্ড পরিচালক হয়েছিলেন এবং পরবর্তীতে বোর্ড পরিচালকদের ভোটে সভাপতি নির্বাচিত হয়েছিলেন।
নতুন সভাপতি কে হবেন সেটা পুরোপুরি নিশ্চিত নয়। তবে সাবেক অধিনায়ক আমিনুল ইসলাম বুলবুলের নতুন সভাপতি হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। ফারুক আহমদ পদত্যাগ না করতে না চাইলেও তিনি আর থাকছেন না। অন্য বোর্ড পরিচালকরা অনাস্থা প্রস্তাব এনেছেন ফারুক আহমদের বিরুদ্ধে। যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা বরাবরে বোর্ডের ৮ পরিচালক অনাস্থা প্রস্তাব দিয়েছেন।
ফারুক আহমদসহ বোর্ডের পরিচালক সংখ্যা এই মূহুর্তে ১০ জন। সভাপতি ফারুককে বাদ দিলে এই সংখ্যা দাঁড়ায় ৯ জনে। বোর্ডের ৮ জন পরিচালক অনাস্থা প্রস্তাবে স্বাক্ষর করেছেন। তারা হলেন নাজমুল আবেদীন ফাহিম, সাইফুল আলম চৌধূরী স্বপন, ফাহিম সিনহা, ইফতেখার রহমান মিঠু, মাহবুবু উল আলম, কাজী ইনাম আহমদ, মনজুর আলম ও সালাউদ্দিন চৌধুরী। অনাস্থা প্রস্তাবে স্বাক্ষর করেননি আকরাম খান।
বোর্ডের অন্য পরিচালকেরা অনাস্থা প্রস্তাব আনায় বিসিবি সভাপতি ফারুক আহমদকে সরিয়ে দিতে সরকারের আর কোনো সমস্যা নেই। তাতে আইসিসির নিয়মেরও ব্যতয় হবে না। সরকার সেই পথেই হাঁটলো।
অনাস্থা প্রস্তাবে বোর্ড চালকেরা ফারুক আহমদের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ তুলেছেন। তাদের দাবি, ফারুক আহমদ বোর্ডের অন্য পরিচালকদের গুরুত্ব না দিয়ে নিজের খেয়াল খুশি মতো বোর্ড পরিচালনা করছেন। ফ্যাসিস্ট আওয়ামীলীগ আমলের কর্মকর্তা-কর্মচারিদের সুযোগ সুবিধা দিচ্ছেন।
এর আগে সরকার থেকে পদত্যাগের চাপ দেওয়া হয় বিসিবি সভাপতি ফারুক আহমদকে। যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা সাবেক অধিনায়ক ফারুককে ডেকে নিয়ে জানিয়েছেন তাদের মনোভাব। তবে ফারুক জানিয়েছেন তিনি পদত্যাগ করবেন না।
দেশের ক্রিকেটে আলোচিত ইস্যু ক্রিকেট বোর্ডের সভাপতি ফারুক আহমদের পদত্যাগ। বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই ফারুক আহমদের পদত্যাগের গুঞ্জন উঠে। নতুন সভাপতি হিসেবে সাবেক অধিনায়ক আমিনুল ইসলাম বুলবুলের নামও আসে আলোচনায়।
গণমাধ্যমকে আমিনুল ইসলাম নিজেও জানান, সরকার থেকে তার সাথে যোগাযোগ করা হয়েছে। তিনি দেশের ক্রিকেটের প্রয়োজনে কাজ করতে প্রস্তুুত আছেন। এরই মধ্যে দেশের শীর্ষ একটি দৈনিককে ফারুক আহমদ জানালেন, তিনি নিজ থেকে পদত্যাগ করবেন না। কারণ তিনি নিজে যেচে গিয়ে বোর্ড সভাপতি হননি। সরকারই আগ্রহ দেখিয়ে তাকে বিসিবি সভাপতি বানিয়েছে।
আওয়ামীলীগের সরকার পতনের পর ফারুক আহমদ বোর্ড সভাপতি হন। তার আগে তিনি জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের কোটায় বোর্ড পরিচালক হন। এরপর পরিচালকদের বোর্ডে নয় মাস আগে সভাপতির দায়িত্ব নেন। তিনি পদত্যাগ না করায় তাকে সরানোর খুব একটা সুযেগা নেই সরকারের।
কেননা এনএসসি যদি তার কাউন্সিলরশিপ বাতিল করে তবে সেটি হবে ক্রিকেট বোর্ডে সরকারি হস্তক্ষেপ। ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেট কাউন্সিল ক্রিকেট বোর্ডে সরকারি হস্তক্ষেপ মেনে নেয় না কখনো। সরকারি হস্তক্ষেপের ঘটনা ঘটলে সংশ্লিষ্ট দেশকে নিষিদ্ধ করে আইসিসি। শ্রীলঙ্কা ও জিম্বাবুয়ে এর আগে নিষিদ্ধ হয়েছিলো তাদের বোর্ডে সরকারি হস্তক্ষেপের কারণে।
ফলে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ বা সরকার যদি জোর করে ফারুক আহমদকে সরিয়ে দেয় তবে আইসিসির শাস্তির আওতায় পড়বে বিসিবি। তবে ফারুক আহমদ নিজ থেকে পদত্যাগ করলে সরকার সভাপতি পদে পরিবর্তন আনতে পারবে।
ফারুক আহমদ আজ বৃহস্পতিবার একটি গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি পদত্যাগ করব না। আমাকে বলা হয়েছে, সরকার নাকি আমাকে আর বিসিবি সভাপতি হিসেবে রাখতে চাইছে না। কিন্তু কেন রাখতে চাইছে না, সেটার কোনো কারণ তারা আমাকে বলেনি। বিনা কারণে তো আমি পদত্যাগ করতে পারি না।’
আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর বিসিবির সাবেক পরিচালক জালাল ইউনুস ও আহমেদ সাজ্জাদুল আলমের জায়গায় জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ (এনএসসি) ফারুক আহমেদ ও নাজমূল আবেদীনকে এনএসসি কোটায় বিসিবি পরিচালক হিসেবে মনোনয়ন দেয়। তবে দায়ীত্ব নেওয়ার কয়েক মাসের মাথায় বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের সভাপতি ফারুক আহমদকে বোর্ড ছাড়তে হচ্ছে। বিসিবি সভাপতিকে পদত্যাগ করতে বলেছেন যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া।
ফারুক আহমদ যদি পদত্যাগ না করেন তবে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ তাকে সরানোর পথে এগুবে। দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই আলোচনায় ছিলেন ফারুক আহমদ। বিসিবির টাকা ট্রান্সফার থেকে শুরু করে নানা কাণ্ডে আলোচিত হন। বিব্রতকর পরিস্থিতিতে তার পদত্যাগের গুঞ্জন উঠেছে বেশ।
অন্যদিকে বাংলাদেশের প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরিয়ান আমিনুল ইসলাম বুলবুলকে নতুন সভাপতি করার গুঞ্জন উঠেছে। সাবেক এই ক্রিকেটার জানিয়েছেন, সরকারের পক্ষ থেকে তার সাথে যোগাযোগ করা হয়েছে। তিনি ক্রিকেট বোর্ডের যে কোনো দায়িত্ব নিতে রাজি আছেন।
বর্তমানে আইসিসিতে কাজ করা বুলবুল এ নিয়ে বিশ্ব ক্রিকেটের নিয়ন্ত্রক সংস্থার সাথেও কথা বলেছেন। আইসিসিও তাকে সবুজ সঙ্কেত দিয়েছে। জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ বুলবুলকে আহ্বায়ক করে তিন মাসের জন্য এডহক কমিটি গঠন করতে পারে। যে কমিটির অধীনে অনুষ্টিত হবে বোর্ডের নির্বাচন।
এসএনপিস্পোর্টসটোয়েন্টিফোরডটকম/নিপ্র/ডেস্ক/০০