স্পোর্টস ডেস্ক:: দেশের ক্রিকেটে এখন আলোচিত ইস্যু ফারুক আহমদকে বিসিবি থেকে সরিয়ে দেওয়া। যে সরকার তাকে বোর্ড পরিচালক করে বিসিবি সভাপতি বানিয়ে ছিলো, সেই সরকারই নয় মাসের মাথায় ফারুক আহমদকে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দিয়েছে।
আওয়ামীলীগ সরকার পতনের পর অন্তবর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নেয়। এরপর সাবেক অধিনায়ক ফারুক আহমদকে সভাপতির দায়িত্ব দেওয়া হয়। জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ বিসিবিতে তাদের মনোনীত প্রতিনিধি হিসেবে পরিচালক করে ফারুককে। এরপর পরিচালকদের ভোটে তিনি সভাপতি নির্বাচিত হন। কিন্তুু বৃহস্পতিবার এনএসসি ফারুকের মনোনয়ন বাতিল করে। নতুন করে মনোনয়ন দেয় সাবেক অধিনায়ক আমিনুল ইসলাম বুলবুলকে।
এনএসসির প্রতিনিধি হয়ে পরিচালক হন বুলবুল। এরপর বোর্ড পরিচালকদের ভোটে তিনি সভাপতি নির্বাচিত হন। শনিবার এনিয়ে গণমাধ্যমের সাথে কথা বলেছেন যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়অ। ফারুককে কি কারণে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘এটা আসলে শাস্তি বা অন্য কিছু নয়। নতুন নেতৃত্ব আসার পর আমাদের যে প্রত্যাশা ছিল ৯ মাসে সেটা আমরা দেখিনি।’
পারফরম্যান্স বিবেচনায় বোর্ডে পরিবর্তন আনা হয়েছে জানিয়ে আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া বলেন, ‘এই সরকার আসার পর পাকিস্তানের বিপক্ষে ঐতিহাসিক টেস্ট সিরিজ জিতে এসেছিল বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। এরপর থেকে আমরা ক্রমঅবনতি দেখতে পাচ্ছি। খুবই দুঃখজনকভাবে আমাদের যে নতুন নেতৃত্ব এসেছিল তারা পারফরম্যান্স দেখাতে পারেনি। আমি তো স্পোর্টসের মানুষ না। আমি ১০ জনের সাথে কথা বলে যাকে মনে করেছি, ভালো পরিচালনা করতে পারবে তাকেই বাকি পরিচালকরা সভাপতি মনোনীত করেছিলেন; কিন্তু সেই নেতৃত্ব ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। আমাদের তো বিচার করতে হবে পারফরম্যান্স দিয়ে। সেই পারফরম্যান্স আশানুরূপ নয়।’
বিপিএলে বির্তকিত কর্মকাণ্ড নিয়ে যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা বলেন, ‘বিপিএল-এর যে সত্যানুন্ধান কমিটি ছিল তাদের প্রতিবেদনে আমরা দেখেছি, সেখানে অনেক অনিয়ম ও দায়িত্ব অবহেলার কারণে বিপিএলে যে ধরনের পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল, সেগুলোতে মোটামুটি ফারুক আহমেদের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেছে। আপনারা জানেন যে, বিসিবির ৯ পরিচালকের মধ্যে ৮ জন সভাপতির বিপক্ষে অনাস্থা প্রস্তাব এনএসসিতে পাঠিয়েছে। ক্রিকেটে যেমন ১১ জন মাঠে খেলে সে রকম টিম বিসিবিতে হয়নি আসলে। ফ্যাসিবাদের সহযোগী যারা ছিলেন বিসিবিতে তারা ৫ আগস্টের পর পালিয়ে গেছেন। বাকি যারা আছেন, তারা কেউই ওনার (ফারুক) সাথে কাজ করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করছিলেন না। তাই আমরা দেখছিলাম বাংলাদেশের ক্রিকেটের ক্রমাবনতি। বাংলাদেশ ক্রিকেটের যে পরিস্থিতি এবং বিপিএলের সত্যানুসন্ধান কমিটির প্রতিবেদন- সবমিলিয়ে আমাদের একটা সিদ্ধান্তে আসতে হয়েছে।’
কোনো দুর্নীতির জন্য ফারুক আহমদকে সরানো হয়নি জানিয়ে তিনি আরো বলেন ‘ফারুক ভাইয়ের সাথে আমি কথা বলেছি যে, এটা এমন না যে কোনো দুর্নীতির প্রমাণ পাওয়া গেছে। এই পরিবর্তন পুরোপুরি পারফরম্যান্সনির্ভর। দেখুন সিলেকশন বোর্ড যদি দেখে একজন খেলোয়াড় নিয়েমিত খারাপ করছে, তাকে তো আর দলে রাখবে না। আমাদের দিক থেকেও ব্যাপারটা সেরকমই ছিল। আমরা আবারও ক্রিকেট সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’
বিপিএলে বিব্রতকর পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিলো জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আসলে অনিয়ম বলতে, রিপোর্ট তো আপনারা সবাই দেখেছেন। তদন্ত কমিটি সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলেছে। দুর্বার রাজশাহী দলটি যাদের দেওয়া হয়েছে তাদের বিষয়ে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় থেকে আমরা শঙ্কার কথা জানিয়েছিলাম। তারপরও এক ধরনের ব্যক্তি সীদ্ধান্তে সেই টিমটা দেওয়া হয়েছিল। তারপর ওই দলের খেলোয়াড়দের বেতন দেওয়া নিয়ে সরকারকে পর্যন্ত সম্পৃক্ত হতে হয়েছে। একটা বিব্রতকর পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল, যেটা আমরা কেউই চাইনি। বিপিএলের ফাইনাল ম্যাচে সরকার প্রধানের থাকার কথা ছিল। এই পরিস্থিতি তৈরি হওয়ার কারণে তাকে আমরা আনতে পারিনি, যেটা আমাদের জন্য, বোর্ডের জন্য লজ্জাজনক।’
সঠিক পদ্ধতিতে পরিবর্তন করা হয়েছে জানিয়ে ক্রীড়া উপদেষ্টা বলেন, ‘আপনাকে দেখতে হবে পদ্ধতিটা কি? দুজনকে মনোনয়ন দেওয়ার এখতিয়ার জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের আছে। মনোনয়ন যেমন দিতে পারে, আবার বাতিলও করতে পারে। আমরা মনোনয়ন দিয়েছিলাম। সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় আমাদের মনে হয়েছে এখন রাখার প্রয়োজন নেই। আমরা কিন্তু সভাপতিকে অপসারণ করিনি। আমরা এনএসসি থেকে তার পরিচালক মনোনয়ন সরিয়ে নিয়েছি। আমরা আরেকজনকে পরিচালক মনোনয়ন দিয়েছি। বোর্ডে যারা আছেন, তারা নিয়ম অনুসারে আইসিসির গাইডলাইন ও বিসিবির গঠনতন্ত্র অনুসারে বোর্ড আরেকজনকে সভাপতি নির্বাচিত করেছে। প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই তার সভাপতি পদটি চলে গেছে।’
এসএনপিস্পোর্টসটোয়েন্টিফোরডটকম/নিপ্র/ডেস্ক/০০