নিজস্ব প্রতিবেদকঃ অবিশ্বাস্য, অকল্পনীয়, ব্যাখ্যাহীন ব্যাটিং দেখাল বাংলাদেশ। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে চরম ব্যর্থ টাইগাররা। চতুর্থ ইনিংসে ৫১১ রানের লক্ষ্যে খেলতে নেমে ১৩ ওভার ব্যাট করে ৫ উইকেট হারিয়ে বাংলাদেশের সংগ্রহ ৪৭ রান। এক প্রকার লড়াইহীন হারের অপেক্ষা এখন। জিততে হলে করতে হবে ৪৬৪ রান, হাতে আছে মাত্র ৫ উইকেট। তবে শেষ বিকেলের এমন হতশ্রী ব্যাটিং বলছে বাংলাদেশের ব্যাটারদের জন্য রান করার চেয়ে ফেরার তাড়াই বেশি।
শেষ বিকেলে মাত্র এক ঘন্টা ব্যাট করতে হতো বাংলাদেশ দলকে। তবে সেই এক ঘন্টায় রীতিমতো দুমড়ে-মুচড়ে পড়েছে টাইগাররা। ইনিংসের প্রথম ওভারেই বিশ্ব ফার্নান্দোর চতুর্থ ডেলিভারিতে এলবিডব্লিউ’র শিকার হয়ে ডাক মেরে ফিরেন মাহমুদুল হাসান জয়। কাসুন রাজিথার করা পরের ওভারের শেষ ডেলিভারিতে অফ স্টাম্পের অনেক বাইরের বল অপ্রয়োজনীয়ভাবে খেলতে গিয়ে স্লিপে ক্যাচ করুণারত্নের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফিরেন শান্ত (৬)।
এরপর অষ্টম ওভারের পঞ্চম বলে উইকেটে সেট হয়ে যাওয়া জাকির হাসানও ফিরে যান। লাহিরু কুমারার বলে পরাস্ত হয়ে উইকেটের পেছনে কুশল মেন্ডিসের হাতে ক্যাচ তুলে দিয়ে ১৯ রান করে বিদায় নেন এই ওপেনার। নবম ওভারে বিশ্ব ফার্নান্দো জোড়া শিকার তুলে নেন শাহাদাত হোসেন দিপু (০) ও লিটন দাসকে (০) ফিরিয়ে। মূহুর্তেই পাঁচ উইকেট হারিয়ে চরম বিপর্যয়ে পড়ে বাংলাদেশ। নখদন্তহীন ব্যাটিংয়ে পরাজয় তখন নিশ্চিত হয়ে যায়। পাঁচ উইকেটের তিন জনই ডাক মেরে ফিরেন। কেবল আনুষ্ঠানিকভাবে অলআউট হওয়ার অপেক্ষা এখন।
এর আগে দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ের পর ৪১৮ রানে অলআউট হয় শ্রীলঙ্কা। এক প্রকার অপ্রতিরোধ্য হয়ে ছুটে চলা দলটিকে অলআউট করতে সক্ষম হয় বাংলাদেশ। ৫ উইকেটে ১১৯ রান নিয়ে তৃতীয় দিনে খেলতে নেমেছিল শ্রীলঙ্কা। সকালের শুরুতে মিষ্টি রোদের দেখা মিললেও, খেলা শুরু হওয়ার সাথে সাথেই মেঘলা আকাশের দেখা মিলে। এরপর পুরো সেশনের সময়টাতেই বৃষ্টির শঙ্কা নিয়ে চলে খেলা। তৃতীয় দিনের সকালের শুরুটা অবশ্য ভালোভাবে করে বাংলাদেশ দল। আগের দিন নাইট ওয়াচম্যান হিসেবে নামা বিশ্ব ফার্নান্দোকে ৩৯তম ওভারে চতুর্থ স্লিপে থাকা মেহেদী হাসান মিরাজের ক্যাচে পরিণত করে ফেরান খালেদ আহমেদ। ২৪ বলে ৪ রান করে প্যাভিলিয়নের পথ ধরেন বিশ্ব। বিশ্ব’র বিদায়ে ষষ্ঠ উইকেটের পতন ঘটে শ্রীলঙ্কার।
১২৬ রানে ছয় উইকেট হারানোর পরই অনবদ্য জুটি গড়ে দলকে প্রেক্ষাপটে ফেরান ধনাঞ্জয়া ও কামিন্দু। দুজনে মিলে টাইগার বোলারদের কাছ থেকে ম্যাচ ছিনিয়ে নেন একেবারেই। সপ্তম উইকেটে ধনাঞ্জয়া ও কামিন্দুর ১৭৩ রানের অনবদ্য জুটি ভাঙেন মেহেদী হাসান মিরাজ। ৮৫তম ওভারের দ্বিতীয় বলে মিরাজের শিকার হন ধনাঞ্জয়া। শর্ট মিড উইকেটে জাকির হাসানের হাতে ক্যাচ তুলে দিয়ে ১০৮ রান করে ফিরেন তিনি। ১৭৯ বলের ইনিংসটি সাজানো ছিল ৯ বাউন্ডারি ও ২ ছক্কায়। ক্যারিয়ারের ১২তম টেস্ট সেঞ্চুরির দেখা পান। সেঞ্চুরির আগে ৯৪ রানে জীবন পেয়েছিলেন একবার, এরপর ১০১ রানে দ্বিতীয়বার জীবন পান।
চলতি ম্যাচে টানা দুই ইনিংসেই সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে ধনাঞ্জয়া নতুন রেকর্ড গড়েন। শ্রীলঙ্কার ইতিহাসে প্রথম অধিনায়ক হিসেবে টানা দুই ইনিংসে সেঞ্চুরি তুলে নেওয়ার রেকর্ড তার দখলে। সব মিলিয়ে বিশ্ব ক্রিকেটে ১৫তম অধিনায়ক হিসেবে এমন কীর্তি গড়েন। তবে তিলকারত্নে দিলশান ও কুমার সাঙ্গাকারার পর শ্রীলঙ্কার তৃতীয় ক্রিকেটার হিসেবে এমন কীর্তি গড়েছেন তিনি।
এই রেকর্ডের পরই প্রায় দেড়শ বছরের ক্রিকেট ইতিহাসে বিরল রেকর্ড গড়ে শ্রীলঙ্কা। দলটির দুই ব্যাটার জোড়া সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছেন দুই ইনিংসেই। শ্রীলঙ্কার অধিনায়ক ধনাঞ্জয়া ডি সিলভা ও কামিন্দু মেন্ডিস সিলেট টেস্টে দুই ইনিংসেই সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছেন। এমন রেকর্ড ক্রিকেট ইতিহাসে আর মাত্র দুই বার হয়েছে। এর আগে ১৯৭৪ সালে প্রথম চ্যাপেল ব্রাদার্স (ইয়ান চ্যাপেল ও ট্রেভর চ্যাপেল) করেছিলেন নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে। এরপর দ্বিতীয়টি এসেছে ২০১৪ সালে। মিসবাহ উল হক ও আজহার আলি দুই ইনিংসেই সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছেন অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে আবু ধাবিতে। এবার ধনাঞ্জয়া ও কামিন্দুর হাত ধরে তৃতীয় রেকর্ড আসলো সিলেটে বাংলাদেশের বিপক্ষে।
এছাড়া এক টেস্টে দুই ইনিংসেই একই ব্যাটাররা জুটিতে দুই বার দেড়শ’র বেশি রান করার রেকর্ড তৃতীয়বারের মতো দেখা গিয়েছে ধনাঞ্জয়া ও কামিন্দুর কল্যাণে। ১৯৩৮ সালে ইংল্যান্ডের দুই ব্যাটার এডি পেন্টার ও পল গিব দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে এবং ২০১৫ সালে অস্ট্রেলিয়ার দুই ব্যাটার ডেভিড ওয়ার্নার ও জো বার্নস নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে এমন দেড়শ’র বেশি রানের জুটি দুই ইনিংসেই গড়েন।
এই দুজনের বীরত্বগাঁথা ব্যাটিংয়েই রান পাহাড়ের চাপায় পড়ে বাংলাদেশ দল। চা-বিরতির পর ধীরে ধীরে শক্তিশালী জুটির দিকে এগিয়ে চলা প্রভাত জয়সুরিয়া ও কামিন্দু মেন্ডিসের ৬৭ রানের জুটি ভাঙেন সেই মিরাজই। এক ওভারে প্রভাত জয়সুরিয়া (২৫) ও লাহিরু কুমারাকে (গোল্ডেন ডাক) ফিরিয়ে হ্যাটট্রিকের সম্ভাবনা জাগান। তবে সেটা হয়নি। এরপর কামিন্দু মেন্ডিস নিজের দেড়শ রানের মাইলফলক স্পর্শ করেন। শেষ পর্যন্ত ১১১তম ওভারের চতুর্থ বলে তাইজুলের বলে উড়িয়ে মারতে গিয়ে আউট হন কামিন্দু। তবে এর আগে ক্যারিয়ার সেরা ১৬৪ রানের ইনিংস খেলেন তিনি। ২৩৭ বলে অনবদ্য ইনিংসটি সাজানো ছিল ১৬ বাউন্ডারি ও ৬ ছক্কায়। কামিন্দুর বিদায়ে শেষ হয় লঙ্কানদের ইনিংস।
বাংলাদেশের হয়ে মেহেদী হাসান মিরাজ সর্বোচ্চ ৪টি উইকেট শিকার করেন। তাইজুল ইসলাম ও নাহিদ রানা ২টি করে উইকেট লাভ করেন। শরিফুল ও খালেদের শিকার ১টি করে উইকেট।
Discussion about this post