নিজস্ব প্রতিবেদকঃ আফগানিস্তানের বিপক্ষে একমাত্র টেস্ট ম্যাচের আগে অধিনায়কত্ব নিয়ে জলঘোলা হয়েছিল বেশ। নিয়মিত অধিনায়ক সাকিব আল হাসান ইনজুরিতে ছিলেন। আঙ্গুলের চোটে টেস্টে খেলতে পারবেন না। সহ-অধিনায়ক হিসেবে লিটন দাসের নেতৃত্বে আসার কথা ছিল।
তবে গুঞ্জন ছিল, তিনি নাকি অধিনায়কত্ব করতে চাননি। বোর্ডকেও এই নিয়ে প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়। যদিও সব শঙ্কা কাটিয়ে শেষ পর্যন্ত লিটন দাসকেই অধিনায়ক করা হয়। যেখানে নেতৃত্ব দেওয়া নিয়ে ছিল সংশয়, ক্রিকেটের সবচেয়ে আভিজাত্যের সেই ফরম্যাটে অধিনায়কত্বের শুরুটা হয়েছে দারুণভাবেই। একেবারে প্রথম ম্যাচেই নতুন বিশ্বরেকর্ডের স্বাক্ষী লিটন।
আফগানদের বিপক্ষে ঢাকা টেস্টে ৫৪৬ রানের বিশাল জয় পেয়েছে টাইগাররা। নিজেদের ক্রিকেট ইতিহাসের সবচেয়ে বড় জয় এটি বাংলাদেশের। এছাড়া ১৪০ বছরের বিশ্ব টেস্ট ক্রিকেট ইতিহাসের তৃতীয় বড় জয়। এর চেয়ে মাত্র দুটি বড় জয়ের রেকর্ড রয়েছে।
তবে এবারই প্রথম পাঁচ দিনের টেস্ট ম্যাচের হিসেবে কোনো দল ৫০০ বা এর বেশি রানে জিতল। যা কিনা নতুন বিশ্বরেকর্ড। বাংলাদেশের দখলে এখন সেই রেকর্ড। ম্যাচ জুড়ে দুর্দান্ত পারফর্ম্যান্সে আফগানদের বিপক্ষে ২০১৯ সালে টেস্ট হারের তিক্ততারও প্রতিশোধ নিল টাইগাররা।
এই সব ইতিহাসের কথা যখন উল্লেখ হবে, তখন বাংলাদেশ অধিনায়ক হিসেবে লিটন দাসের নামও ওঠে আসবে। অধিনায়ক হিসেবে সাদা পোশাকে যাত্রার শুরুটা এক অনন্য উচ্চতায় রেখে দিলেন তিনি। দেশের ১২তম টেস্ট অধিনায়ক হিসেবে টস করতে নেমে হারলেও, ম্যাচ শেষে জয়ের হাসি হেসেছেন।
বর্তমানে বাংলাদেশের সবচেয়ে বেশি ক্রিকেট মেধা বা জ্ঞান থাকা খেলোয়াড়দের একজন ধরা হয় লিটনকে। সেই মেধার ছাপ ম্যাচেও রেখেছেন তিনি। মাঠে পেসারদের নিয়ে সঠিক পরিকল্পনা সাজিয়েছেন। ফিল্ডিং সেট আপ, বোলিংয়ে পরিবর্তন আনা সব কাজ করেছেন দারুণভাবে। বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসে যে চিত্রটা দুর্লভ, সেই টেস্টে স্লিপে ৪ থেকে ৫ জন ফিল্ডার রেখেছিলেন। আক্রমণাত্বক ফিল্ডিং সেট আপ দিয়ে প্রতিপক্ষকে ঘায়েলও করেছেন।
এছাড়া দীর্ঘ সময় ব্যাটিং করার চিন্তাও এসেছিল লিটনের মাথা থেকেই। প্রতিপক্ষে ফলো অনে পাঠিয়ে ইনিংস ব্যবধানে জেতার সুযোগ থাকা স্বত্ত্বেও, সেটি না নিয়ে লম্বা সময় ব্যাটিং করেছেন দ্বিতীয় ইনিংসে। আফগানদের ওপর বিশাল রানের বোঝা চাপিয়ে দিয়েছেন।
নিজের ব্যাটিংয়েও অধিনায়ক হিসেবে প্রথম টেস্টে ফিফটির দেখা পেয়েছেন লিটন। উইকেটরক্ষক ব্যাটার ম্যাচের দ্বিতীয় ইনিংসে ৮১ বলে ৮ বাউন্ডারিতে ৬৬ রান করেন। পুরো টেস্ট ক্যারিয়ারে ১৬তম ফিফটি এটি তার। সব মিলিয়ে অধিনায়ক লিটন নিজের প্রথম টেস্ট পরীক্ষায় লেটার মার্ক পেয়েই পাশ করেছেন।
ম্যাচ শেষে লিটন জানিয়েছেন, অধিনায়কত্ব কিভাবে উপভোগ করেছেন তিনি। এর জন্য দলের বোলার এবং ব্যাটারসহ পুরো দলকে কৃতিত্ব দিয়েছেন বাংলাদেশের দলনেতা।
লিটন বলেন, ‘অধিনায়কত্ব খুব উপভোগ করেছি। বোলাররা যেভাবে আমাকে সহায়তা করেছে, বিহাইন্ড দ্য উইকেটে আমি দেখব যে, বোলাররা বল ক্যারি করাচ্ছে, স্লিপের দিকে বল যাচ্ছে। কিপিং করতেও মজা। এবং আমি যখন অধিনায়ক থাকি তখন ভালো লাগে যে জিনিসটা, যেকোনো সময় উইকেট পড়ার সুযোগ থাকে।’
উইকেটরক্ষক ব্যাটার আরও বলেন, ‘যখন প্রথম ইনিংসে শান্ত ও জয়ের ভিত্তিতে আমরা ভালো স্কোর করলাম, তখন থেকে আমরা বিশ্বাস করছিলাম যে প্রথম ইনিংসের উপর অনেক কিছু নির্ভর করছে। তাদেরকে আমরা দেড়শ’র আগে অলআউট করেছি। তো ব্যবধানটা তখনই দেখা গেছে যে, আমরা কোন পথে যেতে পারি। কিন্তু, তখনও কঠিন উইকেট ছিল। দ্বিতীয় ইনিংসেও আমাদের ব্যাটাররা যেভাবে চরিত্র উপস্থাপন করেছে, এটির সম্পূর্ণ কৃতিত্ব আমাদের ব্যাটার ও বোলার, পুরো দলের।’
এর আগে সবশেষ ২০২২ সালের ডিসেম্বরে তামিম ইকবালের ইনজুরির কারণে ওয়ানডেতে অধিনায়কত্ব করেছেন লিটন দাস। শক্তিশালী ভারতের বিপক্ষে সেই সিরিজে ২-১ ব্যবধানে জিতেছিল বাংলাদেশ। এছাড়া টি-টোয়েন্টিতেও অধিনায়কত্ব করার অভিজ্ঞতা আছে এই তারকার।
এসএনপিস্পোর্টসটোয়েন্টিফোরডটকম/নিপ্র/সা
Discussion about this post