নিজস্ব প্রতিবেদকঃ এই ম্যাচ সিলেট স্ট্রাইকার্সের পক্ষে তো, এই ফরচুন বরিশালের পক্ষে। শেষ ওভারে যখন জয়ের প্রয়োজন ১৫ রান, তখন প্রথমে ওয়াইড দেন, এরপরের দুই বলে ইফতেখার আহমেদের উইকেট শিকার করেন রাজা। আরেকটি রান আউটের শিকার হন মেহেদী হাসান মিরাজ। পরের দুই বলে একটিতে এক রান ও অপরটি ডট। হারের মঞ্চ তৈরি হয়ে যায় বরিশালের জন্য।
তবে সেখান থেকে মাঠে আসা ওয়াসিম জুনিয়র পঞ্চম বলে ছক্কা হাঁকিয়ে চমকে দেন। পুনরায় লড়াইয়ে ফিরিয়ে আনেন দলকে। এরপর ফরচুন বরিশালের প্রয়োজন এক বলে ৭ রান। রাজার করা সেই বলে ওয়াসিম জুনিয়র চার মারলেও লাভ হয়নি। ২ রানের রুদ্ধশ্বাস এক জয় পায় সিলেট।
মিরপুরের হোম অব ক্রিকেটে সাকিব আল হাসানের দলকে হারিয়ে জয়ে ফিরলো মাশরাফী মোর্ত্তাজার দল। রোমাঞ্চকর সেই জয়ে পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষস্থান ধরে রাখলো নবাগত ফ্র্যাঞ্চাইজিটি। ৭ ম্যাচে ছয় জয় ও এক হারে ১২ পয়েন্ট নিয়ে সিলেট সবার উপরে। আর সমান ম্যাচে পাঁচ জয় ও দুই হারে ১০ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের দুই নম্বরে অবস্থান বরিশালের। এই ম্যাচ জিতলে, শীর্ষে উঠার সুযোগ ছিল বরিশালের সামনে। তবে ক্ষণে ক্ষণে রঙ বদলানোই বলে দিচ্ছে এই ম্যাচ কেন হাইভোল্টেজ, আর কতটা উপভোগ্য ছিল।
সিলেটের দেওয়া ১৭৪ রানের বড় লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে শুরু থেকে নিজেদের আক্রমণাত্বক রূপ দেখায় বরিশাল। দলকে উড়ন্ত শুরু এনে দেন ওপেনার সাইফ হাসান। পঞ্চম ওভারের পঞ্চম বলে তিনি যখন আউট হন, তখন তার নামের পাশে ১৯ বলে ৪ ছক্কার মারে ৩১ রান। টপ অর্ডারে নামা এনামুল হক বিজয় ৮ বল খেলে ৩ রানের বেশি করতে পারেনি। ৪ রানের ব্যবধানে দুই উইকেট হারিয়ে কিছুটা বিপাকে পড়ে বরিশাল।
তবে সেখান থেকে ওপেনার ইব্রাহিম জাদরান ও অধিনায়ক সাকিব আল হাসানের ৬১ রানের ঝড়ো জুটি বরিশালকে ম্যাচ ফেরায়। তবে ১৪তম ওভারে বল করতে এসে প্রথমে ইব্রাহিম ও পরে সাকিবকে বোল্ডআউট করে ফের সিলেটের হাতে ম্যাচ তুলে দেন রাজা। প্যাভিলিয়নে ফেরার আগে ইব্রাহিম ৩৭ বলে ৪ বাউন্ডারি ও ২ ছক্কায় ৪২ এবং সাকিব ১৮ বলে ৩ চার ও ১ ছক্কায় ২৯ রান করেন।
শেষ দিকে করিম জানাত, ইফতেখাররা আশা দেখালেও কাজ হয়নি। মোহাম্মদ আমিরের শিকারে করিম ও মাহমুদউল্লাহ ফিরলে সিলেট নিয়ন্ত্রণ নেয় আবারও। ১২ বলে ৩ ছক্কায় ২১ রান করেন করিম। এর মধ্যে মাশরাফীকেই ১৬তম ওভারে পরপর তিন বলে ছক্কা হাঁকান। ইফতেখার ইনিংসের শেষ ওভারে আউট হওয়ার আগে ১৩ বলে ১টি করে চার-ছয়ে করেন ১৭ রান। এক ছক্কা হাঁকিয়ে মাহমুদউল্লাহ আউট হন ৭ রান করে। ৪ বলে ১টি করে চার-ছয়ে ১০ রান করে অপরাজিত থাকেন ওয়াসিম জুনিয়র।
সিলেটের হয়ে ৪ ওভারে ৪১ রান খরচ করলেও তিনটি গুরুত্বপুর্ণ উইকেট শিকার করেন। যা ম্যাচের চিত্র পাল্টে দিতে সহায়তা করে। আমির ৪ ওভারে ২৪ রান খরচায় ২ উইকেট নেন। ২ উইকেট নিলেও ৪ ওভারে ৪০ রান খরচ করেন অভিষেক ম্যাচ খেলতে নামা তানজিম হাসান সাকিব।
এর আগে টস হেরে ব্যাট করতে নেমে নির্ধারিত ২০ ওভারে ৫ উইকেট হারিয়ে ১৭৩ রানের পুঁজি পায় সিলেট স্ট্রাইকার্স। শুরুতেই বিপর্যয়ে পড়ে স্ট্রাইকার্সরা। বরিশালের পাকিস্তানি বোলার মোহাম্মদ ওয়াসিমের গতিতে মাত্র ১৫ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে বসে সিলেট। ওপেনিংয়ে নামা জাকির হাসান রানের খাতাই খুলতে পারেননি। চোট কাটিয়ে একাদশে ফেরা তৌহিদ হৃদয় মাত্র ৪ রান করে ফিরেন। অভিজ্ঞ মুশফিকুর রহিম মারেন গোল্ডেন ডাক।
এরপর থেকেই শুরু সিলেটের ঘুরে দাঁড়ানোর গল্প। টম মুরসকে সঙ্গে নিয়ে ওপেনার শান্তর ইনিংস মেরামত শুরু, শেষে ঝড় তুলে ফরচুন বরিশালকে পাল্টা চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিলেন। মিরপুরে ৬৬ বলে সর্বোচ্চ ৮৯ রান করেন শান্ত। সেঞ্চুরির সুযোগ থাকলেও শেষ ওভারে সেই সুযোগ কাজে লাগাতে পারেন নি এই বাঁহাতি ব্যাটার।
১১টি চার ও ১টি ছয়ের মারে শান্তর ইনিংসটি সাজানো ছিলো। ফিফটি করেছেন ৪৮ বলে। এরপর ১৮ বলে নেন বাকি ৩৯ রান। আসরে শান্তর এটি দ্বিতীয় ফিফটি। এর বাইরে ৩০ বলে ৪০ রান করেন অভিষেক ম্যাচ খেলতে নামা মুরস। ইংলিশ এই ব্যাটার ১ ছক্কা ও ৪ বাউন্ডারিতে তার এই ইনিংস সাজান। থিসারা পেরেরা শেষদিকে নেমে করেন ১৬ বলে ২১ রান। লঙ্কান এই অলরাউন্ডারের ইনিংসে ছিল ৪টি বাউন্ডারির মার। এই তিন জনের উপর ভর করেই বড় পুঁজি পায় সিলেট।
বরিশালের হয়ে ৪ ওভারে ৩৪ রান দিয়ে ওয়াসিম নিয়েছেন ৩ উইকেট। সাকিব ২ ওভারে ১১ রান খরচায় ১টি উইকেট লাভ করেন। কামরুল ইসলাম রাব্বিও শিকার করেন ১ উইকেট।
এসএনপিস্পোর্টসটোয়েন্টিফোরডটকম/নিপ্র/সা
Discussion about this post