নিজস্ব প্রতিবেদক:: সিলেট টেস্ট হারের পর চট্টগ্রাম টেস্টে ঘুরে দাঁড়ালো বাংলাদেশ। সাগরিকায় সফরকারী জিম্বাবুয়েকে ইনিংস ব্যবধানের সঙ্গে ১০৬ রানে হারিয়ে তৃতীয় দিনেই ম্যাচ শেষ করেছে বাংলাদেশ দল। তাতে দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজ শেষ হয়েছে ১-১ সমতায়।
সফরকারী জিম্বাবুয়ে নিজেদের প্রথম ইনিংসে তাইজুলের স্পিন ঘূর্ণিতে বিপর্যস্ত হয়ে ২২৭ রানেই গুটিয়ে গিয়েছিলো। জবাবে ব্যাট করতে নামা বাংলাদেশ সাদমান ও মিরাজের জোড়া সেঞ্চুরিতে ৪৪৪ রান তুলেছিলো নিজেদের প্রথম ইনিংসে। বিশাল ব্যবধানে পিছিয়ে জিম্বাবুয়ে ব্যাট করতে নেমে ইনিংস ব্যবধানে হারে। মিরাজের স্পিন ঘূর্ণিতে ১১১ রানে গুটিয়ে যায়। বাংলাদেশ পায় ১০৬ রানের বিশাল জয়।
চট্টগ্রাম টেস্টে সফরকারী জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে বড় লিড নেয় টাইগাররা। ওপেনার সাদমান ইসলামের সেঞ্চুরি সঙ্গে মিরাজের সেঞ্চুরিতে বাংলাদেশ ৪৪৪ রান তুলে। তাতে ২১৭ রানের লিড পায় টাইগাররা। জবাবে খেলতে নামা জিম্বাবুয়ে মিরাজের ঘূর্ণিতে দিশেহারা হয়ে মাত্র ১১১ রানে গুটিয়ে যায়।
তৃতীয় দিন দ্বিতীয় সেশনে ব্যাট করতে নামা জিম্বাবুূয়ে কোনো সুবিধাই করতে পারেনি। বাংলাদেশের বোলিং তোপে পড়া দলটির তিন ব্যাটার পেয়েছেন দু্ই অঙ্কের দেখা। ব্যাট হাতে কিছুটা লড়াই করেছেন বেন কারান। ইনিংস সর্বোচ্চ ৪৬ রান করেছেন তিনি। ১০৩ বলের ইনিংসে হাঁকিয়েছেন পাঁচ চার। অধিনায়ক ক্রেইগ আরভিনকে নিয়ে পঞ্চম উইকেটে ৪৭ রানের জুটি গড়ে কিছুটা ভুগিয়েছেন বাংলাদেশকে। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ২৫ রান করেছেন ক্রেইগ আরভিন। দুই বাউন্ডারিতে হারিয়েছেন ৫৬ বলের ইনিংসটি। ১০ রান করেছেন ওয়েলিংটন মাসাকাদজা। এক অঙ্কের কোটা পেরুতে পারেননি অন্য কোনো ব্যাটার।
বাংলাদেশের হয়ে মিরাজ ৫টি ও তাইজুল ৩টি উইকেট লাভ করেন।
এর আগে বাংলাদেশ নিজেদের প্রথম ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে বাংলাদেশ দুই ওপেনার সাদমান ও বিজয়ের উদ্বোধনী জুটিতে তুলে নেয় ১১৮ রান। দারুণ শুরুর পর ইনিংসের ৩২তম ওভারের তৃতীয় বলে বিজয়ের বিদায়ে ভাঙে সেই জুটি। চার বাউন্ডারিতে ৮০ বলে ৩৯ রান করেন দীর্ঘ দিন পর একাদশে ফেরা এই ওপেনার। তার বিদায়ের পর দ্বিতীয় উইকেটে মুমিনুলকে নিয়ে ৭৬ রানের জুটি গড়েন সাদমান। টাইগাররা পায় লিডের সুযোগ।
ইনিংসের ৫৪তম ওভারের শেষ বলে দলীয় ১৯৪ রানের মাথায় দ্বিতীয় উইকেট হারায় স্বাগতিকরা। তিনে নামা মুমিনুল ফিরেন ব্যক্তিগত ৩৩ রানে। এক ছক্কা ও দুই চারে ৬৪ বলের ইনিংসটি সাজান তিনি। এরপরই বড় ধাক্কা খায় বাংলাদেশ। ৫৫তম ওভারের প্রথম বলে সেঞ্চুরিয়ান সাদমান ফিরেন প্যাভেলিয়নে। বেনেটের শিকারে পরিণত হওয়ার আগে ১৮১ বলে ১২০ রানের দারুণ এক ইনিংস খেলেন। সেঞ্চুরির ইনিংসটি সাজান ১৬ চার ও ১ ছক্কায়।
চতুর্থ উইকেটে অধিনায়ক শান্ত ও অভিজ্ঞ মুশফিকুর রহিম ৬৯ রানের জুটি গড়েন। দলীয় ২৫৯ রানে, ইনিংসের ৭১তম ওভারের চতুর্থ বলে তাদের জুটি ভাঙলে শেষ বিকেলে বিপদ বাড়ে টাইগারদের। তিন চার ও এক ছক্কায় ৫৪ বলে ২৩ রান করা শান্তর বিদায়ের পর আরো তিন উইকেট হারায় টাইগাররা। তার বিদায়ের পর উইকেটে আসা জাকের আলীয় ব্যক্তিগত ৫ রানেই পঞ্চম উইকেটে ফিরেন প্যাভেলিয়নে। এরপরই মুশফিক ফিরেন সাজঘরে। ৭৭তম ওভারের চতুর্থ বলে দলীয় ২৭৪ রানে মুশফিকের বিদায়ে ষষ্ট উইকেট হারায় বাংলাদেশ। ৫৯ বলে চার চার ও এক ছক্কায় ৪০ রান করেন তিনি।
মুশফিকের বিদায়ের পর নাঈম হাসানও ফিরেন দ্রুত। দলীয় ২৭৯ রানে, ইনিংসের ৮৩তম ওভারের শেষ বলে তার বিদায়ে সপ্তম উইকেট হারায় স্বাগতিকরা। ২৩ বলে ৩ রান করেন তিনি। এরপরই শুরু মিরাজের বীরত্ব। শেষ দিকের ব্যাটারদের নিয়ে লড়াই করে আদায় করে নেন সেঞ্চুরি। ১৬২ বলে ১০৪ রানের নান্দনিক এক ইনিংস খেলে শেষ ব্যাটসম্যান হিসেবে সাজঘরে ফিরেন তিনি। সেঞ্চুরির ইনিংসটি সাজান এগারো চার ও এক ছক্কায়। নাঈম হাসানের ২০ ও তানজীম সাকিবের ৪০ রানের ইনিংস অবশ্য দারুণ অবদান রেখে মিরাজের সেঞ্চুরিতে।
জিম্বাবুয়ের হয়ে ভিনসেন্ট ৫টি উইকেট লাভ করেছেন।
এর আগে তাইজুল ইসলামের ঘূর্ণি জাদুতে জিম্বাবুয়েকে চট্টগ্রাম টেস্টের প্রথম ইনিংসে ২২৭ রানে আটকে দেয় বাংলাদেশ। চট্টগ্রাম টেস্টের দ্বিতীয় দিন সকালে জিম্বাবুয়েকে অলআউট করে দিয়ে ব্যাটিংয়ে নামে বাংলাদেশ। আগের দিন নয় উইকেটে ২২৭ রান তুলে দিন শেষ করেছিলো জিম্বাবুয়ে। দুই অপরাজিত ব্যাটার সিগা ১৮ ও মুজারাবানি ২ রানে আজ আবারো ব্যাট করতে নামেন। তবে কোনো রান সংগ্রহের আগেই মুজারাবানি তাইজুলের শিকারে পরিণত হলে সফরকারী অলআউট হয়ে যায় ওই ২২৭ রানেই।
সাগরিকায় টস জিতে ব্যাট করতে নামা জিম্বাবুয়ে দুইশো পার করতে পেরেছে শেন উইলিয়ামস ও নিকি ওয়েলচের হাফ সেঞ্চুরিতে। সফরকারীদের হয়ে ইনিংস সর্বোচ্চ ৬৭ রান করেছেন শেন উইলিয়ামস। ১৬৬ বলে সাত চার ও এক ছক্কায় নিজের ইনিংসটি সাজান তিনি। নিকি ওয়েলচে করেছেন ৫৪ রান। দুই ছক্কা আর তিন চারের ইনিংসে খেলেছেন ১৩৩ বল। ২১ রান করে সংগ্রহ করেছেন দুই ওপেনার বেনেট ও কারান। ১৮ রানে অপরাজিত ছিলেন সিগা।
বাংলাদেশের হয়ে তাইজুল ছয়টি, নাঈম ২টি ও অভিষিক্ত পেসার সাকিব ১টি করে উইকেট লাভ করেন।
এসএনপিস্পোর্টসটোয়েন্টিফোরডটকম/নিপ্র/ডেস্ক/০০